মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবার হাতেই এক একটা অদৃশ্য দুরবিন

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

সবার হাতেই এক একটা অদৃশ্য দুরবিন

১. সবার হাতেই এখন এক একটা অদৃশ্য দুরবিন। খুব দূরের জিনিসগুলো দেখলেও, খুব কাছের জিনিসগুলো কেউ দেখতে পাচ্ছে না। দুরবিনের মতো যন্ত্রগুলোর কাছে মানুষের নিজের চোখও যেন পরাধীনতা মেনে নিয়েছে। সবুজ ঘাসের ওপর সবুজ রঙের ফড়িংগুলো আর চোখে পড়ছে না। কেউ কেউ ফড়িংগুলোকে যখন সুতোয় বেঁধে ঘুড়ির মতো ওড়াত, তখন কষ্ট হতো ফড়িংগুলোর জন্য। তারপরও মুখ বন্ধ করে থাকতাম।  মনে হতো, এটাই বুঝি একটা খেলা। কষ্টের মধ্যেও হাসতাম, কারণ চারপাশের সবাই যে তখন আনন্দে হাসছে। এখন বুঝি কষ্টটাই যৌক্তিক ছিল, কারণ ফড়িংগুলোরও কষ্ট হতো।  কারণ সুতো দিয়ে যেটা অন্যের উৎসবে মেতে ওঠার খেলা সেটা ফড়িংগুলোর জন্য এক ধরনের পরাধীনতা, এক ধরনের দাসত্ব। এখন আরেকটা বিষয় বুঝি, সবাই যেটা নিয়ে হাসছে, সেটা নিয়ে আমাকেও হাসতে হবে এর কোনো লজিক নেই। বরং সবাই যখন হাসছিল, তখন যদি তাদের বলতে পারতাম, কারও স্বাধীনতা হরণ করে আনন্দের জন্ম দেওয়া যায় না, সেটাই বোধ হয় সবচেয়ে ভালো হতো। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্যকে সত্য বলার মতো সাহস মানুষের কমছে, সত্যটাই যে এখন সত্যের মতো করে খুঁজে পাওয়া কঠিন, আবার মনস্তত্ত্বও বলছে, সত্য-মিথ্যা যেটাই হোক না কেন, মানুষ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে নিরাপদ বোধ করে।

এখন আর ঘাসের ওপর শীতের বিন্দু বিন্দু শিশির চোখে পড়ে না। যতক্ষণ সূর্য উঠত না, ততক্ষণ খুব শান্তভাবে ঘুমিয়ে থাকত শিশিরগুলো। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জ্বলজ্বল করে আলোর বাতি হয়ে জ্বলে উঠত শিশিরবিন্দুগুলো। হয়তো ওরা ভাবত, আমরাও সূর্য হয়ে গেছি, অথচ এই ভাবনাটাই তাদের নিঃশেষ করে দিত। কারণ সূর্যের আলোর সঙ্গে সূর্যের তাপও ওদের ওপর আছড়ে পড়ত। চোখের নিমিষেই হারিয়ে যেত ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে ওঠা শিশিরগুলো। মানুষও এখন শিশিরবিন্দুর মতো হয়ে গেছে, নিজের ভিতরের শক্তি দিয়ে টিকে থাকার পরিবর্তে অন্যের শক্তিতে ডুবে যাচ্ছে। হয়তো নিজের পায়ের ওপর দাঁড়ালে সে তার নিজের মতো করে দাঁড়িয়ে যেতে পারত, কিন্তু নিজের পায়ের শক্তির বদলে অন্যের পায়ের নিচে পড়ে থাকতেই মানুষ বেশি ভালোবাসছে। হয়তো সেই পৃথিবীর নায়ক হতো, নিদেনপক্ষে খুব সাধারণ একটা মানুষ হতো, মানুষ তো হতো, কিন্তু যাকে সে নায়ক বানিয়ে গর্ব করছে, সে তো আর নায়ক নয়, খলনায়ক। সবটাই হয়তো বুঝে মানুষ, তবে যখন বুঝে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। কারণ জীবন থেকে পালাবার গোপন দুয়ারগুলো যে তখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সবদিকেই যে তখন প্রাচীর আর প্রাচীর। এখন মানুষের চোখ দেখি না, চোখে ঝুলানো দুরবিন দেখি, সেই দুরবিনটাও নিজের না, পরের কাছে ধার করা। দুরবিন দিয়ে মানুষ তাই নিজের মতো দেখে না, যে দুরবিন ধার দিয়ে মানুষকে ঋণী করে নেয়, সে যেভাবে দেখায় সেভাবেই দেখে। সবটাই হয়তো কল্পনা, কারণ বাস্তবতা হচ্ছে বস্তাপচা কিছু জীবনের অদৃশ্য সংলাপ।

২. এক দিন আপনার একটা পৃথিবী ছিল। আপনার নিজের মতো করে অনেক মমতায় সেই পৃথিবী সাজিয়েছিলেন। আপনার দয়ার শরীর। কারও কষ্ট সইতে পারেন না। যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না, আপনি আপনার পৃথিবীতে তাদের ঠাঁই দিলেন। কিন্তু অদ্ভুত এই পৃথিবী, এখন আপনার পৃথিবীতে আপনি নেই, আপনার পৃথিবীটা তারাই দখল করে নিয়েছে, তাদের নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে। আপনাকে ব্যবহার করে তারা এখন আকাশের তারা হয়েছে, তারকা হয়েছে, আর আপনাকেই ভুলে গেছে। তারা এখন আপনাকে ছোট করে নিজেদের বড়ত্ব জাহির করে, সফলতার ফানুস উড়িয়ে আতশবাজির উৎসব করে আর আপনাকে ব্যর্থ মানুষের দলে ভিড়িয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে।

খুব অকৃতজ্ঞ এই পৃথিবী, রং বদলালেই চোখ বদলে যায়, পোশাক বদলালেই চরিত্র বদলে যায়, চেয়ার বদলালেই সুবিধাবাদিতা মাথার ভিতরের মগজটা বদলায়।

যাদের সে দিন পথ চিনিয়েছিলেন, তাদের কাছে আপনিই এখন অচেনা হয়ে গেলেন, এখন তারাই আপনাকে আপনার পৃথিবী থেকে বের করে দিয়ে পথের মানুষ বানিয়েছে। এখন ওরা পৃথিবীর রাজা, পৃথিবীটা তাদের রাজ্য, আর আপনি এখন পথের ভিখারি, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই আপনার।

ফেসবুকে একটা লেখা পেলাম, “দেখবেন যেখানে আপনার সবচেয়ে বেশি অবদান থাকবে। সেখানে এক দিন আপনার কোনো চিহ্নও থাকবে না!” কথাটা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ এটাই যে চরম সত্য। মানুষ নতুন নতুন নায়কদের চেনাতে গিয়ে পেছনের মহানায়কদেরই ভুলে যায়।

মানুষ বিষাক্ত এক প্রাণীর নাম। মায়া ধরিয়ে আপনার অন্তরের ভিতরে প্রবেশ করে, আবার ছোবল মেরে আপনার অন্তরকে বিষিয়ে তোলে। সাপ ছোবল দিলে সেই বিষের চিকিৎসা আছে, মানুষ ছোবল দিলে সেই বিষের চিকিৎসা নেই। সাপ না বুঝে ছোবল দেয়, মানুষ বিশ্বাস ঘাতক হয়ে ছোবল দেয়।

৩. সুখ ও দুঃখ মিলে এক দিন কথা বলছিল।

দুঃখ সুখকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেমন আছ?

সুখ বলল, খুব দুঃখে আছি।

দুঃখ প্রশ্ন করল, কেন ভাই, কেন?

সুখ বলল, মানুষের সুখের চাহিদা এতটাই বেড়ে গেছে যে, সেটা পূরণ করতে গিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটা সুখ পূরণ করলে মানুষ আরেকটা সুখ চায়, সেটা পূরণ করলে আরেকটা চায়, এভাবেই চলছে...। অনেক ক্ষেত্রে সুখ নিজের অধিকারে আনতে মানুষ ন্যায়-অন্যায়ও বুঝছে না। মানুষ খুব সহজে সুখ পেতে চায়। তাই ভালো নেই। সুখটা এখন বোঝা হয়ে গেছে, সুখের এমন অত্যাচারে ক্রমশ নিজের অস্তিত্বটা হারিয়ে ফেলছি।

সুখ এবার দুঃখকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেমন আছ?

দুঃখ বলল, অনেক সুখে আছি।

সুখ বলল, কেমন করে ভাই, বলতো একটু?

দুঃখ বলল, আমি সব সময় ওই মানুষগুলোর সঙ্গে থাকি, যাদের জীবনে টানাপোড়েন, পাওয়া-না পাওয়া, অভাব-কষ্ট, দারিদ্র্য লেগেই আছে। তারপরও ওই মানুষগুলো অল্পতেই খুব সুখে আছে। যেমন ধর, বৃষ্টিতে ঘরে পানি পড়ছে, পরিবারের সবাই সে পানি থামানোর জন্য একসঙ্গে লড়ছে আর পানি থামিয়ে পরম আনন্দে বিজয়ীর মতো হাসছে। ঘরে খুব সামান্য পরিমাণ চাল আর ডাল আছে, হয়তো সেগুলোতে সবার পেট ভরবে না, তারপরও সেগুলো খিচুড়ি বানিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে সবাই রাজার মতো খাচ্ছে, সুখের ঢেকুর টানছে। সবাই খুব মিলেমিশে আছে, সারা দিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাবা ঘরে ফিরলে, ছেলেমেয়েরা বাবাকে জড়িয়ে ধরছে, শরীরের ঘাম মুছে দিচ্ছে। মায়ের বুকে মাথা রেখে পরম সুখে ঘুমাচ্ছে। ওদের ছেলেমেয়েরা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, লুটোপুটি খাচ্ছে, ওখানেই যেন ওদের অপার আনন্দ। আমি এভাবে কষ্টের মধ্যেও ডুবে থেকে অনেক সুখে আছি। আমার মাথার ওপর কোনো বোঝা নেই, বরং প্রতিদিন নিজেকে নতুন করে চিনছি। আর ভাবছি, দুঃখের মধ্যে কতই না সুখ। অথচ বাইরে থেকে মানুষ ভাবছে, আমি দুঃখের মধ্যে আছি আর তুমি সুখের মধ্যে আছ। পৃথিবী একটা অদ্ভুত জায়গা। যেখানে কোনো একটা বিষয় নিয়ে মানুষ যেভাবে ভাবছে, সেটা তার ভাবনার উল্টো করেই ঘটছে। সব অনুভূতির এক একটা নামকরণ করে মানুষ সেগুলোকে সেই নাম দিয়েই দেখছে, বিচার করছে, কিন্তু নামে কী আসে যায়, বাস্তবতা যে মানুষের মতো করে সূত্র মেনে চলে না। মানুষ খুব কাছ থেকে সবকিছু না দেখে দূর থেকে দেখে বলেই মানুষের মনোভাবটা সাদামাটাই হয়, সেখানে গভীরতার লেশমাত্র থাকে না। এটা অনেকটা পানিতে ভাসমান বরফখন্ডের মতো। যেখানে মানুষ বরফে ডুবে থাকা বেশির ভাগ অংশের চেয়ে পানিতে ভেসে থাকা অতি সামান্য অংশ দেখেই বরফকে বিচার করে। কিন্তু অদেখা বেশির ভাগ অংশটাই বিচারের বাইরে থেকে যায়।

৪. সব ক্ষমতাবান মানুষ দাবার ঘুঁটির মতো। কে কখন সেখান থেকে ছিটকে পড়বে কেউ আগে থেকে অনুমান করতে পারে না। তবে সেখান থেকে ছিটকে পড়লেই মানুষ বুঝে মানুষের কাছে সে নয়, তার ক্ষমতাটাই মূল্যবান ছিল।

একটা চেয়ার, মানুষের চেয়েও ক্ষমতাবান। অদ্ভুত মনে হতে পারে বিষয়টা। কারণ চেয়ারের তো প্রাণ নেই, তার আবার ক্ষমতা কী? একটু চিন্তা করলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। যে কোনো ক্ষমতার ক্ষেত্রেই মানুষ একটা চেয়ার পায়, সেই চেয়ারটা পায় বলেই মানুষটা নিজেকে ক্ষমতাবান দাবি করতে পারে। যখন মানুষ ক্ষমতা হারায়, তখন সেই প্রিয় চেয়ারটাও হারায়। মানুষ খুব বিচিত্র। যতদিন ওই চেয়ারটায় মানুষ থাকে ততদিন মানুষ ওই চেয়ারে বসা মানুষটার পেছনে পেছনে থাকে। মানুষটা যত না বড় তার চেয়েও বেশি তার বন্দনায় তাকে মোহগ্রস্ত করে রাখে।

ক্ষমতাও খুব পিকুলিয়ার চরিত্রের, চেয়ারে বসা মানুষটাকে ক্ষমতাও কেমন যেন এক মায়াবী জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে অন্ধ করে রাখে। সেই অন্ধ আর মোহগ্রস্ত মাকড়সার মতো ক্ষমতায় ঝুলে থাকা মানুষটা মানুষের স্বার্থবাদী বন্দনাকে সত্য বলে মেনে নেয়, আরও বড় বড় বন্দনা পাওয়ার লোভ তার ভিতরে তৈরি হতে থাকে, এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্ষমতার পর ক্ষমতাকে ডিঙিয়ে আরও কতটা ক্ষমতার ওপরে ওঠা যায়, যদিও ক্ষমতায় ওঠার এই পিপাসা সব সময় অপূর্ণই থেকে যায়।

অথচ চারপাশে ছায়ার মতো ঘিরে থাকা মানুষ ক্ষমতার চেয়ারে বসা সেই মানুষটাকে ভালোবাসে না, বরং ভালোবাসে তার নিজের স্বার্থকে। এটা তখন বোঝা যায়, যখন চেয়ারটা আর মানুষটার থাকে না। মানুষ বদলায়, চেহারা বদলায়, চেয়ার বদলায় না। অথচ মানুষ ক্ষমতায় থাকলে সেটা বোঝে না। ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়লে মানুষ বোঝে ক্ষমতা কতটা ভঙ্গুর।

সব মানুষের কথা বলছি না, তবে সবাইকে বলছি, প্রতিদিন মানুষ ক্ষমতার পেছনে ছুটছে আর ছুটছে, একজন, দুজন নয়, অগণিত বাড়ছে আর বাড়ছে...। ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে অন্যদের কীভাবে পেছনে ফেলা যায় তার কূটকৌশলের ছক আঁকছে, সত্য-মিথ্যার রং ছড়াচ্ছে, সম্ভাব্য নেতিবাচকতার যা কিছু আছে তা ব্যবহার করছে। অথচ ক্ষমতার এই প্রতিযোগিতায় লড়তে লড়তে শেষ সময়টাতে এসে মানুষ বুঝতে পারছে, যেটা তার প্রয়োজন ছিল সেটাই সে হারিয়েছে, যেটা তার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে সেটার পেছনেই সে আজীবন ছুটেছে।

মানুষ হয়তো বোঝে, তবে যখন বোঝে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। সময়কে পেছনে ফেলে আসা যায়, ফিরে পাওয়া যায় না। তারপরও জেনেশুনে মানুষ ক্ষমতার বিষ পান করে, পান করার জন্য জীবনকে বাজি রাখে, হয়তো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার জাদুর মতো কিছু একটা থাকে বলেই এমনটা ঘটে।

৫. একটা ঘটনাকে হয়তো সবাই সত্য বলে মেনে নিয়েছে। ঠিক জানি না ঘটনাটা কতটা সত্য। হয়তো এমন কোনো ঘটনা কখনো ঘটেইনি। সবটাই হয়তো মিথ্যা। তারপরও সেই মিথ্যার ভিতরের সত্যটা মানুষকে ভেঙেচুরে কাচের মতো টুকরো টুকরো করে ফেলে। টুকরো কাচের ওপর খালি পায়ে হাঁটতে গিয়ে রক্তের দাগ রেখে যায় চলার পথে। খুব কষ্ট হয়, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে, অথচ মানুষের সামনে হাসি ধরে রাখতে গিয়ে কান্নাকেই বুকে চেপে রাখতে হয়। তা না হলে যে মানুষকেই চেনা যায় না। খুব অদ্ভুত এই পৃথিবী, অভিনয় না জানলে মানুষকে চেনা যায় না। অভিনয় জানলে মানুষকে চেনা যায়। অভিনয় একটা আর্ট আর বাস্তবতা তার সংলাপ। অথচ বাস্তবতার সংলাপগুলো নিয়েই নাটক লেখা হয়। বাস্তবতা সংলাপ হারাতে হারাতে এভাবেই একদিন নাটক হয়ে হারিয়ে যায়, নাটকের রঙ্গমঞ্চটা পরে থাকে ইতিহাস হয়ে। রঙ্গমঞ্চ থাকে, রূপ পাল্টে আধুনিক রঙ্গশালা হয়। অভিনয় থাকে, রূপ পাল্টে কূটনীতি হয়। নাটক থাকে, রূপ পাল্টে রাজনীতির খেলা হয়। অথচ সেই সময়ের যে মানুষগুলো রঙ্গমঞ্চ, অভিনয়, নাটক আর বাস্তবতাকে লাশকাটাঘরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে কাটাছেঁড়া করেছিল, তারাই কেউ থাকে না। নাকের ডগায় পৃথিবী ঘুরানো মানুষগুলো থাকে না, অথচ মানুষ বেঁচে থাকতে কখনো বিশ্বাস করে না, সেও এক দিন থাকবে না, ইতিহাসও হবে না, ইতিহাস সবাই হতে পারে না।  একটা মানুষ অনেক কাচের টুকরো। টুকরো টুকরো কাচের ভিতরে মানুষটার অনেক মুখ। অনেক মুখ থাকলেই চারপাশের মানুষের অনেক চরিত্র উন্মোচিত হয়ে ওঠে, যেমন অন্ধকারে টুকরো টুকরো আলো প্রবেশ করতে করতে উন্মোচিত করে দেয় সেই সত্যগুলোকে যে সত্যগুলো মিথ্যা ছিল, যে মিথ্যাগুলো সত্য ছিল; কিংবা সত্য-মিথ্যা কিছুই ছিল না, একটা ফেলে আসা সময়ের গল্প ছিল।  গল্পের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতার ঘাত-প্রতিঘাত ছিল। জানি সব এলোমেলো ভাবনা, কারণ আমি এই সময়ের কেউ না। ফেলে আসা পেছনের সময়ের। যার জায়গা ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়নি। কারণ আমি ইতিহাস লিখতে গিয়ে ইতিহাস হতে পারিনি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর