শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হেনরি কিসিঞ্জার

শুধু বাংলাদেশেই ব্যর্থ যিনি

হেনরি কিসিঞ্জার বিদায় নিলেন পৃথিবীতে নিজের জীবনের শতবর্ষ কাটিয়ে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন এ বিতর্কিত করিৎকর্মা কূটনীতিক এবং রাজনীতিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি স্নায়ুযুদ্ধের সেই আলোচিত দিনগুলোতে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা জগতের সবচেয়ে বড় যোদ্ধা। হেনরি কিসিঞ্জার তার মেধা দিয়ে চীনকে নিজেদের পক্ষে আনার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসানে তার ভূমিকা প্রাতঃস্মরণীয়। জেতা যাবে না এমন এক যুদ্ধ থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে কিসিঞ্জারের নীলনকশায়। তাইওয়ানের বদলে চীনকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করা হয় তার প্রেসিক্রিপসন অনুসারে। ১৯২৩ সালে জার্মানিতে তার জন্ম হলেও ১৯৩৮ সালে তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসে। ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পান এবং তিন বছরের জন্য দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন রাজনীতিতে বিপুল ক্ষমতা লাভ করেন। রাষ্ট্রপতি না হয়েও হোয়াইট হাউসে ছিল কিসিঞ্জারের বলিষ্ঠ প্রভাব। তিনি এবং ভিয়েতনামের লে ডুক থো গোপন আলোচনার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ভাগ করে নিয়েছিলেন; যা ১৯৭৩ সালের প্যারিস চুক্তি এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সামরিক অভিযানের অবসান ঘটায়। ১৯৭৩ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর তার বিখ্যাত ‘শাটল কূটনীতি’ ইসরায়েল এবং তার আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছিল। কিসিঞ্জার কূটনীতিক হিসেবে বিশ্ব রাজনীতিতে যে অবদান রেখেছেন তার কোনো তুলনা নেই। সাফল্যের বরপুত্র এই ইহুদি কূটনীতিকের বড় মাপের ব্যর্থতার গ্লানি ছিল কেবল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার এই অভিভাবক ইয়াহিয়া-টিক্কা-গোলাম আযমদের পরাজয়ের লজ্জা লুকাতে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে জীবদ্দশায় দেখতে হয়েছে বাংলাদেশ নয়, তার সাধের পাকিস্তানের ক্ষেত্রেই সে অভিধাটি প্রযোজ্য।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর