বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসলামে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় সালামের মাধ্যমে

আবদুর রশিদ

ইসলামে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় সালামের মাধ্যমে

ইসলামে পারস্পরিক শুভেচ্ছা দানের পদ্ধতি হলো সালাম। সালামের মাধ্যমে নিছক শুভেচ্ছা নয় এক মুসলিম অপর মুসলিমের কল্যাণ কামনা করে।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ইমান গ্রহণ করবে। আর তোমরা ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দিব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? (অবশ্যই বলব, তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩১)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে চলাচলকারীকে এবং পদব্রজে চলাচলকারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যককে সালাম করবে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩২)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন : কম বয়সী বয়োজ্যেষ্ঠকে, পথ অতিক্রমকারী উপবিষ্টকে এবং কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যককে সালাম প্রদান করবে। (বুখারি, মিশকাত হা/৪৬৩৩)

হজরত আনাস (রা.) বলেন, একদা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় বালকের কাছ দিয়ে গমন করলেন এবং তাদের সালাম করলেন। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৪)

হজরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তোমরা রাস্তার ওপর বসা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখ। তারা (সাহাবিগণ) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের তো রাস্তার ওপর বসা ব্যতীত গত্যন্তর নেই। কারণ তথায় বসে আমরা প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তিনি বললেন, যদি তোমরা তথায় বসতে একান্ত বাধ্যই হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, চক্ষু নিয়ন্ত্রণে রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জওয়াব দেওয়া, ভালো কাজের আদেশ করা এবং খারাপ হতে নিষেধ করা। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৪০)

হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় যে প্রথমে সালাম করে। (আহমাদ, তিরমিযি, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৪৬৪৬)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যখন তোমাদের কারও কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, তখন সে যেন তাকে সালাম করে। অতঃপর যদি তাদের উভয়ের মধ্যখানে কোনো বৃক্ষ, প্রাচীর কিংবা পাথরের আড়াল পড়ে যায়, পরে পুনরায় যখন সাক্ষাৎ হয় তখনো যেন আবার সালাম করে। (আবু দাউদ, মিশকাত হা/৪৬৫০)

হজরত আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের কেউ যখন তার কোনো ভাইয়ের সঙ্গে কিংবা কোনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন কি তার জন্য মাথা নত করবে? তিনি বললেন, না। সে আবার জিজ্ঞেস করল, তাকে কি আলিঙ্গন করবে এবং চুম্বন করবে? তিনি বললেন, না। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, সে কি তার হাত ধরে তার সঙ্গে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিযি, মিশকাত হা/৪৬৮০)

বারা ইবনে আয়েব (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর, তাহলে নিরাপদ থাকবে। (তারগিব হা/২৬৯৬)

হজরত আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, হে মানুষ! তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর এবং (দুস্থ-গরিবকে) খাদ্য প্রদান কর। আর মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তারগিব হা/২৬৯৭)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা রহমানের ইবাদত কর এবং পরস্পরে সালামের প্রচলন কর। আর খাদ্য প্রদান কর, তাহলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তারগিব হা/২৬৯৮)। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর, তাহলে তোমরা সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। (আত-তারগিব হা/২৭০১)। হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহর কাছে মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে ব্যক্তি আগেই সালাম প্রদান করে। (আত-তারগিব হা/২৭০৩)। হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জিজ্ঞাসা বা কথোপকথনের আগে সালাম হতে হবে। অতএব, যে ব্যক্তি সালামের আগেই জিজ্ঞাসা বা কথোপকথন শুরু করবে তোমরা তার কথার উত্তর দিও না। (সিলসিলা সহিহাহ)

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর