মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সৃষ্টির সেবা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

সৃষ্টির সেবা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত

সৃষ্টির সেবা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্তুত ইলম বিতরণ ও বক্তৃতার দ্বারা মানুষের মস্তিষ্ককে বশীভূত করা যায়। আল্লাহর পরিচয় ও প্রিয় নবীর জীবনী, জান্নাত, জাহান্নাম তথা আখেরাতের বর্ণনা, নবী-রসুলগণ, সাহাবা আজমাইন, অলি আবদাল, বুজুর্গানে দীনদের ঘটনা এবং তাদের কাশফ ও কারামত ইত্যাদি বিবরণের মাধ্যমে মানুষের ইমানি শক্তি বৃদ্ধি পায়, আমলের প্রতি জজবা সৃষ্টি হয়। কিন্তু মানুষের অন্তরকে তেমন কোনো প্রভাবিত করা যায় না। মানুষের অন্তর প্রভাবিত হয় সেবা ও খেদমতের দ্বারা। মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো, তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, যে কোনো ধরনের পেরেশানি ও কষ্ট থেকে মানুষকে উদ্ধার করা, অনাহারি দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা। অসুস্থ, আহত, রোগাগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা। বন্যা, মহামারি ও অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করা। সর্বোপরি নির্যাতিত, মজলুম, ক্ষতিগ্রস্ত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সেবা বা খেদমত দুভাবে করা যায়, ১/আত্মিক ২/বৈষয়িক। বৈষয়িক সেবার তুলনায় আত্মিক সেবার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে কোরআন ও হাদিসে আত্মিক সেবার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবার যুদ্ধের প্রাক্কালে হজরত আলী (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলছিলেন : আল্লাহর কসম তোমার দাওয়াতে আল্লাহতায়ালা যদি মাত্র একজন মানুষকেও হেদায়েত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লাল বর্ণের মূল্যবান উটের মালিক হওয়া অপেক্ষাও অনেক উত্তম (বুখারি) বৈষয়িক খেদমতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে : পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোর মধ্যে কোনো পুণ্য নেই, কিন্তু পুণ্য রয়েছে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ  এবং নবীগণের ওপর ইমান আনয়ন করার মধ্যে এবং আল্লাহর মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থীগণকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করার মধ্যে। সালাত কায়েম করলে, জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থ সংকটে, দুঃখ ক্লেশে ও সংগ্রাম সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি, (সুরা বাকারা আয়াত-১৭৭)। মানবসেবার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : প্রতিটি কওমের নেতা সফর অবস্থায় দলের খাদেম থাকবে। যে ব্যক্তি খেদমতের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অগ্রগামী হবে কেউ তাকে আমলের মাধ্যমে পেছনে ফেলতে পারবে না, তবে অবশ্য শহীদ ব্যক্তি তা পারবে। (বায়হাকি)। জনসেবা এবং মানব খেদমতের মূর্ত প্রতীক ছিলেন প্রিয় নবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সেবার এ গুণটি তাঁর মধ্যে নবুওয়াত প্রাপ্তির আগেও বিদ্যমান ছিল। প্রথম ওহিপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং এ ঘটনা হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর কাছে বর্ণনা করলেন। তখন তিনি নিম্নোক্ত বাণী দ্বারা প্রিয় নবী, বিশ্বনবী, প্রাণপ্রিয় স্বামী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-কে সান্ত্বনা দিলেন। আল্লাহর শপথ- আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না, কেননা আপনি আত্মীয়র প্রতি সদাচরণ করেন অসহায় ব্যক্তির বোঝা বহন করেন নিঃস্ব ব্যক্তির খাদ্য-বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহায়তা দান করেন, (বুখারি শরিফ)। মূল কথা হলো ইসলাম মানুষের সেবা ও খেদমতের নিমিত্তে সমাজের উপকারের জন্য নিজের যথাসর্বস্ব বিলিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে, যাতে সমাজ থেকে অশান্তি, অবজ্ঞা, অবহেলা, নিষ্ঠুরতা, জুলুম, অত্যাচার, অবিচার ও দরিদ্রতা দূর হয়ে, নেমে আসে সমাজ জীবনে শান্তির ফল্গুধারা।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর