মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শান্তিময় হোক নতুন বছর

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

শান্তিময় হোক নতুন বছর

দিন যায়, মাস যায়, পার হয় বছর। এভাবে এক দিন শেষ হয়ে যায় জীবন। হেলায় খেলায় কত সময় অতিক্রম করি, এর সঠিক মূল্যটা অনেকেই হিসাব করি না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন আছে, যে দুটোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর’ (সহিহ বুখারি)। ইতোমধ্যে একটা বছর আমাদের জীবনঘড়ি থেকে বিদায় নিয়েছে। অনেক ভাগ্যবানের জীবনে সফলতা বয়ে এনেছে বিগত বছর। আবার কারও জীবনে ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত ছন্দপতন। নতুন বছর শুরু হয়েছে এই বছর শুভ হোক। সফল হোক। সুন্দর হোক। সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও আনন্দের ঝলমলে প্রভাত। এমনই শুভ কামনার মাধ্যমে মাসবরণ করা ও বর্ষবরণ করা ইসলামের নীতি, মহানবী (সা.)-এর আদর্শ। রসুলুল্লাহ (সা.) নতুন চাঁদ দেখে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য চাঁদটিকে কল্যাণময়, ইমানদীপ্ত এবং নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের বাহন হিসেবে আনয়ন করুন। আমার প্রভু এবং তুমি চাঁদের প্রভু মহান আল্লাহ’ (তিরমিজি)।  ইসলাম-পূর্ব মদিনায় নওরোজ (নববর্ষ) মিহিরজান (বসন্ত উৎসব) পালন করা হতো। উকাজ মেলা নামে একটি বিনোদনমূলক উৎসব পালন করার রীতিও প্রচলিত ছিল। মূলত এসব উৎসব ছিল পারস্য সংস্কৃতি। এতে ছিল না মানবতা ও নৈতিকতার কোনো ছোঁয়া। তাই মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘প্রত্যেক জাতির আনন্দ উৎসব আছে। আর আমাদের আনন্দ উৎসব হলো, এই দুই ঈদ’ (সহিহ বুখারি)।

ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, আনুমানিক দেড় শ বছর আগে থেকে এই বর্ষবরণ প্রথা চলে আসছে। তখন এই উৎসব শুধু পশ্চিমা দেশেই পালন হতো। তারা এই উৎসব তাদের ধর্মীয় রীতি হিসেবেই পালন করতে আরম্ভ করে। তাই কোনো মুসলমান অন্য কোনো ধর্মের ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে এই রীতি সমগ্র বিশ্বে মুসলিম-অমুসলিম সবার মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বরং বর্ষবরণের এই উৎসব এখন এক ভয়ংকর আতঙ্ক ও কুসংস্কারে রূপ নিয়েছে। এই বছর থার্টিফাস্ট নাইটে আতশবাজি, ফানুস উড়ানো এবং অশ্লীলতা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ছিল। দেশের আইন অমান্য করে অনেকেই ওইসব ন্যক্কারজনক কাজে লিপ্ত হয়েছে। ফলে গভীর রাতে রাজধানী ঢাকাকে মনে হয়েছে ভয়ংকর কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্র। আর ফানুসের শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা রাজধানীতে। হাজারো তরুণ নেশার জগতে অভিষেক করেছে। চরিত্র নষ্ট করার ফাঁদে আবদ্ধ হয়েছে অসংখ্য নারী। থার্টিফাস্ট নাইটে রাজধানীতে কয়েকটি স্পটে ফানুস থেকে আগুন লেগেছে। বিভিন্ন স্থানে ফানুস বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ার ফলে জনমনে আতংক এবং বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে একটি গোডাউনে ফানুস থেকে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কামরাঙ্গীরচরে এক শিশুসহ কয়েকজন আগুনে দগ্ধ হয়। নতুন বছরকে স্বাগত জানানো উপলক্ষে এভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আতশবাজি শুভ লক্ষণ নয়। জনমনে আতংক সৃষ্টি হয় এমন কাজ কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা নয়। তাই যারা এমন কর্মে লিপ্ত তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার কামনা করার বিকল্প নেই। আনন্দ উৎসব মানুষের প্রাণের চাহিদা। সুস্থ শরীর ও উৎফুল্ল মানসিকতার সহায়ক। তাই ইসলাম মানুষের জন্য সার্বজনীন উৎসবের ব্যবস্থা করেছে। বছরে দুটি ঈদ, সাপ্তাহিক জুমা, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত এবং সামর্থ্যবানদের জন্য হজ আদায় করা ইসলামের অন্যতম উৎসব। তবে উৎসবের নামে নিরাপত্তাঝুঁকি এবং আতংক সৃষ্টি করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তাই ইসলামী আদর্শের আলোকে পুরাতন বছরের তুলনায় নতুন বছরকে আরও প্রশান্তিময় করার সুদৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর