শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

বুঝেশুনে ব্যয় করতে হবে

বাংলাদেশে একসময় যে কোনো প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত হতো। কালের বিবর্তনে সে দেশই নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের সামর্থ্য দেখিয়েছে। এজন্য বাহবা অর্জনও করেছে বিশ্ব সমাজের কাছ থেকে। এ বাহবায় বিমুগ্ধ হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্পুটনিক বেগে উন্নয়নের যে কৌশল সরকার বেছে নিয়েছে তা কতটা বাস্তবসম্মত প্রশ্ন কম নয়। একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বৈদেশিক ঋণের যে বোঝা ঘাড়ে চেপেছে তা দেশের অর্থনীতির জন্য বিসংবাদ হতে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বিদেশি ঋণসহ নানা মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জমা হচ্ছে তার এক বড় অংশ পরিশোধ করতে হচ্ছে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে। ফলে তরতর করে কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনেও সেই মজুদ সামাল দিতে পারছে না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণের কিস্তি হিসেবে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পরিশোধ করতে হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসেই পরিশোধ করতে হয়েছে ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঋণ শোধে কোনো কারণে ব্যর্থ হলে তার ওপর উচ্চ সুদ আরোপের হুমকিও আছে। বিদেশি ঋণে গৃহীত বড় প্রকল্পের কিস্তি পরিশোধের চাপ অর্থনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে রাশিয়া, চীন ও জাপানের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় এখন একে একে কিস্তি পরিশোধের সময় চলে এসেছে। বাংলাদেশে একের পর এক যেসব ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার প্রাপ্তি কতটুকু সে বিষয়ে অনেক হিসাবই মিলছে না। কোনো কোনো অবকাঠামোগত প্রকল্পে যে পরিমাণ আয় হচ্ছে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খাতের খরচ তার চেয়েও বেশি। বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর কোনো কোনোটি কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন ছিল। এ প্রেক্ষাপটে এখন থেকে উৎপাদনবান্ধব উন্নয়নেই জোর দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর