উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে পশ্চিমা দেশে অর্থ পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে উঠেছে। স্বদেশে বাঁকা পথে অর্থ উপার্জন করে সে অর্থ অন্য দেশে পাচারের ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতি বিপাকে পড়ছে। আর এ অর্থ পাচারে ওভার ইনভয়েসিংয়ের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বিশেষ করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিংয়ের কারণে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হচ্ছে। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে সে পণ্য ভোক্তাদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের সুযোগ ঘটে। দ্বিতীয়ত, অর্থ পাচার করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা সম্ভব হয়। বিদেশে লাগামহীনভাবে অর্থ পাচারের ফলে ডলার সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের মতে, আমদানি সরাসরি কোথা থেকে হয়, দাম কী, সবই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো করে জানে। সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে রেমিট্যান্স সংগ্রহে বিদেশে কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস খোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। সেগুলো কত সংগ্রহ করছে আর কত দেশে পাঠাচ্ছে, তার ওপর এখন কোনো সুপারভিশন নেই। তাই রিজার্ভ যতদূর নেমেছে সেখানেই ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। রিজার্ভ কমে গেলে সবার মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। আসল সমস্যা ব্যাংকিং খাতে। এখানে কোনো নিয়মনীতি নেই। আগে যখন অনিয়ম হতো তখন পরিচালকদের ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো। এখন শেয়ারহোল্ডার ও স্বতন্ত্র পরিচালকরা মিলে অনিয়ম করছেন। ব্যাংকগুলো তারপরও টিকে আছে। কারণ মানুষের টাকা রাখার আর কোনো জায়গা নেই। অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা আশা করব, অর্থনৈতিক সংকটের গ্রন্থিমোচনে বিদ্যমান সংকটের কারণগুলো চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার সক্রিয় হবে।