শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশবাসীর প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন

মাজহারুল ইসলাম

দেশবাসীর প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন

নতুন বছরের শুরুতে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২৮৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ২৬৯ আসনে। তবে বেশির ভাগ আসনে ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগের নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। যেসব আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে জেতাতে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে শুধু সেইসব আসনেই লাঙল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে। বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেভিওয়েট হওয়ায় লাঙলের অস্তিত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। নির্বাচনে বহু আসনে নৌকা এবং একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় শক্তি প্রদর্শনের প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নির্বাচনি সহিংসতায় এ পর্যন্ত দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। সারা দেশে বিভিন্ন সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। নির্বাচনি প্রচারে আচরণবিধি অনেকেই মানছেন না। যা নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনকে শক্ত হতে হবে। প্রশাসনকেও দেখাতে হবে দৃঢ় ভূমিকা।

সংসদ নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন প্রার্থীরা তাদের সম্পদের যে তালিকা দিয়েছেন তাতে আমজনতার অবস্থা ভিরমি খাওয়ার মতো। এমনিতেই আমাদের জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের সংসদ বলে পরিচিত। এখন তাদের মধ্যে শত কোটি এবং হাজার কোটি টাকার মালিক কতজন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি ‘নির্বাচনি হলফনামায় তথ্যচিত্র, জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে- তাঁদের কাছে থাকা নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে। ওই মন্ত্রী তাঁর হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদের ব্যাপারে তথ্য দেননি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনো বিদেশে সক্রিয়ভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছে। সেগুলোর মূল্য ১৬ দশমিক ৬৪ কোটি পাউন্ড বা ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। ওই মন্ত্রী ২০১০ সালে প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ১ দশমিক ৭৩ কোটি পাউন্ড। এরপর ২০১৬ সালে খোলা আরেকটি কোম্পানির সম্পদ মূল্য ৭ দশমিক ৩১ কোটি পাউন্ড। ২০১৯ সালের খোলা কোম্পানির বর্তমান সম্পদ মূল্য দশমিক ৭৯ কোটি পাউন্ড।

তিনি ২০২০ সালে চতুর্থ কোম্পানি চালু করেন, যার সম্পদ মূল্য ২ দশমিক ১৫ কোটি পাউন্ড এবং ২০২১ সালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ কোম্পানি খোলেন, যেগুলোর বর্তমান সম্পদ মূল্য ৩ দশমিক ২২ কোটি পাউন্ড। টিআইবি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করেনি। তবে তারা বলেছেন সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ যদি টিআইবির কাছে তথ্যসূত্র জানতে চায়, তাহলে তারা তথ্যপ্রমাণসহ তা দেবেন। সোজা কথায় টিআইবি যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে তা হলো তাদের তথ্যের সুস্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য ভিত্তি রয়েছে। বলাই বাহুল্য, বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনি হলফনামায় যিনি তথ্য গোপন করেছেন তিনি ঠিক কাজটি করেননি। এ অর্থ দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে বলেই তথ্য গোপনের কসরত চলেছে। দেশবাসী চায় বিদেশে পাচারকারী যেই হোক তার মুখোশ উন্মোচন করা হবে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমনটি দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধে উঠেছে নির্বাচনি সহিংসতা। বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি লড়াইয়ের আভাস মিললেও যেভাবে তারা একে অপরের নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা চালানোসহ সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছেন, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে জয়ী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। কিন্তু যেভাবে নির্বাচনি সহিংসতা দানা বেঁধে উঠছে তা কঠোরভাবে সামাল না দিলে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে। নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করে কোনো কোনো প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করছেন। এসব বৈঠকের ছবি সামাজিক প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আর তাতে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ। নির্বাচন কমিশনের উচিত, প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনি দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তাদের কোনো বৈঠক হলে তাদের শুধু নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি চাকরিচ্যুত করা।

নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা আঁটা প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের কথাও ভাবতে হবে। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনভিপ্রেত অনেক ঘটনাই ঘটেছে। যা শুধু সরকার নয়, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। যে কারণে সরকার চায়, যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন।

নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর দেশবাসী ও বিশ্ব সমাজের আস্থা ফিরিয়ে আনা নির্বাচন কমিশনের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সঠিক পথে চলেছে যা একটি প্রশংসনীয় দিক। এ সাহস এবং দৃঢ়তা তাদের বজায় রাখতে হবে। সব ধরনের বিচ্যুতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। দেশের মর্যাদার স্বার্থে সুষ্ঠু নির্বাচনে অন্তরায় সৃষ্টিকারীদের রুখতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক

সর্বশেষ খবর