রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জুলুমকারীদের জন্য আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি

আবদুর রশিদ

জুলুম বা অত্যাচার ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য অপরাধ, যাকে সবাই ঘৃণা করে। পার্থিব জীবনে জুলুমকারীকে লাঞ্ছিত এবং পরকালে ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘জালেমদের জন্য পরকালে কোনো দরদি বন্ধু থাকবে না এবং তাদের জন্য কোনো সুপারিশকারীও হবে না, যার কথা মান্য করা হবে’ (সুরা মুমিন ১৮)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী থাকবে না’ (সুরা হজ ৭১)

উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ একে অন্যের ওপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ অত্যাচারীর জন্য কেয়ামতের দিন কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। সেদিন তার অত্যাচারের সমপরিমাণ নেকি অত্যাচারিত ব্যক্তিকে প্রদান করতে হবে; যা হবে তার জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। এজন্য জুলুম-অত্যাচার থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘শুধু তাদের ওপর দোষারোপ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’।

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘কিন্তু তারা ছাড়া যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে বারবার স্মরণ করে ও অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। অত্যাচারীরা শিগগিরই জানবে তাদের গন্তব্যস্থল কোথায় (সুরা শু‘আরা ২২৭)

তিনি অন্যত্র আরও বলেন, আর এরূপেই যখন তিনি কোনো জনপদের অধিবাসীদের পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে; নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত কঠিন (সুরা হুদ ১০২)

পবিত্র কোরআনে হুঁশিয়ারি করে বলা হয়েছে, ‘এরপর যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, আমি ওই ভূখণ্ডের উপরিভাগকে নিচে করে দিলাম এবং ওর ওপর পাকা মাটির পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা অবিরাম ছিল’ (সুরা হুদ ৮২)

এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা অত্যাচার করা থেকে সাবধান থাকো। নিশ্চয়ই অত্যাচারকারীদের জন্য কেয়ামতের দিন হবে অন্ধকার। তোমরা কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকো, কৃপণতা তোমাদের আগের জনগণকে ধ্বংস করেছে। কৃপণতা তাদের অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করার প্রতি এবং হারামকে হালাল করার প্রতি উৎসাহিত করেছিল। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৬৫; বাংলা মিশকাত, চতুর্থ খণ্ড, হা/১৭৭১ জাকাত অধ্যায়)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কারও ওপর তার ভাইয়ের যদি কোনো দাবি থাকে, মান-ইজ্জত অথবা অন্য কোনো কিছুর ওপরে জুলুম সম্পর্কিত তাহলে সে যেন ওই দিন আসার আগেই তার থেকে মাফ করিয়ে নেয়, যেদিন কোনো অর্থসম্পদ থাকবে না; বরং যদি কোনো নেক আমল থাকে তাহলে জুলুম পরিমাণ তা নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে তাহলে তার পাওনাদারের গুনার বোঝা নিয়ে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে (বুখারি, মিশকাত)

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, অত্যাচারী ব্যক্তি কেয়ামতের কঠিন অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আর সেই অত্যাচার যে কোনো ব্যাপারে হোক না কেন। আচার-আচরণ, কথাবার্তা, লেনদেন ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে হোক না কেন। জুলুম হয়ে গেলে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে নইলে পরকালে নেকির মাধ্যমে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। আর নেকি না থাকলে অত্যাচারিত ব্যক্তির গুনা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। পাপের বোঝা নিয়ে অত্যাচারীকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। সহিহ বুখারির অন্য বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ (সা.) মুআজকে বললেন, হে মুআজ! মজলুমের অভিশাপকে ভয় করবে। কেননা তার ও আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। (বুখারি, হা/২২৬৮; মুসলিম, তিরমিজি হা/১৯৩৭)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বলতে পারো সবচেয়ে নিঃস্ব কে? সাহাবিরা বললেন, আমাদের মাঝে সবচেয়ে দরিদ্র সে যার কোনো অর্থ ও উপকারী বস্তু নেই। রসুল বলেলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে গরিব এমন ব্যক্তি যে সালাত, সিয়াম ও জাকাতের নেকি নিয়ে কেয়ামতের মাঠে উপস্থিত হবে। অন্যদিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগ করা, অপবাদ দেওয়া ও গালি দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হবে। তখন তার নেকি থেকে তাদের পরিশোধ করা হবে। তার নেকি শেষ হয়ে গেলে তাদের পাপ নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম, হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫১২৮) এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, অত্যাচারে হক নষ্ট করা হয়, যা পাপের অন্তর্ভুক্ত। এর দায় কেয়ামতের দিন নেকি দিয়ে পরিশোধ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুলুমকারী হওয়ার গুনাহ থেকে দূরে রাখুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর