শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টিফার্স্ট নাইট

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টিফার্স্ট নাইট

ইসলামে থার্টিফার্স্ট নাইট বা এ ধরনের উৎসব পালন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে এ অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। মুসলিম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণকারী। মুসলমানরা নিজের ইচ্ছা ও স্বাধীনতায় চালিত নয়, বরং আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ পালন করেই তার জীবন পরিচালিত হবে। মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসবে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতার কোনো সুযোগ নেই। মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজে থাকবে ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইমান, আমল, আখিরাতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা। ৩১ ডিসেম্বরের দিবাগত রাতকে থার্টিফার্স্ট নাইট বলা হয়। যা শিষ্টাচারবিবর্জিত, উন্মত্ত নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতায় উদ্বুদ্ধকারী পাশ্চাত্য কালচার। এতে যেমন সামাজিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, রাষ্ট্রীয় শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি যুবসমাজের চারিত্রিক মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। যা কোনো মুসলিমের কখনই কাম্য হতে পারে না। বর্ষবরণের নামে এ রাত ঘিরে পশ্চিমাদের আয়োজনের শেষ নেই। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো, মুসলমানও এ আয়োজনে পিছিয়ে নেই। আতশবাজি, পটকাবাজি, নাচ-গান, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক সেবন, নারীর শ্লীলতাহানি, ব্যভিচারসহ কত কিছুই না হচ্ছে এ রাতে। অথচ পৃথিবীর কোনো ধর্মই শিষ্টাচারবহির্ভূত, মানবতাবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেয় না। বরং প্রতিটি ধর্মের একদল উচ্ছৃঙ্খল, অসভ্য, অসামাজিক মানুষের অসুস্থ মানসিকতার নিঃসৃত বিকৃত আনন্দ উৎসব। এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে পশ্চিমা অপসংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। আজ আমাদের মধ্যে নিম্নোক্ত হাদিসের বাস্তব প্রতিফলন পরিপূর্ণভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং নিষিদ্ধ কৃষ্টি-কালচারের প্রতি আমাদের যুবসমাজ মাত্রাতিরিক্ত আকৃষ্ট হয়ে চরিত্র, ইমান, আমল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিচ্ছে। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের আগের উম্মতদের পদে পদে অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তেও ঢুকে থাকে তোমরাও তাতে ঢুকবে। বর্ণনাকারী বলেন এ কথা শুনে আমরা নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আগের উম্মত বলতে কি আপনি ইহুদি ও নাসারাদের বোঝাচ্ছেন? তিনি বললেন, তবে আর কারা হবে।’ বুখারি। অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা দুর্গন্ধযুক্ত, সংকীর্ণ গর্তেও যদি প্রবেশ করে তবে মুসলমান কেবল তাদের অন্ধ অনুকরণার্থে সে গর্তেই প্রবেশ করবে। প্রতিটি কদমে কদমে তাদের অনুসরণ করে, তাদের সভ্যতা, ভদ্রতা, আধুনিকতায় সমমান হওয়াকে সফলতা মনে করে। নবীজি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, কিয়ামতের দিন সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ আবু দাউদ। থার্টিফার্স্ট উদ্যাপনের নামে এ রাতে যা যা হয় এর প্রতিটি অত্যন্ত জঘন্যতম গুনাহ, ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ। আতশবাজি, পটকাবাজি, আলোকসজ্জা ইত্যাদি একদিক থেকে যেমন মুশরিকদের কাজ, তেমনি অন্য ভাইদের জন্য কষ্টের কারণও বটে। এর দ্বারা অন্যদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ করে বৃদ্ধ, রোগী ও শিশুদের অনেক কষ্ট হয়, যা স্পষ্ট হারাম। কেননা নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে যার জিব ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির সে যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ত্যাগ করে চলে।’ বুখারি। এ রাতে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়, যা সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। এ রাতে ব্যাপক নাচ-গান ও বাদ্য-বাজনার আয়োজন করা হয়, যা এমনিতেই নাজায়েজ। উপরন্তু দীনদার লোকদের কাউকে শুনতে বাধ্য করা হয় এবং সবার রাতের আরামের ঘুম হারাম করে দেওয়া হয়। নবীজি ইরশাদ করেন, ‘অবশ্য অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা ব্যভিচার, রেশম, নেশাদার দ্রব্য, গানবাজনা ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।’ বুখারি। তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘তোমরা গায়িকা-নর্তকীদের ক্রয়-বিক্রয় কোর না অথবা তাদের গানবাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ো না, কারণ তাদের উপার্জন হারাম।’ মিশকাত। বড় আফসোসের বিষয়, হিজরি নববর্ষ মুসলমানদের জন্য ইমান-আমল রক্ষা করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অথচ আমরা মুসলমান হয়েও বর্ষশেষ ও শুরু হওয়া এবং প্রথম মাস মহররম সম্পর্কে উদাসীন থাকি। একজন মুসলিম বছর শেষ হওয়ার পর সে আফসোস করবে লম্বা একটি সময় তার জীবন থেকে চলে গেল, এ সময়ের মধ্যে সে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করতে এবং বড় কোনো ইবাদত করতে পারেনি। এ জন্য আল্লাহর দরবারে আফসোস করবে, তওবা করবে বিগত জীবনের কৃত অপরাধের জন্য এবং সামনের জীবনে বড় নেক কাজ করে আল্লাহকে খুশি করবে, তাঁর হুকুম পুরোপুরি পালন করবে এ অঙ্গীকার করে নতুনভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। এটাই হবে মুসলমানের করণীয়। জঘন্যতম গুনাহর দ্বারা আনন্দ-উল্লাসে মত্ত হওয়া কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না, কারণ যে কোনো সময় আমার দুনিয়ার সময় শেষ হয়ে যাবে।

আমি মৃত্যুবরণ করব। তার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা উচিত। কেননা ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা আর কাফিরের জন্য আনন্দের বেহেশত।’ আল হাদিস।

লেখক : ইমাম ও খতিব কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর