পৃথিবীর বুকে ঠিক কত রকমের মানুষ আছে, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, গবেষণা, যুক্তি, মতবাদ প্রভৃতির কমতি নেই। তবে সেনাবাহিনীতে নেতা ও নেতৃত্ব নিয়ে পড়ার সময় জেনেছি, সাধারণভাবে সমাজের মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। এক ভাগ নেতা (লিডার), যারা নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করেন, আর অন্য ভাগ হলো অনুসারী, যারা অন্যকে অনুসরণ করেন। নেতৃত্ব নিয়ে পাঠের অধ্যায়ে উদাহরণ হিসেবে একটি দুর্ঘটনা-পরবর্তী দৃশ্য বর্ণনা করা হয়। ব্যস্ত সড়কে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় যাত্রীরা হতাহত হলে অনেকের ভিড় জমে। এদের কেউ আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন, পুলিশ ও হাসপাতালে ফোন করেন, আগুন দেখলে পানির সন্ধান করেন এবং অন্যভাবে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখেন, মোবাইল ফোনে দৃশ্যধারণ করেন, নানা ধরনের কথা বলে কিংবা সমালোচনা করেন। এমন দুই দল মানুষের মধ্যে প্রথম দলটি নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ- তাই তাদের পরিচিতি সমাজপতি বা নেতা রূপে।
পরিবার থেকে শুরু করে শহর, বন্দর, গ্রাম, রাষ্ট্র, যে কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতার বিকল্প নেই। নেতা তিনি-ই হতে পারেন, যিনি মাথা উঁচু করে বলতে পারেন ‘ফলো মি’ অর্থাৎ আমাকে অনুসরণ কর। একজন সৎ ও আদর্শবান নেতাই কেবল বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন ফলো মি। নেতা, নেতৃত্ব ও নেতৃত্বশূন্যতা নিয়ে সেনাবাহিনীতে এসব যাদের কাছে শিখেছি, তারাই আজ রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত জেনারেল, ইতিহাস এক দিন যাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করবে। যোগ্য নেতা ও তার অনুসারীদের মেলবন্ধনে সমাজ কীভাবে আলোকিত হয়, তার বর্ণনা ফুটে উঠেছে ১৮৬২ সালে আমেরিকায় জন্ম নেওয়া পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস রচয়িতা এডিথ ওয়ারটনের লেখা ‘ওয়ার অ্যান্ড ট্রাভেল’ উপন্যাসের মলাটে উদ্ধৃত একটি বাক্যে। বাক্যটির অর্থ হলো, আলো ছড়ানোর দুটি পথ খোলা আছে। নিজে মোমবাতি হয়ে প্রজ্বলিত হওয়া অথবা আয়না হয়ে মোমবাতির আলো ধারণ ও বিতরণ করা। নেতা ও নেতৃত্ব নিয়ে অতীতে পড়া এ কথাগুলো মনে পড়ল সাম্প্রতিক সময়ে কিছু রাজনৈতিক নেতার কর্মকাণ্ড দেখে। দীর্ঘদিন অনুসারীদের একটি আদর্শ উদ্বুদ্ধ করে ও তাদের নেতৃত্ব দিয়ে এখন হঠাৎ করে অন্য আদর্শে দীক্ষিত হওয়াটা তার অনুসারীর জন্যই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ নেতাদের কথা ও আদর্শ অনুসরণ করতে গিয়ে অনুসারীদের অনেকেই পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও প্রশাসনিক নানা চাপ ও প্রতিকূলতা হাসিমুখে বরণ করেছেন। বিদেশে বহু প্রবাসী বাংলাদেশির সাক্ষাৎ পেয়েছি, যারা একেক সময় একেক নেতার আদর্শ অনুসরণ করতে গিয়ে পরবর্তীতে প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত হয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বা শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাম আদর্শের নেতাদের মাধ্যমে বহুভাবে সাধারণ মানুষকে বাম ঘরানার দলগুলোতে যুক্ত করা হয় এবং বিপক্ষদের বুর্জুয়া তকমা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামানো হয়। পরবর্তীতে সেই শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টারা হয়তোবা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ডান কিংবা উগ্র ধর্মীয় আদর্শে কিংবা মুক্তবাজার অর্থনীতির বাস্তবতায় আগের আদর্শ থেকে সরে যান। কিন্তু তার অনুসারীদের অনেককেই ততদিনে হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশ ছাড়তে হয়। অনেকে বাম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ডারউইনের তত্ত্বে বিশ্বাস এনেছেন, যা বানর থেকে মানুষ সৃষ্টির কথা বলে এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করে। ডারউইনের তত্ত্ব যারা এ দেশের সাধারণ মানুষকে শিখিয়েছেন এবং একসময় পাঠ্যপুস্তকে ঢোকানোর চেষ্টা করেছেন তারাই পরবর্তীতে এহরামের কাপড় পরে প্লেনে বসা ছবি তুলে গণমাধ্যমে প্রচার করেন। শ্রেণিহীন সমাজের উদ্যোক্তারা মন্ত্রী হয়ে পুঁজিপতিদের বেসরকারি বিমান সংস্থা, পাঁচ তারকা হোটেল ও রিসোর্ট, বেসরকারি টেলিভিশন, বেতার প্রভৃতি করার অনুমতি দেন। সারা বছর মেহনতি মানুষের প্রতীক হাতুড়ি, কাস্তে ও মশাল নিয়ে হাঁটলেও নির্বাচনে এই দলীয় প্রতীক তাদের ভালো লাগে না, ভালো লাগে সেই প্রতীক, যা তাদের ক্ষমতায় নিয়ে যাবে। আমেরিকায় চাঁদ উঠলে বাংলাদেশে ঈদ হবে- এমনটা ভেবে যারা পটকা ফুটিয়েছেন, আজ তারা হয় জেলে, না হয় গৃহত্যাগী। কে নেবে এই দায়? পাকিস্তান মডেল বাংলাদেশে চলবে কি না, তা ভাবতে হবে। কারণ ইমরান খান আর শেখ হাসিনা এক নন। ইমরান খানের পাকিস্তানের পাশে চীন, রাশিয়া বা ভারত তেমনটা নেই যেমনটা শেখ হাসিনার শাসনাধীন বাংলাদেশের পাশে দেশ তিনটি আছে। আওয়ামী লীগের যারা বিরোধিতা করেন, সেসব বিরোধী নেতা ও নেতৃত্ব কি এমনটা হিসাব করেছিলেন? ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে এখন আমেরিকা বলছে ইউক্রেনকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ফান্ড তাদের নেই। নেতা ও নেতৃত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে যারা গবেষণা করবেন, তাদের জন্য কেস স্টাডি হতে পারেন দেশের এবং বিশ্বের বর্তমান রাজনৈতিক দল ও এই দলের নেতারা।
সরকারবিরোধী দল বলতে বাংলাদেশে মূলত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকেই বোঝায়, যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু এই দলের অনুসারীদের নেতৃত্ব দেওয়ার কাঠামোটি কেমন ছিল, তা বোঝা যায় দলটির ওয়েবসাইট দেখলে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলো ন্যাশনাল স্ট্যান্ডিং কমিটি। ওয়েবসাইটে এই কমিটির সবার ওপর বন্দি বেগম খালেদা জিয়া ও দেশান্তরী তারেক জিয়ার ছবি। দ্বিতীয় সারিতে অসুস্থ খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পর তিনজন প্রয়াত নেতার নাম ও ছবি, যারা হলেন মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন ও তরিকুল ইসলাম। তৃতীয় সারিতে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া জেনারেল মাহবুবুর রহমানের পেছনেও আছেন তিন প্রয়াত নেতা হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নাম ও ছবি। যারা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের স্থলাভিষিক্ত করার জটিলতা বা অক্ষমতা কিংবা অনিচ্ছা নিয়ে একটি দলের কতদূর এগোনো সম্ভব? জীবিত বাকি নয়জনের মধ্যে একজন দেশান্তরী ও আটজনের অধিকাংশই নানাভাবে অসুস্থ। ৮২ জনের উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মৃত। বাকিদের মাঠের লড়াই, টকশো, কিংবা বক্তৃতা-বিবৃতি, সেমিনার বা কোনো লেখালেখিতে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষণীয়, দলটিতে অফিসার (কর্মকর্তা) আছেন ২০৯ জন। ওয়েবসাইটে কার্যনির্বাহী কমিটির তালিকায় অফিসাররূপী ২০৯ জনের মধ্যে সবার ওপরে আছেন বেগম জিয়া, দ্বিতীয়তে তারেক জিয়া, তৃতীয়তে মরহুম বিচারপতি টি এইচ খান এবং চতুর্থতে বহু আগে পদত্যাগকারী মোর্শেদ খান। বাকি ২০৫ জনের মধ্যেও রয়েছেন মৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও পদত্যাগকারীদের সমারোহ। একই চিত্র জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ২০৯ সদস্যের নামের ক্ষেত্রে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কারও নাম ওয়েবসাইটে নেই। যথাসময়ে নেতৃত্বে শূন্যতা পূরণে ব্যর্থতা যে কোনো দলকে বেকায়দায় ফেলে। জেলে থেকে বা বিদেশে নির্বাসিত থেকে দলে প্রভাব বিস্তার করতে হলে যে মাপের নেতা প্রয়োজন, তার ঘাটতি বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলেছে, এমনটাই ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক।এ প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে (৫ ও ৬ জুলাই) ভারতের শিলিগুড়িতে আওয়ামী লীগ নেতাদের এক সম্মেলনের ওপর ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার এ কে মিত্রের একটি প্রতিবেদন স্মরণ করা যেতে পারে। এ প্রতিবেদন মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে সৌরজগতের সঙ্গে তুলনা করাই সর্বোত্তম, যেখানে মুজিব হলেন সূর্য তুল্য, যার চারপাশের স্যাটেলাইট (নক্ষত্র) হয়ে আছেন গুরুত্বের ক্রমানুসারে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), প্রধানমন্ত্রী (তাজউদ্দীন আহমদ), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (কামারুজ্জামান), পররাষ্ট্রমন্ত্রী (খন্দকার মোশতাক), অর্থমন্ত্রী (সৈয়দ মনসুর আলী) এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী/সর্বাধিনায়ক (জেনারেল ওসমানী)। সূত্র : ১৯৭১ : দ্য শিলিগুড়ি কনফারেন্স, পৃষ্ঠা ৭৯। ইরানের নির্বাসিত নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সের নিভৃত গ্রামে বসে ক্যাসেটে রেকর্ড করে বাণী দিতেন। সেই ক্যাসেট গোপনে ইরানে চলে যেত। ইরানের সেই বিপ্লবকালে একপর্যায়ে প্রায় ৯০ হাজার মসজিদ থেকে সেই ক্যাসেট কপি করে বিতরণ করা হতো, যা আগুন জ্বালাত বিপ্লবীদের চেতনায়। দেশ ত্যাগের আগে খোমেনি একজন ইমাম হিসেবে যে আদর্শের উদাহরণ দেখিয়েছিলেন, তাঁর প্রতি আস্থা ছিল ইরানবাসীর। আর এতেই সফল হয় ক্যাসেট বিপ্লব। (সূত্র : হাউ ক্যাসেট চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড, ইউনিট স্টুডিওস ডট অর্গ, ইন্টারনেট)।
ভিয়েতনামকে বিদেশি দখল থেকে মুক্ত করতে সারা জীবন লড়াই করেছেন বিপ্লবী হো চি মিন। এই লড়াইকালে দশকের পর দশক ধরে গোপনে দেশের ভিতরে, ভিয়েতনাম চায়না সীমান্তের জঙ্গলে কিংবা অন্য দেশে তিনি আত্মগোপনে থেকেছেন। তবে সশরীরে সামনে না থাকলেও হো চি মিনের দেওয়া দিকনির্দেশনা গুলি ‘উইল’ নামে পরিচিতি পেত, যা প্রতিপালনে মরিয়া হয়ে উঠত তার অনুসারীরা। একদিকে ব্যক্তিগত আদর্শ ও দেশপ্রেম অন্যদিকে ভিয়েতনামের মানুষের নাজুক অবস্থা একজন হো চি মিনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ছয় বছর আগে ২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন হো চি মিন। মৃত্যুর আগে তিনি প্রথমে ৮০০ ও পরে সংশোধন করে ১০০০ শব্দে একটি দিকনির্দেশনা লিখে যান, যা ‘হো চি মিনস টেস্টামেন্ট’ বা হো চি মিনের দৈববাণী রূপে বিপ্লবীদের মাঝে ছড়িয়ে যায়। হাজার শব্দের এই উইল বা হো চি মিনের শেষ ইচ্ছার মূল কথা ছিল ‘দেশ স্বাধীনের জন্য বিদেশি দখলদারদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ কর অথবা সংগ্রাম করতে করতে মৃত্যুবরণ কর’। কোনো আরাম-আয়েশের বাসস্থান নয়, জঙ্গলে বসে লেখা হো চি মিনের এমন বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যুর পরও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে কার্পণ্য করেনি অনুসারীরা। ফলে আমেরিকার মতো পরাশক্তিও নাকানি-চুবানি খেয়ে পালিয়ে যায় ভিয়েতনামের মাটি ছেড়ে।
হাজার শব্দের ওই দিকনির্দেশনার একটি অংশে হো চি মিন লিখেন ‘দলের ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখা ও ক্রমাগত এ বন্ধন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করার সর্বোত্তম পন্থা হলো দলের সাংগঠনিক কাঠামোর ভিতর থেকে (প্রথমে নিজ) দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, নিয়মিত ও গুরুত্বসহকারে আত্মসমালোচনা ও (দলের) সমালোচনা করা।’ এমন নীতির কঠোর অনুসরণের কারণেই ‘ওয়ার্কার্স পার্টি অব ভিয়েতনাম’-এর পক্ষে দল হিসেবে সফলতা অর্জন এবং তাদের নেতৃত্বে আমেরিকার পরাক্রমশালী ও অত্যাধুনিক সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছিল। আমরা কি আজ এমন আদর্শের ধারেকাছে আছি? কোটি টাকা ব্যয় করে আয়োজন করা দলীয় কাউন্সিলে আমরা কেবল ব্যক্তি বন্দনা শুনি এবং শেষ দিনে একজনকে সব কমিটি গঠন ও সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করি। সম্প্রতি এক জেনারেলের হাতেগড়া দলের জাতীয় পর্যায়ের সভায় ৫৯ জন জেলা প্রতিনিধির মধ্যে ৫৭ জন নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত ও যুক্তি দিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেন দলের বড় মিয়াকে। কয়েকদিনের মধ্যেই বড় মিয়া নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং দলের বড় বিবি ও তার অনুসারীদের কাঁধে লাঙ্গল না দিয়ে হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন। দেশ-বিদেশের উচ্চ পদের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ও দেশের বেসামরিক প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একসময়ের প্রধান ব্যক্তি (জেনারেল) ভুয়া এক আমেরিকানকে দিয়ে কমেডি করিয়ে এখন জেলে। আরেক নেতা (জেনারেল) মিডিয়ার সামনে কান ধরে ও জিহ্বায় কামড় দিয়ে লোক হাসাচ্ছেন। ৪৫ বছর পর বড় খেতাবপ্রাপ্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা (মেজর) নিজ দল ত্যাগ করেন এবং অন্য দলে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন অপরাপর কিছু দলকে দুই-তিন কোটিতে কেনা ‘ফকিন্নি পার্টি’ খেতাব দিচ্ছেন। অথচ (তার ভাষায়) এই ফকিন্নি পার্টিতে আমরা দেখতে পাই এককালের ডাকসাইটে বিচারপতি, সচিব, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ও সাবেক সংসদ সদস্যদের সমারোহ। তবে বাস্তবতা হলো আসন্ন নির্বাচনের পর জামানত হারানোর তালিকা দেখেই জানা যাবে দেশে প্রকৃত নেতা ও রাজনৈতিক ফকিন্নির সঠিক সংখ্যা। সব শেষে লালন সাঁইজিকে স্মরণ করছি : ‘পণ্ডিত কানা অহংকারে, মাদবর কানা চোগলখোরে... এক কানা কয় আরেক কানারে, চলো এবার ভবপারে, নিজে কানা, পথ চেনেনা, পরকে ডাকে বারবার... এসব দেখি কানার হাটবাজার।’
লেখক : গবেষক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
Email: [email protected]