মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খেলাধুলায় প্রযুক্তির গুরুত্ব

ড. সিরাজউদ্দীন মো. আলমগীর

ক্রীড়া প্রযুক্তি হলো এমন সব মানবসৃষ্ট উপকরণ যা উদ্ভাবন করা হয়েছে কোনো সুনির্দিষ্ট খেলায় বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়াদিতে কোনো ব্যক্তির আগ্রহ ও প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ক্রীড়া প্রযুক্তি বলতে এমন প্রযুক্তিগত সরঞ্জামগুলোকে  বোঝায় যার সাহায্যে ক্রীড়াবিদরা তাদের অনুশীলন ও প্রতিযোগিতার পরিবেশগত উন্নতি সাধনের মাধ্যমে নিজেদের সামগ্রিক ক্রীড়া-নৈপুণ্যের উৎকর্ষ সাধন করেন এবং করতে সচেষ্ট হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেলাধুলা আর শারীরিক উপযুক্ততার (ফিটনেস) ক্ষেত্রে ক্রীড়া প্রযুক্তি ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন কোনো প্রতিযোগিতার জন্য খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি গ্রহণ আর ভক্ত-সমর্থকদের তাদের প্রিয় খেলার বিষয়ে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারটিকে সামগ্রিকভাবেই পাল্টে দিয়েছে। ফিটনেস ট্র্যাকার এবং স্মার্টওয়াচের মতো পরিধানযোগ্য ফিটনেস সরঞ্জামগুলোর (ডিভাইস) প্রচলন এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাবক।

প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পেশাদার খেলাধুলায় আমূল উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। নিজেদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, ক্রীড়াবিদরা বর্তমানের আধুনিক বিশ্লেষণ এবং তথ্য-উপাত্তের সুবিধা নিতে পারেন। মাঠের প্রতিটি ক্রিয়াকলাপ উচ্চগতির ক্যামেরা, জিপিএস ট্র্যাকার আর মোশন সেন্সরের মাধ্যমে ধারণ করা হয়, যা কি না কোচ এবং ক্রীড়াবিদদের কৌশল এবং দক্ষতা বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। এ ছাড়াও ফুটবলে গোললাইন প্রযুক্তি আর টেনিস, ক্রিকেট এবং অন্যান্য অনেক খেলায় হক-আই এর মতো প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানবীয় ভুল কমিয়ে দিয়ে ম্যাচগুলোয় নির্ভুলতা এবং সমতা বৃদ্ধি করেছে।

১. পরিধানযোগ্য ফিটনেস প্রযুক্তি : মানুষ তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখে যে উপায়ে তার আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে এটা। খেলাধুলা এবং ফিটনেস শিল্পে পরিবর্তনের এক বড় নিয়ামক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ ফিটনেস ট্র্যাকার, স্মার্টওয়াচ এবং অন্যান্য পরিধানযোগ্য  সরঞ্জামগুলো অবিশ্বাস্যভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যেহেতু এগুলো ঘটমান তথ্য, ব্যবহারিক বিশ্লেষণ এবং ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সম্পৃক্ত তথ্যের পরিপূর্ণ সম্মিলন ঘটিয়ে তা সরবরাহ করে।

গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২০ সালে পরিধানযোগ্য ফিটনেস প্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজার ৩৪.৯ বিলিয়ন ডলার হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল এবং ২০২৭ সালের মধ্যে তা ১৫.২% যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধির হারে (সিএজিআর) বেড়ে গিয়ে ৯৬.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য এমন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে এ গ্যাজেটগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় এদের ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে ওঠা।

নাইকি এবং পেলোটনের মতো বাস্তবিক উদাহরণগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কীভাবে একটি ব্যবসায় ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ করা মধ্য দিয়ে বিক্রয় এবং সেই সঙ্গে ব্র্যান্ড পরিচিতি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। স্মার্ট পোশাক এবং স্মার্ট জুতা ইত্যাদি পণ্য বাজারে এনে নাইকি সফলভাবেই তাদের পণ্যগুলোয় আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসবের সাহায্যে গ্রাহক তার শারীরিক ক্রিয়াকলাপের বর্তমান উপাত্ত (রিয়েল-টাইম পারফরম্যান্স ডেটা) আর তার জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য নির্দেশনা পেয়ে যাচ্ছে। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, গত ১০ বছরে বিশ্বব্যাপী নাইকির বেচা-বিক্রি ধারাবাহিকভাবে প্রায় চার গুণ বেড়েছে। ২০২০ সালে সামান্য পতন ছাড়া বাকিটা সময় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। অন্যদিকে, পেলোটন ফিটনেস পণ্যে আইওটি এবং এআই-এর ব্যবহার করে সুবিধা পেয়েছে। এর ফলে ঘরে অবস্থান করে একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ আর শারীরিক কসরত করার মধ্যে সমন্বয় করা যাচ্ছে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের ৩.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেতে সক্ষম হয়েছে।

এসব পরিধানযোগ্য ফিটনেস যন্ত্রগুলো নানাবিধ ফাংশন এবং কার্যকারিতার মাধ্যমে বিভিন্ন রুচির অসংখ্য গ্রাহকের বিস্তৃত চাহিদা মেটাচ্ছে। এ যন্ত্রগুলো ব্যবহারকারীর হৃদস্পন্দন, পদক্ষেপ, ক্যালোরি ক্ষয়, অতিক্রম করা দূরত্ব এবং ঘুমের ধরন ইত্যাদি উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে পারে। এ ছাড়া এদের অনেকগুলোয় জিপিএস স্থাপিত আছে যে কারণে ব্যবহারকারীদের জন্য সাইকেল চালনা বা দৌড়ানোর মতো বাইরের খেলাধুলার পরিকল্পনা করা সহজ হয়ে গেছে। এ তথ্যগুলো ব্যবহারকারীকে তাদের জন্য উপযুক্ত শারীরিক কসরত পছন্দ করা এবং সেগুলো ঠিকঠাক সম্পন্ন করতে সহায়ক হয়।

২. খেলাধুলায় উপাত্ত বিশ্লেষণ : খেলাধুলায় উপাত্ত বিশ্লেষণ (ডেটা অ্যানালিটিক্স) একটি যুগান্তকারী ব্যাপার। এর মাধ্যমে কোচ, ক্রীড়াবিদ এবং দল নিজেদের জন্য কৌশল নির্ধারণ, মাঠের ফল এবং চোট প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ উপাত্তনির্ভর বিশ্লেষণ পেতে পারেন। এ উপাত্তনির্ভরতা অগুনিত খেলাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে উন্নতি হয়েছে আর মানুষের সক্ষমতার সীমাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে উপাত্ত বিশ্লেষণ বেশ ভালো প্রভাব ফেলেছে। অনুশীলন এবং খেলার সময়, মোশন সেন্সর এবং জিপিএস ট্র্যাকারের মতো অত্যাধুনিক ট্র্যাকিং যন্ত্রগুলো প্রচুর পরিমাণে উপাত্ত (ডেটা) সংগ্রহ করে। সেখানে খেলোয়াড়ের গতিবিধি, গতি, ত্বরণ এবং অতিক্রম করা দূরত্বের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়। এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোচ এবং বিশ্লেষকগণ খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে পারেন, শক্তিমত্তা এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারেন এবং তারা খেলোয়াড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ও কৌশল নির্ধারণে অধিক আত্মবিশ্বাস পান।

চোট প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও উপাত্ত বিশ্লেষণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। খেলোয়াড়দের বায়োমেট্রিক্স এবং গতিবিধির ধরন মূল্যায়ন করার মাধ্যমে দলগুলো চোটের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এবং চোটের সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত করতে কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। আঘাতের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে, ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল) কর্তৃপক্ষ খেলোয়াড়ের চোটের উপাত্ত বিশ্লেষণের করে তার ভিত্তিতে নিয়ম সংশোধন করেছে। 

৩। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) : বর্তমানে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ এবং ভক্তকুলের সঙ্গে সংযোগ সাধনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) প্রয়োগ হচ্ছে। এ প্রযুক্তিগুলো দারুণ অভিজ্ঞতা দেয়, যার আলোকে খেলোয়াড়রা প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি ভক্তদের সঙ্গেও নিজেদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে পারছেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি খেলাধুলা এবং ফিটনেস শিল্পকে নিদারুণভাবে প্রভাবিত করছে। ভক্তরা তাদের পছন্দের খেলা বিষয়ে যেভাবে সম্পৃক্ত হয় শুধু সেটার পরিবর্তন আনতেই সক্ষম নয়, এ সমন্বিত প্রযুক্তিগুলো এমনকি ক্রীড়াবিদদের অনুশীলন আর খেলার মাঠের কলাকৌশলেরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মাধ্যমে ক্রীড়াবিদদের পুরোপুরি ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ জগতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, যেখানে তারা একটি নিরাপদ ও অত্যন্ত প্রাণবন্ত পরিবেশে তাদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে পারে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ্য, বাস্কেটবল খেলোয়াড়রা ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাপমুক্তভাবে বল থ্রো অনুশীলন করতে পারেন, মাঠের খেলার পরিস্থিতি অনুকরণ করতে পারেন আর চাপের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা ঝালিয়ে নিতে পারেন। জার্নাল অব স্পোর্টস সায়েন্সের একটি গবেষণা অনুসারে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটিভিত্তিক (ভিআর) প্রশিক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রতিক্রিয়ার সময়ের ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে, যার ফলে খেলোয়াড়ি-পারফরম্যান্সের সমৃদ্ধি সাধন করতে পারে।

৪. পেশাদার খেলাধুলায় প্রযুক্তি : খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স, খেলায় সমতা এবং নির্ভুলতা বাড়ানোর উদ্দেশে গোললাইন প্রযুক্তি, মোশন সেন্সর, জিপিএস ট্র্যাকার এবং উচ্চগতির ক্যামেরা ইত্যাদির মতো প্রযুক্তি পেশাদার খেলাধুলাকেই পাল্টে দিয়েছে। পেশাদার খেলাধুলায় পরিপূর্ণরূপেই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা হয়েছে, যা কি না দলগুলো কীভাবে অনুশীলন করে, খেলে কিংবা ভক্তদের সঙ্গে যুক্ত হয় তার ধরন পাল্টে দিয়েছে। অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক বিশ্লেষণ, এসবই ভবিষ্যতে পেশাদার খেলাধুলা কী রূপে বিকশিত হবে তা প্রভাবিত করছে।

খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে প্রযুক্তি বড় ধরনের প্রভাব রাখছে। পেশাদার খেলাধুলায় এখন প্রায়শই গতি নির্ণায়ক (স্পিড সেন্সর), জিপিএস ট্র্যাকার এবং উচ্চগতির ক্যামেরা ব্যবহার করে খেলোয়াড়ের অবস্থান, গতি এবং গতিবিধি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে এ তথ্য বিশ্লেষণ করে খেলোয়াড়দের কৌশল এবং পারফরম্যান্স সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেসবলে পিচ ট্র্যাকিং সরঞ্জাম ব্যবহার করে পিচের নির্ভুল গতি, ঘূর্ণন হার এবং গতিবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়, যার ফলে পিচাররা তাদের পিচের মান উন্নত করতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে পারে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব স্পোর্টস সায়েন্স অ্যান্ড কোচিংয়ে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে যে, প্রযুক্তির ব্যবহার ফুটবল খেলোয়াড়দের খেলার মান বিশ্লেষণকে উন্নত করেছে, যা খেলার কৌশলগত বিশ্লেষণ এবং আলাদা করে খেলোয়াড়কে মূল্যায়ন করা সহজ করে দিয়েছে। 

৫. ভক্তকুলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা : ভক্ত-সমর্থকরা খেলায় তাদের প্রিয় দলের সঙ্গে যে উপায়ে যুক্ত হয় তার ধরনে গত কয়েক বছরে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে, যা বিশেষ করে সম্ভব হয়েছে ভক্তদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় সৃজনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে। ডিজিটাল এ যুগে ভক্ত-অভিজ্ঞতায় আমূল পরিবর্তন এনে ক্রীড়া জগতের সাধারণ দর্শককে সক্রিয় খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

ভক্ত-সাধারণের যোগাযোগকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করার অন্যতম প্রধান নিয়ামক হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং এক্স-এর (সাবেক টুইটার) মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো খেলোয়াড় আর দলগুলোর সঙ্গে তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর যোগাযোগের এক অপরিহার্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। সেখানে পছন্দের দলগুলো মুহূর্তের খবরাখবর সরবরাহ করে, খেলোয়াড়রা তাদের পর্দার আড়ালের জীবনের টুকিটাকি সম্পর্কে জানায়, আর ভক্তরা বিশ্বব্যাপী তাদের মতো অন্য আরও যে অনুরাগী রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পায়। নিয়েলসেন স্পোর্টসের একটি জরিপ এমনটাই ইঙ্গিত দেয় যে, শতকরা ৬১ ভাগ ক্রীড়া অনুরাগী খেলার সময়কার খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলতে এবং খোঁজখবর রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে।

৬. ভবিষ্যৎ প্রবণতা এবং উদ্ভাবন : প্রযুক্তি কীভাবে ভবিষ্যতের খেলাধুলা এবং ফিটনেস খাতে প্রভাব ফেলবে তা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। রোবট, বায়োমেট্রিক সেন্সর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনকে বিবেচনায় নিতে হবে। ফিটনেস শিল্প এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত দারুণ সব নতুন উদ্ভাবনের ফলে আশা করা যায় যে ক্রীড়াবিদরা প্রতিযোগিতার জন্য কীভাবে প্রস্তুত হন এবং সমর্থকদের সঙ্গে যুক্ত হয় তাতে অব্যাহত গুণগত পরিবর্তন আনতে থাকবে। এ পরিবর্তনগুলো মূলত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং ভোক্তার চাহিদার পরিবর্তনের আলোকে পরিচালিত হয় এবং এগুলো গোটা খেলাধুলা এবং ফিটনেস শিল্পেরই খোলনলচে পাল্টে দিতে পারে। রিয়েল টাইমে (ঘটমান বাস্তবতায়) বিশাল পরিমাণ উপাত্ত বিশ্লেষণ, সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অনুধাবন ও করণীয় নির্ধারণে ক্রীড়াবিদ এবং দলগুলো ক্রমবর্ধমান হারে এআই চালিত যন্ত্রাদি ব্যবহার করছে। ক্রীড়াবিদরা খেলার সময় উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, প্রশিক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে পারেন এবং এআই চালিত যুক্তি ব্যবহার করে আরও ভালো করার সুযোগ তৈরি করেন। উদাহরণস্বরূপ, এআই খেলোয়াড়ের গতিবিধি বিশেষণ করে কৌশলগত পরামর্শ দিতে সক্ষম। পরিধানযোগ্য বিভিন্ন বায়োমেট্রিক সেন্সরের আধুনিকায়নের ফলে ক্রীড়াবিদরা এখন বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বিষয় যেমন মানবীয় আবেগ, পেশির ক্লান্তি এবং শরীরে পানির স্তর ইত্যাদির খেয়াল রাখতে পারে। এ সেন্সরগুলো চোট প্রতিরোধ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। যেহেতু এগুলো দিনে দিনে আরও সহজলভ্য আর একীভূত হচ্ছে, এ যন্ত্রগুলো ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হতে থাকবে।

ই-স্পোর্টস এবং ক্রীড়া প্রযুক্তির সমন্বয় : ই-স্পোর্টস এবং ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাগুলো ধীরে ধীরে অনুরূপ হয়ে উঠছে। ভার্চুয়াল স্পোর্টস আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আর ক্রীড়া সংস্থাগুলো ই-স্পোর্টস দল এবং লিগগুলোয় বিনিয়োগ করছে। ক্রীড়াবিদ এবং ভক্তদের একটা বড় অংশ নতুন হাইব্রিড অভিজ্ঞতা নেবে, যা তৈরি করা হয়েছে নানা ক্রীড়া প্রযুক্তি আর ই-স্পোর্টসের সংমিশ্রণে।

৭. খেলাধুলায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি : ভালো ফল পেতে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে উন্নতি করতে এবং প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ ভালো করার জন্য অত্যাধুনিক এ কৌশলগুলো ক্রীড়া শিল্পে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে ফেলছে। দল এবং ক্রীড়াবিদরা শারীরিক ফিটনেস এবং খেলাধুলার বিষয়ে যেভাবে কাজ করে সেখানে এ যন্ত্রগুলো বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

৮. ক্লাউডভিত্তিক ব্যবস্থা : ক্রীড়া ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ডিজিটাল প্রযুক্তি হলো ক্লাউড। আধুনিক ক্লাউড প্ল্যাটফরমগুলো ফিটনেস অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে পেশাদার খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন পর্যন্ত কার্যত অনলাইন স্পোর্টস সম্পৃক্ত যে কোনো বিষয়ের সমাধান দিতে পারে এবং এসব উপাত্তকে দক্ষতার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বিতরণ করতে পারে।

খেলোয়াড় ও দর্শকদের মধ্যে যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়ার জন্য ক্লাউডভিত্তিক ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এ ব্যবস্থাগুলো এমন সুযোগ এনে দিয়েছে যেখানে খেলোয়াড়, সম্পূর্ণ দল এবং সমর্থকরা যুক্ত হতে পারে এবং যোগাযোগ করতে পারে। নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা পেতে তারা প্রায়শই বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে যুক্ত থাকে।

৯. টেকসই ক্রীড়ার প্রচেষ্টা : খেলোয়াড়, দল এবং বিভিন্ন সংস্থা তাদের পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করতে এবং আরও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার স্বার্থে তাদের কর্তব্যবোধ সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছে, যার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রীড়ায় স্থায়িত্বের প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ প্রকল্পগুলো ক্রীড়া খাতের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত যেমন শক্তির ব্যবহার, বর্জ্য হ্রাসকরণ ও পরিবেশগতভাবে টেকসই অভিরুচিকে উৎসাহিত করাসহ নানা দিক নিয়ে কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

লেখক : কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন

সর্বশেষ খবর