শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর

মো. আমিনুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর

এই সুন্দর পৃথিবী, আকাশমন্ডলী ও নভোমন্ডলের মালিক হলেন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন। তাঁর কুদরতি হাতের স্পর্শে এই বিশ্বজগৎ হয়েছে রঙিন এবং মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। তিনি আমাদের রব, তিনিই বিচার দিবসের মালিক। আমরা সবাই তাঁরই ইবাদত করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। তিনি সৃষ্টি করেছেন ফেরেশতাদের, যারা সর্বক্ষণ তাঁর প্রশংসায় মত্ত। আল্লাহর প্রশংসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহ অত্যন্ত পছন্দ করেন। তাই বান্দা রাত দিন যত ইবাদতই করুক না কেন তার মধ্যে আল্লাহর প্রশংসামূলক জিকির করা অধিক প্রয়োজনীয়। আমাদের মনে রাখতে হবে পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর একত্ববাদ ও প্রশংসাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নামাজ। হজের তালবিয়ার মধ্যে যে বাণীর ঘোষণা দেওয়া হয় তা হলো আল্লাহর প্রশংসা। বলা হয়, যাবতীয় প্রশংসা, নেয়ামত ও রাজত্ব একমাত্র আপনারই।

যে ব্যক্তি সর্বদা হামদ পাঠে নিজেকে ব্যস্ত রাখে সে সবার চেয়ে অগ্রগামী। আলহামদুলিল্লাহ জিকির মিজানের পরিমাপকে সওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয়। কারণ এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। আমাদের মনে রাখতে হবে বিশ্বজাহানের যা কিছু এবং যত কিছু ভালো, সৌন্দর্য, মাধুর্য ও অনুগ্রহ রয়েছে তা যেখানে এবং যে কোনো রূপে ও যে কোনো অবস্থায়ই থাকুক না কেন, তা সবই একমাত্র আল্লাহতায়ালারই জন্য নির্দিষ্ট। একমাত্র তিনিই তাঁর মহান সত্তাই সেসব পাওয়ার অধিকারী। তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্যই এর যোগ্য হতে পারে না। কেননা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনিই এবং তার সব সৃষ্টিই অতীব সুন্দর। এর অধিক সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না, মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি হলো  ‘আলহামদুলিল্লাহ হি রাব্বিল আলামিন’ অর্থ, সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহর জন্য। যিনি সৃষ্টিকুলের রব। হাদিসে এসেছে, সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’ (তিরমিজি, ৩৩৮৩)। রসুল (সা.) বলেন, আর, আলহামদুলিল্লাহ মিজানের পাল্লাকে পূর্ণ করে। (মুসলিম ২২৩)। আলহামদুলিল্লাহ হলো সীমাহীন প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার রূপ। কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে মানুষের উচিত হলো যাবতীয় শক্তি দিয়ে আল্লাহর হামদ বা প্রশংসা করা। কিন্তু অকৃতজ্ঞ বান্দা তা করে না। তার কর্মকান্ডে সেটার প্রকাশ ঘটে না। আমরা আমাদের আশপাশে সৃষ্টির যা কিছুই দেখি তা সম্পূর্ণই মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। মানুষ, ফেরেশতা, গ্রহ, নক্ষত্র, বিশ্ব প্রকৃতি, চন্দ্র, সূর্য, যেখানেই যা কিছু সৌন্দর্য ও কল্যাণ রয়েছে তা তাদের কারও নিজস্ব নয়, সবই আল্লাহর দান। অতএব যা কিছু প্রশংসা হতে পারে তা সবই একমাত্র আল্লাহর প্রাপ্য। এসব সৃষ্টির ব্যাপারে যেহেতু আল্লাহর সঙ্গে কেউ শরিক ছিল না কাজেই এসব কারণে যে প্রশংসা প্রাপ্য হতে পারে তাতেও আল্লাহর সঙ্গে কারও এক অংশীদারিত্ব থাকতে পারে না। সুন্দর, অনুগ্রহকারী, সৃষ্টিকর্তা, লালন-পালন কর্তা, রক্ষাকর্তা আল্লাহর প্রতি মানুষ যা কিছু ভক্তি শ্রদ্ধা ইবাদত বন্দেগি এবং আনুগত্য পেশ করতে পারে তা সবই একমাত্র আল্লাহর সামনেই নিবেদন করতে হবে। কেননা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তিই তার একবিন্দুর দাবিদার হতে পারে না। বরং তাঁরই রয়েছে যাবতীয় প্রশংসা পাওয়ার অধিকার। সমস্ত প্রশংসার মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামিনের। কেবল তিনিই শুধু তা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, খারাপ বা ভালো সর্বঅবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, কেউ যদি খারাপ কিছুর সম্মুখীন হয় তখনো যেন সে বলে আলহামদুলিল্লাহ। (ইবনে মাজাহ, ৩৮০৩)।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর