শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপন্ন কীর্তনখোলা

দখল ও দূষণ থামাতে হবে

বরিশালকে বলা হতো বাংলার ভেনিস। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে এমন অভিধায় অভিষিক্ত হতো নদ-নদী, খাল-বিলের বরিশাল। তারপর আমরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনের জাঁতাকল ভেঙে স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ মিঠাপানির উৎস নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় বিনাশে অবতীর্ণ হয়েছি কাণ্ডজ্ঞানের মাথা খেয়ে। যে বরিশাল শহরকে তুলনা করা হতো ভেনিসের সঙ্গে এখন সে অভিধা বিদ্রুপের মতোই শোনায়। বরিশালের খালগুলো দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারানোর পথে। যে নদী ছিল বরিশালের গর্বিত পরিচয়ের অনুষঙ্গ সেই কীর্তনখোলারও দখল আর দূষণে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। খালের উৎসমুখগুলো দিয়ে অবিরাম নির্গত হচ্ছে কলকারখানা আর বাসাবাড়ির বর্জ্য। অন্যদিকে নদীর বিভিন্ন স্থানে চলছে দখলবাজির মহোৎসব। বরিশাল নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীর দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। কালাবদর ও আড়িয়াল খাঁ নদের মোহনা থেকে শুরু হয়ে ঝালকাঠির নলছিটির সুগন্ধা নদীতে পতিত হয়েছে কীর্তনখোলা নদী। নগরীর রূপাতলী থেকে কালীবাবুর খেয়াঘাট পর্যন্ত ১০টি স্থানে অনবরত দূষণ হচ্ছে কীর্তনখোলা। নগরীর মধ্যে থাকা শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়া খাল হয়ে সরাসরি নামছে নদীতে। এ ছাড়া বাসাবাড়ির বর্জ্য এমনকি মানব বর্জ্য ড্রেন-খাল হয়ে মিশছে নদীতে। নগরীর রূপাতলী থেকে কালীবাবুর খেয়াঘাট পর্যন্ত ধান গবেষণা রোড খাল, সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল, ভাটার খাল, জেলখালসহ অন্যান্য খালগুলোর উৎসমুখ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য, পলিথিন, মানববর্জ্য ও কলকারখানার বর্জ্য কীর্তনখোলা নদীতে পড়ছে। কর্তৃপক্ষীয় হিসেবে কীর্তনখোলার পাড় দখল করে আছে ৪ হাজার দখলবাজ। নদী গ্রাসের অপখেলায় যারা জড়িত তাদের নিরস্ত করার কোনো কর্তৃপক্ষ দেশে আছে বলে মনে হয় না। অভিযোগ রয়েছে, নদী সুরক্ষার দেখভালের দায়িত্ব যাদের তারা বিক্রি হয়ে যান দখলদারদের কাছে। এটি সত্যি না হলে দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে কর্তাব্যক্তিরা সক্রিয় হবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর