মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অথর্বের বোঝা বওয়া চলবে না

মাজহারুল ইসলাম

অথর্বের বোঝা বওয়া চলবে না

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখিয়ে টানা চতুর্থবার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুকন্যা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছে আওয়ামী লীগ। ইতিহাস গড়েছেন আওয়ামী লীগ নামের নৌকার কান্ডারি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টির ভাগ্যে জুটেছে ১১টি আসন। যে আসনগুলোর কোনোটিতে নৌকার প্রার্থী ছিল না। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাসদ-১, ওয়ার্কার্স পার্টি-১ ও কল্যাণ পার্টি-১ আসন পেয়েছে। নির্বাচনে জয়ী দলগুলোর মধ্যে কল্যাণ পার্টি এই প্রথমবারের মতো সংসদে ঠাঁই পেয়েছে। সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে নজরকাড়া সুষ্ঠুভাবে। দ্বাদশ ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে যথেচ্ছতা হয়েছে তাতে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশন সে চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর লাগাতার হরতাল, আগুনসন্ত্রাসের মধ্যেও ৪১ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। নির্বাচনে টানা চার মেয়াদে জয় পেয়ে চারবার এবং সব মিলিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বিদেশের মাটিতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ১৯৮১ সালে দলের কাউন্সিলে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। হাল ধরেন মু্িক্তযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের। সে সময় থেকে তিনি একের পর এক গ্রামগঞ্জ-শহর ঘুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। নানামুখী ষড়যন্ত্রকে ধূলিসাৎ করে সংগঠনকে করেছেন শক্তিশালী। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আবারও হন বিরোধীদলীয় নেতা। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম শেষে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে এ দলকে জিততে দেওয়া হয়নি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে। কিন্তু তারপর থেকে নির্বাচন আর শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জয় একাকার হয়ে আছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, সরকারের উন্নয়ন নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। দরকার সত্যিকারের সুশাসন। এজন্য কঠোর আইন প্রয়োগসহ আইন প্রয়োগকারীদের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে। সুশাসনের স্বার্থেই তা দরকার। প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। যারাই মাদকের সঙ্গে যুক্ত হোক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে। কোনো শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই।

বর্তমান সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে তারা অভিনন্দন জানালেও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বর্তমান সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বহির্বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা এবং বর্তমান সরকারের ইমেজ বাড়ানো। সে কাজটি করতে বর্তমান সরকার সক্ষম হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সবারই জানা, জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। এ কৌশল অবলম্বন করে জাতীয় স্বার্থে পরস্পরবিরোধী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো চাপের কাছে তিনি মাথা নত করেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ অনেক সময় অনেক চাপ প্রধানমন্ত্রী কোনো চাপের কাছে তাঁর নীতি থেকে সরেননি। সে কারণে বিশ্বের অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। আরও অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছেন। আশা করা যায় নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে আরও সুসম্পর্ক গড়তে সক্ষম হবেন।

আওয়ামী লীগের আগের টার্মে সব দিকে সাফল্য থাকলেও ব্যর্থতা ছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। অর্থনীতিবিদদের মতে, যিনি গত পাঁচ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি আসলে ওই পদের জন্য যোগ্য ছিলেন না। সেটা ছিল একটা রং চয়েস। অর্থনীতি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ছিলেন অদক্ষ। নেতৃত্ব দিতে পারেননি। দক্ষতার কোনো পরিচয় তিনি রেখে যেতে পারেননি। তিনি নিজের কাজে মনোযোগীও ছিলেন না। বর্তমান মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ ধরনের অথর্বের বোঝা বইবার মানসিকতা থেকে দূরে থাকতে হবে। বলা হয়ে থাকে ক্ষমতায় আসা সহজ তবে সসম্মানে ক্ষমতায় টিকে থাকা ততটাই কঠিন। বাংলাদেশের মতো দেশে সরকার পরিচালনা বাঘের পিঠে ওঠার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ। বেয়াড়া বাঘকে পরিচালনা করা কঠিন শুধু নয় দুরূহ কাজ। বাঘের পিঠ থেকে নেমে সে কঠিন দায়িত্ব থেকে রেহাই পাওয়ারও সুযোগ থাকে না। বাঘের খোরাক হওয়ার ভয় থাকে সে পরিস্থিতিতে। ফলে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগকে বাঘের পিঠে চড়েই আরও পাঁচ বছরের পথপরিক্রমা করতে হবে। সামনের পাঁচ বছর আগের ১৫ বছরের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। দেশবাসীর কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক

সর্বশেষ খবর