শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুসলিম বিজ্ঞানী আল বেরুনি

আফতাব চৌধুরী

মুসলিম বিজ্ঞানী আল বেরুনি

আজকের বিশ্বে মুসলমানরা আত্মবিস্মৃত জাতি হিসেবে পরিণত হয়েছে। নিজের ইতিহাস ঐতিহ্যকে হারিয়ে কাঙালের মতো অন্যের দিকে চেয়ে রয়েছে। অথচ যে জাতি নিজের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে জানার অনাগ্রহ দেখায় সে জাতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে অবনতির অতলগহ্বরে চলে যায়। নিজের গৌরবোজ্জ্বল অতীত নিজেকেই কুরে বের করতে হবে। এতে অনীহা দেখানো আত্মপ্রবঞ্চনার নামান্তর। আমরা সাধারণত আমাদের ইতিহাস সজীব না হওয়ার কারণ হিসেবে অন্যের নেতিবাচক দৃষ্ঠিভঙ্গিকে দায়ী করে থাকি। আমার মতে তা আক্ষরিক অর্থে ঠিক নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্য থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি বলে অন্যরা সে জায়গায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব জ্ঞান-বিজ্ঞান আহরণে নিজেদের নিয়োজিত করে সে জায়গা পুনরুদ্ধার করা। আমরা কি জানি ইবনে আল হাতেমের কথা? ইউরোপিয়ানরা যাঁকে আল-হাজেন বলে ডাকত, তিনিই প্রথম আলোর প্রতিফলন (Reflection) ও প্রতিসরণের (Refrection) সূত্র আবিষ্কার করেন। প্রায় ১ হাজার বছর আগে রাযি এবং যাবের সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড এবং আরও কিছু রাসায়নিক পদার্থ প্রথম তৈরি করেন। জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, আলজেব্রা এবং গণিত শাস্ত্রের বহু শাখাই মুসলিম বিজ্ঞানীদের হাতে লালিত হয়। মুসলিম বিজ্ঞানীরাই আবিষ্কার করেন মানুষের রক্ত সংবহন যন্ত্র। প্রথম বিমান তৈরি করেন ইবনে ফারবাস নামে এক মুসলিম বিজ্ঞানী। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এ রকম বহু মুসলিম বিজ্ঞানী রয়েছেন যাঁদের সম্বন্ধে অমুসলিম তো দূরের কথা, মুসলমানরাই অবগত নয়। চক্রান্ত করে ইতিহাস থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। মুসলিম জাহানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আল বেরুনি সম্বন্ধে আমরা কি অবগত? তিনি ছিলেন একাধারে গণিত শাস্ত্রবিদ, দার্শনিক, ঐতিহাসিক এবং বৈজ্ঞানিক। জন্মগ্রহণ করেন ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইরানের খোরাসেন প্রদেশে। পুরো নাম আবু রাইহান মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বেরুনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক এবং খোদাভিরু। আজকাল কিন্তু অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিতের মধ্যে এর অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তিনি ১৪০টি বই রচনা করেন। এর মাত্র ২২টি সংরক্ষিত আছে এবং অন্যগুলো আজ হারিয়ে গেছে। আল বেরুনিই প্রথম এক জটিল পদ্ধতির মাধ্যমে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করেন। অবশ্য ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের আগে তিনি শূন্য থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণের সাইন এবং কো-সাইন বের করেন। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ তিনি দুবার মাপেন। একবার আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত থেকে এবং অন্যবার ভারতের হিমালয়ের কোনো এক উচ্চতর শৃঙ্গ থেকে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মাপার মতো এই দুরূহ কাজটা করার জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন টেলিস্কোপের মতো দেখতে অদ্ভুত এক যন্ত্র। উচ্চ পর্বতচূড়া থেকে দিগন্ত- বলয়ের একটি কাল্পনিক রেখা তিনি টানেন। তারপর দিগন্ত বলয় (horizon) ও পৃথিবীর স্পর্শক রেখার (tougent) মাঝের কোণটি পরিমাপ করেন। উচ্চ পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতাও তিনি মাপেন। তাঁর পদ্ধতি মতো দিগন্ত বলয় ও পৃথিবীর স্পর্শক রেখার মধ্যকার কোনো পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা মাপার মধ্য দিয়েই পৃথিবীর ব্যাস পরিমাপ করা সম্ভব। আল বেরুনি প্রায় হাজার বছর আগে বলেছিলেন পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ৬৫৬০ কিলোমিটার। বর্তমানে আল বেরুনির সেই মতকে সামান্য পরিমার্জিত করে আধুনিক বিজ্ঞান বলেছে ৬৫০০ কিলোমিটার।

লেখক : প্রাবন্ধিক

সর্বশেষ খবর