বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সুসম্পর্কের ওপর জোর দেয় ইসলাম

মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

সুসম্পর্কের ওপর জোর দেয় ইসলাম

মানুষের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক কাম্য। পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার প্রতি জোর দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। বান্দা তার স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত থাকবে এমনটি প্রত্যাশিত। যে কারণে ইসলাম এমন একটি সমাজ বিনির্মাণের তত্ত্ব তুলে ধরেছে যেখানে সবাই আল্লাহর আনুগত্যে থাকবে। যে সমাজে অন্যায়-অবিচারের স্থান হবে না। যারা অত্যাচারী, নিপীড়নকারী ইহ জগতে যেমন তাদের মানুষের অভিশাপ ভোগ করতে হবে তেমনি আখেরাতে আল্লাহর নির্ধারিত কঠিন সাজা পেতে হবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস (রা.) বলেন : রসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন আল্লাহর বান্দাদের খালি পায়ে ও বিনা খতনা অবস্থায় সমবেত করা হবে। এ সময় এত জোরে একটি আওয়াজ ধ্বনিত হবে, যা কাছের ও দূরের সবাই সমানভাবে শুনতে পারবে। ঘোষণা দেওয়া হবে : ‘আমি সূক্ষ্ম প্রতিফল প্রদানকারী রাজাধিরাজ। কোনো জান্নাতির পক্ষে সম্ভব নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করে এবং কোনো জাহান্নামির পক্ষেও সম্ভব নয় সে জাহান্নামে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মজলুমের প্রতি তাদের জুলুমের প্রতিশোধ না নেব, এমনকি তা যদি একটি চড়-থাপ্পড় অথবা তার চেয়েও ছোট কোনো বিষয় হয়। তোমার পালনকর্তা কারও ওপর (সামান্য পরিমাণও) অত্যাচার করেন না- আমরা বললাম : ইয়া রসুলুুল্লাহ! তা কীভাবে সম্ভব? আমরা সবাই তো খালি পায়ে নগ্নাবস্থায় থাকব? রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেকের কৃত পাপপুণ্যের বিনিময়ে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তোমাদের পালনকর্তা কারও প্রতি অত্যাচার (বৈষম্য) করবেন না।’-আহমদ, বুখারি, তাবারানি। হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘কেয়ামতের দিন অত্যাচারী যখন পুলসিরাতে আরোহণ করবে, অমনি যাদের ওপর সে অত্যাচার চালিয়েছিল, তারা এসে ক্ষতিপূরণ বাবদ তার নেক আমলসমূহ (ভাগ করে) নিয়ে নেবে। তার কাছে পর্যাপ্ত নেক আমল না থাকলে কৃত অত্যাচারের পরিমাণ মজলুমের পাপ তার ঘাড়ে চাপানো হবে। পরিশেষে তাকে জাহান্নামের অতল তলে ফেলে দেওয়া হবে।’- তাবারানি। একবার খলিফা হারুনুর রশীদ প্রখ্যাত কবি আতাহিয়াকে কারাবন্দি করলে কবি কারাগার থেকে দুই লাইন কবিতা লিখে খলিফার কাছে পাঠান। যার অর্থ হচ্ছে- ‘আল্লাহর শপথ! মনে রেখ, অত্যাচারের পরিণাম তো নির্মম করুণ। অত্যাচারীই সর্বক্ষণ অকল্যাণ-অমঙ্গল বিস্তারে রত। অচিরেই যখন আমরা উভয়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে একত্রিত হব, তখনই তুমি জানতে পারবে আসলে কে নিন্দিত। বাস্তবেই অত্যাচারীরাই আল্লাহর চোখে নিন্দিত। তা সে শাসক হোক, সমাজপতি হোক আর যেই হোক না কেন। এ কারণে সবারই উচিত অত্যাচারী বা জুলুমবাজ হওয়ার মন্দনসিব এড়িয়ে চলা। সমাজের অন্য মানুষের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। আল্লাহ মানুষকে ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি দেন। এ ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তিকে দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। এটিকে আল্লাহর দয়া হিসেবে ভাবতে হবে। তাঁর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। যারা এর বদলে ক্ষমতার দর্প দেখায় ও অত্যাচারী হিসেবে আবির্ভূত হয় তারা সত্যিকার অর্থে দুর্ভাগ্যের অধিকারী। আল্লাহ সবাইকে অত্যাচারী হওয়ার দুর্ভাগ্য থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর