সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তরুণরাই গড়বে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

তরুণরাই গড়বে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দোরগোড়ায়। এবার নির্বাচনে প্রায় ১ কোটি নতুন তরুণ ভোটার ভোট দেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একাত্তরে তখনকার তরুণরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। সেই বিজয়ের ৫২তম বার্ষিকী পালিত হলো কয়েক দিন আগে ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭৫ সালের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা দুই সামরিক শাসক এবং পরবর্তীতে তাদের হাত ধরে আসা  রাজনীতি একাত্তরে অর্জিত নজিরবিহীন এই বিজয়ের মাহাত্ম্যকে যেভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, তাতে এক সময় মনে হয়েছে সব বোধহয় শেষ হয়ে গেল। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলেছি তখনই মনে হয়েছে, না সব শেষ তারা করতে পারেনি। মনে হয়েছে মুক্তি সংগ্রাম ও তার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা যদি আমরা সঠিকভাবে, বোধগম্য উপায়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি তাহলে তারাই একাত্তরে অর্জিত লাল সবুজের পতাকাকে সমুন্নত রাখবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোনো অপশক্তিই সেই অগ্রযাত্রাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তরুণদের ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখে এ আশাটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম কর্তৃক এবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানটি করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক সেখানে যে জায়গায় বসে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পড়ন্ত বিকালে পাকিস্তানি সেনা কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলটি স্বাক্ষর করেছিল। অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ পর্যায়ে যখন একাত্তরের আত্মসমর্পণ দৃশ্যের নাট্যরূপটি মঞ্চস্থ করা হয় তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছিল তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। মঞ্চ থেকে যখন ঘোষণা দেওয়া হলো এখনই মঞ্চস্থ হবে আত্মসমর্পণের দৃশ্য, তখন তাকিয়ে দেখি হাজার হাজার তারুণ্যের ভিড়ে গাদাগাদি অবস্থা, কেউ বসার জায়গা পেয়েছে, কেউ আছে দাঁড়িয়ে, কিন্তু পিনপতন নীরবতা। সবাই যেন অধীর অপেক্ষায় আছে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের জন্য, একনজর হলেও দেখতে চায় সেই দৃশ্যটি। মঞ্চ থেকে চারদিকের এই দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ ও অভিভূত মনে ভেবেছি এই তো আমাদের তরুণ প্রজন্ম আবার জেগে উঠেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির মিথ্যাচার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সত্যের জয় আজ নিশ্চিত। ক্ষণিকের ভাবনাকে পেরিয়ে একটু পরেই এলো সেই মুহূর্ত, যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছেন। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে এগিয়ে আসছেন বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কমান্ডার, তার বাঁয়ে কালো মেঘে আচ্ছন্ন মুখোচ্ছবি নিয়ে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি। তাদের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের উপ-সেনাপ্রধান এ কে খন্দকার এবং মিত্রবাহিনীর অন্য জেনারেলরা। আছেন একঝাঁক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক। যে মুহূর্তে জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করলেন, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হাজার হাজার তরুণ প্রজন্মের মুখে অনবরত জয় বাংলা জয় বাংলা ধ্বনির সেই গগনভেদী শব্দ ও দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন ৫৩ বছর আগের ১৬ ডিসেম্বরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে দেখছি। একাত্তরে জয় বাংলা ধ্বনির কাছে পাকিস্তানিরা পরাস্ত হয়েছে। আজকের তরুণ প্রজন্মের জয় বাংলা ধ্বনির কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতির পরাজয় অনিবার্য। এটা কেবলই সময়ের ব্যাপার। ১৬ ডিসেম্বরের আবেশ থাকতে থাকতেই ১৮ ডিসেম্বর আরেকটি নতুন অভিজ্ঞতায় সিক্ত হয়ে মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মেছে একাত্তরের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ আজকের তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই গড়তে সক্ষম হবে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক নিজের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন অসামান্য এক বিদ্যাপীঠ। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় নরকলিকাতা নামক নিভৃত পল্লিতে প্রয়াত মা-বাবার প্রতি ভালোবাসার অক্ষয় কীর্তির স্মারক হিসেবে নির্মাণ করেছেন মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ফাউন্ডেশনের শুরু থেকে অদ্যাবধি সভাপতি হিসেবে এ কে এম শহীদুল হক নিজের ব্যক্তিগত শ্রম ও মেধার স্পর্শে যাত্রা শুরুর মাত্র ১০ বছরের মাথায় ২০২৩ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। ১৮ ডিসেম্বর ছিল স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে বিজয় দিবস পালন উৎসব। এ উৎসবে যোগদানের জন্য শহীদ ভাই সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত দেন। তাই ১৮ ডিসেম্বর আমরা ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে একত্রিত হয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় রওনা দিই। ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিবসহ আমরা সাত-আটজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ফোরামের নারী কমিটির কয়েকজন এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে ফোরামের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহিত হাসান তরিত, সঙ্গে আরও পাঁচ-ছয়জন তরুণ-তরুণী। পদ্মা সেতু হয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে ১০টা, ২ ঘণ্টায় চলে এলাম পদ্মা সেতু হওয়ার আগের ৭-৮ ঘণ্টার পথ। তাই আসার পথে পদ্মা সেতু পার হওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই আমরা বারবার উচ্চারণ করেছি। বাপকা বেটি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চক্রান্তের পাহাড়সম বাধা পেরিয়ে দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মতোই নিখাঁদ ভালোবাসার কারণেই তিনি এ অসাধ্যকে সাধন করতে পেরেছেন। অঢেল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার শক্তি অপরিসীম, সে কোনো বাধা মানে না। শ্রীকান্ত উপন্যাসের প্রথম পর্বের নায়ক ইন্দ্র সম্পর্কে শ্রীকান্তের জবানীতে শরৎচন্দ্র লিখেছেন, ‘পরদুঃখে ব্যথা পাইয়া চোখের জল ফেলা সহজ নহে, তাহা অস্বীকার করি না; কিন্তু তাই বলিয়া সেই দুঃখের মধ্যে নিজের দুই হাত বাড়াইয়া আপনাকে জড়িত করিতে যাওয়া-সে ঢের বেশি কঠিন কাজ।’ বঙ্গবন্ধু এই ঢের বেশি কঠিন কাজ করতে পেরেছিলেন বলেই আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। যাক সে কথা, এখন আবার আজকের প্রসঙ্গে আসি। আমরা মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে পৌঁছতেই চোখে পড়ে ছেলেমেয়েরা বিজয় উৎসবের পারফরমেন্সের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুত। বর্ণিল সজ্জায় সজ্জিত মাঠের প্যান্ডেলে নানা রঙের পোশাক-আশাকে একঝাঁক ছাত্রছাত্রী বসে আছে, আবার কেউবা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে এদিকে-ওদিক ছুটছে, সঙ্গে আছে শিক্ষকদের তদারকি। শীতের মৃদমন্দ ঠান্ডামাখা উজ্জ্বল সূর্যের পরশে পৌষের শিশিরে আধো ভেজা মাঠে এমন দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে, মনপ্রাণটা যেন জুড়িয়ে যায়। গাড়ি থেকে নামতেই দেখি একদল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শহীদ ভাই দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে। জাতির পিতার স্মৃতি মিনারে পুষ্পস্তবক প্রদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নির্ধারিত অনুষ্ঠান পর্ব। দৃষ্টিনন্দন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক দুটি ভবনের সামনে বিশাল খোলা মাঠে ছাত্রছাত্রীরা বিজয় দিবস উপলক্ষে ডিসপ্লে পারফরমেন্সের জন্য প্রস্তুত। শহীদ ভাই আমাদের নিয়ে প্যান্ডেলের নির্ধারিত আসনে বসালেন। শুরু হলো ডিসপ্লে। নানা পদের শীতের পিঠা খেতে খেতে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে উপভোগ। বাঙালি জাতির দীর্ঘ সংগ্রাম, একাত্তরে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্জয় সাহস, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ এবং এদেশীয় রাজাকারদের কুৎসিত চেহারা, সবকিছুই একটার পর একটা ডিসপ্লের মাধ্যমে তুলে ধরতে থাকে ছাত্রছাত্রীরা। একাদশ শ্রেণির একজন ছাত্র মুজিব পোশাকে মাইকের সামনে এসে ঘোষণা দিল, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সঙ্গে সঙ্গে একসঙ্গে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় পুরো প্রাঙ্গণ। সাধারণের অবয়বে অসাধারণ কোরিওগ্রাফি ও থিম। প্রচণ্ড সৃজনশীলতার পরিচয়। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আমাদের হৃদয়ে ভেসে উঠেছে ৫৩ বছর আগের সব দৃশ্য। প্রায় এক ঘণ্টার ডিসপ্লে কখন যে শেষ হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। শহীদ ভাই বললেন, চলেন সবকিছু একটু ঘুরে দেখি। প্রথমেই নিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু গ্যালারিতে। নাম হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল-কলেজ জীবন থেকে শুরু করে জাতির পিতা হয়ে ওঠার চিত্রগুলো ধারাবাহিকভাবে দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ চিত্রটির সামনে এসে সবাই কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর নিথর রক্তাক্ত দেহটি পড়ে আছে। মনে মনে বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবলাম, হায় সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ। এত বড় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষক ও সুবিধাভোগীরা এখনো এই বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, বাসে, ট্রেনে আগুন দিচ্ছে, একাত্তরের মতোই নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। বিষণœ ভাবনার আচ্ছন্নতার মাঝে শহীদ ভাই এসে বললেন, আরও অনেক কিছু দেখার আছে চলুন। একে একে লাইব্রেরি, বিজ্ঞান ল্যাব, ডিজিটাল ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব ইত্যাদি দেখার পর মনে হয়েছে এমন একটি আদর্শ আধুনিক ও সুবিন্যস্ত বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রীরা অবশ্যই একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। বিদ্যাপীঠকে বলা হয় মানুষ তৈরির কারখানা, যে মানুষের ধ্যানেজ্ঞানে থাকবে সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নেই। হিন্দু না ওরা মুসলিম/ওই জিজ্ঞাসে কোন জন/কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার। এটাই একজন প্রকৃত মানুষের ব্রত। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষ এমনিতেই হবে না, গড়তে হবে। তার জন্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র, সবার দায়িত্ব রয়েছে। পাঠ্যপুস্তক সংবলিত শিক্ষাক্রমের সঙ্গে মনন, মেধা ও বুদ্ধিসত্তার বিকাশ এবং অন্ধত্ব নয়, যুক্তিতর্কের মানসতন্ত্র তৈরির জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চাসহ বহুমাত্রিক অতিরিক্ত কর্মকাণ্ড না থাকলে বড় বড় ভবন, অট্টালিকা সারশূন্য হয়ে পড়ে থাকবে; ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ তৈরি করবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও বড় বড় ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েও ধর্মীয় উগ্রবাদী জঙ্গি সন্ত্রাসে জড়াবে, যা এখন অহরহ দেখছি। বাংলাদেশে হাজার হাজার স্কুল কলেজ রয়েছে। তার অন্তত অর্ধেকও যদি মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল ও কলেজের মতো হতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হতো না। ধর্মান্ধ উগ্রবাদী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠীর আস্ফালন দেখতে হতো না। অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতার সঙ্গে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায়ও কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল ও কলেজ। আমার জিজ্ঞাসাতে শহীদ ভাই জানালেন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা অত্র প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কর্মকাণ্ড। ১৮ ডিসেম্বর আয়োজিত বিজয় উৎসবের শেষ অংশে ছিল ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের কথা। নাচ-গানের প্রতিটি উপস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সৃজনশীলতার ছাপ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমরা ছাত্রছাত্রীদের কাছে আমাদের প্রত্যাশার কথা বলেছি। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা যদি সততা, ন্যায্যতা, সাহসী ও ত্যাগের সংকল্পে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে অন্যায়, অসত্য এবং সব ধরনের অন্ধত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে পারে তাহলে তারাই হবে বর্তমান ও আগামী দিনের মুক্তিযোদ্ধা। তাদের হাত ধরেই সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ তৈরি হবে।

সারা দিন একটার পর একটা মনছোঁয়া সব আয়োজনে কখন যে দিন প্রায় শেষ তা বুঝে উঠতে পারিনি। অশেষ আতিথেয়তার স্নিগ্ধতায় শহীদ ভাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম। পথিমধ্যে অনেক ভাবনাই মনে এসেছে।  আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য একাত্তরের পাকিস্তানি দোসররা আবার জ্বালাও-পোড়াওসহ ধ্বংসযজ্ঞে নেমেছে। তবে এবারের বিজয় দিবসে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হয়েছে ওই অপশক্তির চূড়ান্ত পরাজয় সম্পন্ন। তারপর শঙ্কাহীন পথে তরুণরাই নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়বে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর