কিছুদিন আগে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির সাবেক এক শীর্ষ নেতা মেজর আখতারুজ্জামান বলেছেন, বিএনপি এখন আর অস্তিত্বে নেই। তার এ মহামূল্যবান এবং দূরদর্শিতাপূর্ণ উক্তিটিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটের সবচেয়ে অধিক বাস্তবসম্মত মন্তব্য হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বিশেষ করে ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর তার দলবল নিয়ে বিএনপি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিএনপিতে এখন সবেধন নীলমণি হিসেবে রয়েছেন শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং রুহুল কবির রিজভী। এ দুজনই গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের আসামি হিসেবে একজন রয়েছেন হাজতে, অন্যজন পলাতক, তাই বলতে গেলে নিষ্ক্রিয়। রুহুল কবির রিজভী গোপন আশ্রয় থেকে হরতাল-অবরোধের ডাক দিলেও হরতাল-অবরোধের কোনো চিহ্নই পরিলক্ষিত হয় না। প্রতিটি সাধারণ দিনের মতোই সব সড়কে যানজট প্রকাশ্য এবং দৃশ্যমান। তবে বিএনপির বেশ কিছু দুষ্কৃতকারী দলটির ঐতিহ্যগত ধারাবাহিকতায় জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারছে। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে দলটির একান্ত দোসর, নির্বাচনে অযোগ্য ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতে ইসলাম।
এর বাইরে বর্তমানে নামসর্বস্ব এ দলটির আর কোনো কর্মকাণ্ডই নেই, যাকে রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্ণনা করা যায়। দলটির নেত্রী খালেদা জিয়া শুধু সাজাপ্রাপ্ত বলেই নয়, বরং স্বাস্থ্যগত কারণেও এখন বলতে গেলে নির্জীব। দ্বিতীয় নেতাও খুনের দায়ে দণ্ডিত হয়ে এখন পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন সুদূর যুক্তরাজ্যে। সেখান থেকেই তিনি এখনো ধ্বংসাত্মক নির্দেশনা পাঠাচ্ছেন বটে কিন্তু সে নির্দেশনা কার্যকর করার লোক এখন অনেক কমে গেছে, শুধু ভাড়াটে সন্ত্রাসী এবং জামায়াতের নেতা-কর্মীরাই মাঝেমধ্যে সে নির্দেশনা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে পালন করছে। দলটি বস্তুত নেতৃত্বের অর্থে মানবশূন্য হয়ে যাওয়ায় তার সেসব নির্দেশনা এখন আর আগের মতো কাজে আসছে না। এতদিন পর্যন্ত ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব বিএনপি-জামায়াতকে সক্রিয় রাখার দায়িত্ব বেশ সফলতার সঙ্গেই পালন করছিলেন। কিন্তু কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে দেশে ফেরার পর তিনি বলতে গেলে নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। দলটির পক্ষে খালেদা জিয়ার এক সময়ের এক কর্মকর্তা, বিএনপি সরকারের আনুকূল্য এবং ফায়দাপ্রাপ্ত, মুশফিকুল ফজল আনসারী ওয়াশিংটনে বসে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র, ম্যাথিউ মিলারের সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করার নামে নিজেই বিভ্রান্তিকর, সত্য বিবর্জিত তথ্য প্রদান করে, মিলার সাহেব থেকে বিএনপিঘেঁষা উত্তর আদায় করে নিতে পারছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে ম্যাথিউ মিলার সাহেবের মধ্যেও দেখা গেল ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তন। সেই বিএনপি নিয়োজিত তথাকথিত প্রশ্নকারী আনসারীর কথা শুনে মিলার সাহেব কেবল বিরক্তই হননি বরং তার কাছে থাকা মাইক্রোফোনটিও বন্ধ করে দিয়ে এক কথায় তার গালে চপেটাঘাত করেছিলেন। এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন এসেছে, সম্ভবত ভারত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেনকে পরিষ্কার ভাষায় এ কথা বলার পর যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো আন্তর্জাতিক আইনের খেলাপ। এ কথা বলার প্রয়োজন নেই যে যুক্তরাষ্ট্রের চীন ঠেকানো নীতি বাস্তবায়িত করতে ভারত ছাড়া সে দেশটির কোনো গত্যন্তর নেই বিধায় ভারতের কথা যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাহ্য করতে পারে না।
![](/assets/archive/images/Print-Edition/2023/12.%20December/20-12-2023/BD-Pratidin_2023-12-20-21.jpg)
হত্যা সন্ত্রাস দিয়ে সৃষ্ট বিএনপি দলটির পরিসমাপ্তি ছিল অপরিহার্য। তাই অবশেষে ২০০৩ সালেই দলটির পতনের সূত্রপাত ঘটে। দলের বিভ্রান্তিকর এবং লোভাতুর নেতাদের, বিশেষ করে তারেক জিয়ার ব্যক্তিস্বার্থ আদায়ের এবং জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে যাওয়ার নীতিতে, নির্বাচন না করে সন্ত্রাসের ওপর ভর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টার কারণে, যা তার পিতা করেছিলেন ৭৫-এর ১৫ আগস্ট, বহু নেতা বিরক্ত হয়ে দল ত্যাগ করে নতুন দল, যেমন তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএফ গঠন করেন।
বিএনপির দুজন অতি প্রভাবশালী নেতা, শমসের মবিন চৌধুরী এবং তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির পতন ঘণ্টা বাজানোর পর আরও বহু নেতা বিএনপির সঙ্গে সংস্রব ত্যাগ করেন। দলটির এক অতি ঘনিষ্ঠ সমর্থক জেনারেল সৈয়দ ইবরাহিমও বিএনপিঘেঁষা নীতি পরিহার করেন এই কথা বলে যে, দলটির সন্ত্রাসী নীতি ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির ডাকে সাড়া দেওয়া লোকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখন যারা বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেয় তাদের অধিকাংশই জামায়াতের লোক আর ভাড়া করা সন্ত্রাসী। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বিএনপির দীপশিখা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ২০২৪-এর ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার পর সে দীপ চিরতরে নিভে যাবে বলেই বিজ্ঞজনদের ধারণা।
সন্ত্রাস দমনে বর্তমান সরকারের কঠোর, আপসহীন অবস্থান বিএনপির পরিচালিত সন্ত্রাসী নীতির অবক্ষয় আরও ত্বরান্বিত করেছে। তাদের জনসমর্থন এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। শুধু বিএনপির বেনিফিশিয়ারিরাই দলে কোনোরকম অবস্থান করছেন। তাই বলতে হয় দিন শেষে সত্যের জয়ই অনিবার্য।
লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি