সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

প্রিন্সিপাল এম এইচ খান মঞ্জু

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

প্রচন্ড শীত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা ধরনের শীতজনিত রোগে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অসহনীয় শীতের কারণে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশিসহ ভাইরাসজনিত রোগ বেড়ে যায়।

শীতকালে ফুসফুসে জীবাণু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। শীতে বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আগে থেকে যারা অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস শ্বাসরোগে ভুগছেন তাদের রোগ শীতে জটিল হয়ে ওঠে।

একদিকে প্রচন্ড শীত, অন্যদিকে ঘন কুয়াশায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন কয়েকদিন ধরে স্তব্ধ প্রায়। ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে যাতায়াতে তিন গুণেরও বেশি সময় লাগছে। তীব্র শীতে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ সীমা অতিক্রম করতে চলেছে। শীতের কারণে কাজ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ছে। জুটছে না পেটের অন্ন। হাড়কাঁপানো শীত অসহায় জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।

হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে, দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এর তীব্রতা আরও বাড়বে। তাই এখনই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং সৎ চেষ্টা। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় কর্মঅক্ষম মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ তীব্র শীত আমাদের জন্য অনেক আনন্দদায়ক কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন এ শীতে অসহায় গরিব বস্ত্রহীন কর্মঅক্ষম মানুষ কীভাবে রাত কাটাচ্ছেন। আমাদের মতো তাদের দামি গরম পোশাক তো দূরে থাক, সামান্য কাপড়টুকু নেই। ছোট ছোট বাচ্চারা এ তীব্র শীতে কত কষ্টে আছে। অনেকে এ শীত সহ্য করতে না পেরে মারাও যাচ্ছে। তাই সবার প্রতি আহ্বান, আসুন আমরা যে যা পারি তা-ই দিয়েই শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই।

সামনে কয়েকদিনের মধ্যে সারা দেশেই হয়তো শীতের দাপট প্রদর্শিত হবে। আমাদের দেশে শীতকাল মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য আরামদায়ক হলেও অধিকাংশ মানুষের জন্য কষ্টের। গৃহহীন, বস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষসহ নিম্নআয়ের মানুষের জন্য শীত অসহনীয়। শীতে এমনিতেই জনজীবন আড়ষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শীত জেঁকে বসায় তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে।

শীতে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। তাদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি দেখা দিতে শুরু করেছে। কষ্টে পড়েছে দিনমজুররা। তারা কাজে যেতে পারছে না। শীতের পাশাপাশি ঘন কুয়াশাও আছে। এতে স্বাভাবিক কাজকর্ম, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ব্যাহত হচ্ছে।

শীতে স্বাভাবিকভাবেই শিশু ও বৃদ্ধরা অধিক সমস্যায় পড়ে। তাদের শীত সহ্য করার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে অতি সহজেই ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়। এতে কষ্টের শেষ থাকে না, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। শীত মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় লেপ-তোশক, কম্বল-চাদর, গরম কাপড় এবং উপযুক্ত চিকিৎসাই তাদের রক্ষাকবচ। দরিদ্র, অসহায়, দিনমজুর, ছিন্নমূল মানুষ শীতে মারাত্মক বিপন্নতার শিকারে পরিণত হয়। তাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, বাইরে না বেরোলে কিংবা কিছু একটা না করলে চলে না। এসব মানুষের যেমন শীতবস্ত্র দরকার, তেমনি দরকার খানাখাদ্য। উচ্চবিত্তের কিছু মানুষ বাদে দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। ইতোমধ্যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি এবং আয় কমে যাওয়ার কারণে ব্যাপক মাত্রায় শ্রেণিবদল ঘটেছে। অনেক দরিদ্র হতদরিদ্রে, নিম্নবিত্ত দরিদ্রে এবং মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের আর্থিক সামর্থ্যরে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাদের বেশির ভাগের পক্ষে শীত মোকাবিলায় শীতবস্ত্রসহ ওষুধপত্র কেনা কঠিন। যাদের আয় বা আয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং যাদের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি তাদের পক্ষে শীতবস্ত্র কেনা বা সংগ্রহ করা অসম্ভব।

সরকার দরিদ্র, অসহায় ও শীতার্ত মানুষের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। প্রতি বছর সরকারি তরফে শীতবস্ত্র বিতরণের একটা কর্মসূচি দেখা যায়। প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে দেখা যায়। এবার এ কর্মসূচি মৌসুমের শুরুতেই নেওয়া হলে মানুষ আগেই তার উপকারভোগী হতে পারবে। ক্ষমতা ও নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই হবে না, জনকল্যাণেও সরকারকে যথাসময়ে যথোচিত কর্তব্য কর্মসম্পাদন করতে হবে। শীত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, তবে আমাদের দেশের দরিদ্র, অসহায়, বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য তা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই আপতিত হয়। তাদের দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা, দুঃখ-যাতনার শেষ থাকে না। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, শীত মোকাবিলায়ও সে ধরনের পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে। মানুষ মানুষের জন্য, তাই একের প্রয়োজনে অন্যের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এটা মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশ। সরকার তার করণীয় করবে। বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা ও সামর্থ্যবান মানুষ করবে তাদের কর্তব্য। সংগত কারণেই আমরা আশা করব, সরকার শীতার্ত মানুষের জন্য একটি ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচি এখনই নেবে। বেসরকারি পর্যায় থেকেও অনুরূপ কর্মসূচি নেওয়া হবে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন প্রিন্সিপাল এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ

সর্বশেষ খবর