শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফ্রিল্যান্সিং : ঘরে বসে আয়ের সেরা উপায়

আফতাব চৌধুরী

ফ্রিল্যান্সিং : ঘরে বসে আয়ের সেরা উপায়

যারা অফিস-আদালতে ছোটাছুটির ঝামেলা পছন্দ করেন না এবং ঘরে বসেই রোজগার করতে চান তাদের জন্য দারুণ এক উপায় হলো ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিভিন্ন পেশার প্রতি আগ্রহীদের যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনি এতে কম বা বেশি সময় দেওয়ার নানা অপশন আছে।  ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে সব কাজে বেশি আয় করতে পারবেন তারই বিষয়ে এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো- ফ্রিল্যান্সিংয়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা ডেটা অ্যানলিস্টদের। যারা প্রচলিত অফিস বাদ দিয়ে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে সবচেয়ে বেশি আয় করতে চান, তাদের জন্য ডেটা অ্যানালিটিক্স ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্ষেত্রের দক্ষতা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। সম্প্রতি এ দুটি খাতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি বাড়তে দেখা গেছে। ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রের জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সারডটকমের তথ্য অনুযায়ী, কর্মী নিয়োগদাতাদের কাছে ডেটা অ্যানলিটিক্স ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট জানা কর্মীর চাহিদা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। সম্প্রতি ‘ফাস্ট ৫০’ নামে দক্ষতাবিষয়ক প্রান্তিক সূচক প্রকাশ করেছে ফ্রিল্যান্সারডটকম। ওই তালিকায় সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতার মধ্যে স্থান পেয়েছে ডেটা অ্যানালিটিক্স, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, এমএস অফিস, কপি টাইপিং, ট্রান্সক্রিপশন, ট্রান্সলেশন, বুককিপিং ইমেইল হ্যান্ডেলিং ও কাস্টমার সাপোর্ট। যাদের এ ধরনের কাজে দক্ষতা আছে, তারা চাইলে ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে ভালো করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সার ডটকমের তথ্য অনুযায়ী গত প্রান্তিকে ডেটা অ্যানালিটিক্স ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্ষেত্রের চাহিদা বেড়েছে ৫৮.৯ ও ৫৫.৬ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে তাদের সাইটে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ফ্রিল্যান্সিং কাজের পোস্ট হয়েছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ৫০টি কাজের তালিকা থেকে তৈরি করা হয়েছে ‘ফাস্ট ৫০’। দেখে নিন সর্বাধিক চাহিদার মধ্যে থেকে বাছাই করা পাঁচটি ফ্রিল্যান্সিং কাজের সার সংক্ষেপ-

ডেটা অ্যানালিটিক্স : বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ডেটা অ্যানালিটিক্সের চাহিদা বাড়তে থাকবে। ২০২৩ সাল নাগাদ ডেটা অ্যানালিটিক্স মার্কেট বেড়ে দাঁড়াবে ২৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। গত প্রান্তিকে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ডেটা অ্যানালিটিক্সে যোগ্য কর্মীর চাহিদা ৫৮.৯ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমান ব্যবসার ট্রেন্ড বুঝতে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতে দক্ষ কর্মীদের জন্য নানা প্রকল্প নিচ্ছে নিয়োগদাতারা। তাই যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এ দক্ষতা বাড়তি আয়ের পথ খুলে দেবে।

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট : গত প্রান্তিকে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরি আগের প্রান্তিকে পোস্ট হওয়া ৭ হাজার ৯২৫ থেকে ১২ হাজার ৩২৯টিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এ খাতে চাহিদা বেড়েছে ৫৫ শতাংশের বেশি। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে যারা কাজ করেন, তাদের নানারকম কাজে নিয়োগদাতাকে সাহায্য করতে হয়। গ্রাহকসেবা, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্লগ পোস্টিং থেকে শুরু করে ভার্চুয়াল অফিসে বাস্তব অফিসের সহকারীর মতো কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রকল্পভিত্তিক বা ঘণ্টা ভিত্তিতে আয়ের সুযোগ থাকে।

মাইক্রোসফট অফিস : গত প্রান্তিকে মাইক্রোসফট এক্সেলে দক্ষ কর্মীদের প্রচুর চাহিদা বাড়তে দেখা গেছে। সাধারণ টাইপিং বা ডেটা এন্ট্রি কাজের তুলনায় এক্সেল দক্ষতা কিছুটা জটিল। এক্সেল ও প্রোগ্রামিং দক্ষতাসম্পন্ন একজন কর্মী কাজকে স্বয়ংক্রিয় করে তোলার মাধ্যমে নিয়োগকারীর সময় বাঁচাতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে ২০ ঘণ্টার কাজ এক ঘণ্টায় হয়ে যায়। এ ধরনের কাজের দক্ষ কর্মীরা স্বল্প সময়ে প্রচুর আয় করতে পারেন। যারা ফ্রিল্যান্সিং কাজে ঢুকতে আগ্রহী, তারা এক্সেল নিয়ে কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

কপি টাইপিং : টানা দুই প্রান্তিকজুড়ে শীর্ষ ১০ চাহিদাসম্পন্ন কাজের মধ্যে রয়েছে কপি টাইপিং। গত প্রান্তিকে এর চাহিদা বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। বিস্তৃত ও এলোমেলো তথ্য থেকে পরিষ্কার তথ্যে কপি তৈরি, হাতে লেখা পোস্টকে সম্পাদনা উপযোগী পোস্টে রূপান্তর করার মতো নানা কাজ করতে হয় কপি টাইপিং কর্মীকে। নির্দিষ্ট প্রকল্পে নির্দিষ্ট বাজেট বা ঘণ্টা ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। যারা দ্রুত ও নির্ভুল কপি টাইপ করতে পারেন, তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং বাজারে কাজের সুযোগ রয়েছে যথেষ্ট।

ট্রাসক্রিপশন : যারা ভাষান্তর কাজে পারদর্শী তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ট্রান্সক্রিপশন দক্ষ কর্মীর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। গত প্রান্তিকে ফ্রিল্যান্সারডটকমে ৫২.২ শতাংশ চাহিদা বেড়েছে ট্রান্সক্রিপশন কাজে দক্ষ কর্মীদের। যারা নতুন করে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, তারা ভাষান্তর কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।  আরবি, রুশ, মান্দারিন, ফ্রেঞ্চসহ যত বেশি ভাষা জানবেন, তত বেশি আয় করতে পারবেন।

এসব ছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এখন অন্যের জন্য বই লিখে দেওয়ার কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিয়োগদাতার চাহিদা ও নির্দেশ অনুযায়ী বই লিখে দিতে পারলেও ভালো আয় করতে পারবেন।

                লেখক : প্রাবন্ধিক

সর্বশেষ খবর