বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কারাগারে ধর্মীয় শিক্ষা

মো. আবু তালহা তারীফ

কারাগারে ধর্মীয় শিক্ষা

‘রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’। আসলেই আলোর পথ দেখিয়ে এবারে তাক লাগাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। বন্দিদের আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য তাদের চেষ্টা সফলতার সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছে। আলোর পথ হলো সুপথ, যে পথে কোনো অন্ধকার নেই। যে পথে শুধু আলোয় আলোকিত। কেন্দ্রীয় কারাগার বর্তমানে ঢাকার পাশে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায়। সম্প্রতি ডেপুটি জেলার তানজিলের আমন্ত্রণে মতবিনিময় সভা হয়েছিল। সঙ্গে ছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা খোরশেদ আলম ও কারা বন্দিদের ধর্মীয় শিক্ষক ফয়জুল্লাহ। যিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কারাবন্দিদের শিক্ষাদান করছেন। মতবিনিময় সভায় অবাক করা তথ্য দিয়ে চমকে দিলেন ডেপুটি জেলার। তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালনায় মক্তবি শিক্ষা প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে ১৬ ডিসেম্বর তারিখে কেন্দ্রীয় কারাগারে মক্তব শুরু হয়েছিল। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারা মক্তবের অধীনে ৪০ জন অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীর মাধ্যমে মোট ১৪টি মক্তব পরিচালিত হচ্ছে। বন্দিদের মধ্য থেকে ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের বাচাই করে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বর্তমান মক্তবে ছাত্র উপস্থিত সংখ্যা ৩০০-৩৫০ জন। বন্দিদের মধ্য থেকে পবিত্র কোরআনের সবক নিয়েছেন ১ হাজার ৯২০ জন। মোট খতম হয়েছে ১ হাজার ৬৬৫ বার। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৫৯ জন। ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন ৭ হাজার ৪৮৫ জন। কারগারে প্রশাসনের সহোযোগিতায় ইসলামী প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান কেরাত, হামদ নাত ও আজান অনুষ্ঠিত হয়েছে দুবার। আরও অবাক করার বিষয় প্রশাসনের সহোযোগিতায় কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন একজন বন্দি। তার মাথায় পাগড়ি বেঁধে সম্মানিত করেন কারা কর্তৃপক্ষ। প্রতি মাসে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক কাউন্সিলিং করা হয় ১২ বার। কেন্দ্রীয় কারা মক্তবে কোরআন খতম শুরু হওয়ার তারিখ ১০ অক্টোবর। আজ পর্যন্ত কারাগারে ধর্মীয় ও মক্তবি শিক্ষা চলমান রয়েছে। প্রিয় পাঠক, যারা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কারাগার থেকে বের হয় তাদের তেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা কোনো সংগঠন আলাদাভাবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা বা সহোযোগিতা করলে তারা খুবই উপকৃত হবেন। আমরা জেল থেকে বের হওয়া অপরাধী ব্যক্তিকে অনেকে ঘৃণার চোখে দেখি। তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি না। সামাজিক কোনো কাজে তাকে মূল্যায়ন করি না। তাকে নিয়ে সমালোচনা কিংবা তার সঙ্গে কটূক্তিমূলক কথা বলি। আবার সে যে অপরাধ করে কারাবরণ করেছে সেই অপরাধের কথা তুলে গালমন্দ করি। অনেক সময়ে দেখা যায় তার অপরাধের কারণে তার পরিবারকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হয়। আমাদের উচিত অপরাধকে ঘৃণা করে অপরাধী ব্যক্তিকে কাছে টেনে নেওয়া। তার দ্বারা যেন অন্য অপরাধ সংঘটিত না হয় সেই পদক্ষেপ নেওয়া। তার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কারাবরণ শেষে জেল থেকে বের হয়ে সংসার পরিচালনার জন্য কাজ করার সুযোগ পেলে অর্থনৈতিকভবে উন্নতি হলে তার দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হবে না। সমাজ থেকে অনেকাংশেই অপরাধ কমে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ‘পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়’।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর