শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রিয় নবীজি (সা.) যে দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

প্রিয় নবীজি (সা.) যে দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন

উম্মাহাতুল মুমিনীন হজরত জুয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, এক দিন আল্লাহর নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন, তখন আমি জায়নামাজে অজিফারত ছিলাম। আল্লাহর পিয়ারা হাবিব চাশতের সময় আমার ঘরে পুনরায় ফিরে এলেন। তখনো আমি জায়নামাজে অজিফারত ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, জুয়াইরিয়া! আমি যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই অজিফা আদায়ে মশগুল ছিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমার পরে চারটি বাক্য তিনবার বলেছি, যদি এগুলোকে ওজন করা হয়, তবে তোমার কৃত সব অজিফা থেকে এগুলোই অনেকগুণ বেশি ভারী হবে। অতঃপর তিনি তা আমাকে পড়ে শোনালেন। ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিযা নাফসিহি ওয়া যিনাতা আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহি।’

অর্থ : আমি আল্লাহতায়ালার প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়ার পরিমাণ, তাঁর আরশের ওজন সমপরিমাণ, তাঁর কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ। সুবহানাল্লাহ, (সহিহ : মুসলিম শরিফ-৭০৮৮) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ বলার দ্বারা আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাকে জান্নাতের বিরাট একটা অংশ দান করে তার মালিক বানিয়ে দেন। উম্মতের দরদি, আল্লাহর পেয়ারা হাবিব মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উম্মতের আমলকে কেয়ামতের ময়দানে পরিমাণে অনেক বেশি এবং ভারী হওয়ার জন্য আমলের বিশেষ একটি কৌশল শিক্ষা দিলেন। যা অল্প সময়ে অল্প আমলে অনেক বেশি নেকি পাওয়ার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এখানে মূলত মূল দোয়াটি হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা করা। যা একটিবারের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু ‘আদাদা খালকিহি’ অর্থাৎ আপনার সৃষ্টি সংখ্যা পরিমাণ। এ কথাটি বৃদ্ধি করার কারণে, বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করা অগণিত সংখ্যায় পরিণত হয়ে গেল। কেননা এখন পূর্ণাঙ্গ বাক্যটির অর্থ হলো, হে আল্লাহ আমি আপনার পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি আপনার সৃষ্টি সংখ্যার পরিমাণ। একমাত্র মহান রব্বুল আলামিনই স্রষ্টা। আর সবকিছুই তাঁর সৃষ্টি এবং মাখলুকাতের অন্তর্ভুক্ত। আমরা গভীরভাবে একটু চিন্তা ও গবেষণা করলে বুঝতে পারি, আল্লাহপাকের সৃষ্টির পরিমাণ কতটুকু। সাত আসমান-জমিন, লৌহ, কলম এবং এর মাঝে যত মাখলুকাত রয়েছে। নূরের তৈরি ফেরেশতাগণ, আগুনের তৈরি সমস্ত জিন্নাত, মাটির তৈরি সমস্ত মানব, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, বৃক্ষলতা, পানির মধ্যে বেঁচে থাকা মৎস্যকুল। মরুভূমিতে প্রতিটি বালিকণা, মহাকাশ গ্যালাক্সিতে বিরাজমান মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন, অগণিত গ্রহ-নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ এবং এগুলোতেও অবস্থিত আল্লাহর সৃষ্টি মাখলুকাত। এভাবে সাত আসমান ও জমিনে অবস্থিত আল্লাহপাকের সৃষ্ট মাখলুকাত, যার হিসাব একমাত্র এগুলোর স্রষ্টা আল্লাহপাকই জানেন। মানব-দানব জিন-ফেরেশতাগণ সম্মিলিতভাবে আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুকাতের হিসাব করতে লেগে গেলেও কেয়ামত পর্যন্ত তার সঠিক হিসাব বের করতে কখনই সক্ষম হবে না। দুই সেকেন্ড সময় নিয়ে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আদাদা খালকিহি, বাক্যটি বলে কেউ আল্লাহপাকের পবিত্রতাসহ প্রশংসা করলে, আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাকে তাঁর সৃষ্ট মাখলুকাতের সমপরিমাণ নেকি তার আমলনামায় দান করেন। যে নেকির পরিমাণ শুধু আল্লাহতায়ালাই জানেন। সুবহানাল্লাহ। অতঃপর বাক্যের দ্বিতীয় অংশ, ‘ওয়া রিযা নাফসিহি’ অর্থাৎ মহান রব্বুল আলামিন, তাঁর মাখলুকাতের ওপর সন্তুষ্টির পরিমাণ, এ কথা বলার দ্বারাও বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহতায়ালার পবিত্রতাসহ প্রশংসার নেকির পরিমাণ আগের চেয়েও কোটি কোটি গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। কারণ আল্লাহতায়ালা তাঁর সমস্ত মাখলুকাতের ওপর সন্তুষ্ট রয়েছেন। বিশেষ করে নবীগণ, ওলিগণ, মানবজাতির আল্লাহ ওয়ালাগণ, যারা সর্বদা ইমান আমল বজায় রেখে চলেন, আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকায় চলেন। নেককার জিনগণ, নিষ্পাপ ফেরেশতাগণসহ আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর হুকুমেই চলে, বিধায় তাদের ওপরও তিনি সন্তুষ্ট। সুতরাং দ্বিতীয় বাক্যটি বলার দ্বারা ওই পরিমাণ নেকি অর্জন হয়ে গেল। তৃতীয় ব্যক্তিটি, ‘ওয়াযিনাতা আরশিহি’ অর্থাৎ মহান আল্লাহতায়ালার আরশের ওজন পরিমাণ। হাদিস শরিফে এসেছে। আল্লাহপাকের আরশের সঙ্গে আল্লাহপাকের কুল মাখলুকাত, কুল-কায়িনাতের তুলনা, একেবারেই সামান্য। তাহলে আরশের ওজন পরিমাণ কতটুকু? যা একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামিনই জানেন। সুতরাং তৃতীয় বাক্যটি বলার দ্বারা বান্দা ওই পরিমাণই নেকি লাভ করবে। অতঃপর চতুর্থ বাক্যটি হলো, ‘ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি’ অর্থাৎ মহান রব্বুল আলামিনের প্রশংসা গুণগান  লেখার কালির পরিমাণ। সুরাতুল কাহফে স্বয়ং মহান রব্বুল আলামিন বলেন, সমুদ্রের সমস্ত পানিকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে কালি বানিয়ে, যদি আল্লাহপাকের পবিত্রতা গুণগান ও প্রশংসা লেখা শুরু করা হয়, তবে কালিই শেষ হয়ে যাবে, তবুও আল্লাহপাকের গুণগান ও প্রশংসা লেখা শেষ করা যাবে না। অতএব চতুর্থ বাক্যটি বলার দ্বারা বান্দা ওই পরিমাণ নেকি অর্জন করবে। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর বান্দা, নবীর উম্মতগণ, একটু ভেবে দেখবেন, উল্লিখিত জিকিরটি আদায় করতে মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় লাগে, ইচ্ছা করলে ১০ মিনিট সকাল সন্ধ্যা ১০০ বার করে ২০০ বার পড়া খুবই সহজ।

লেখক : ইমাম ও খতিব কাওলার বাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর