মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইসলামে সত্যনিষ্ঠ ইমানের স্বাদ

ইকরামুল ইসলাম

ইসলামকে তার সব অপরিহার্য অনুষঙ্গসহ মনেপ্রাণে মেনে নেওয়াকে ‘ইমান’ বলে। ইমানের ভিত্তিতেই সূচিত হয় মুমিন জীবনের পথরেখা এবং সীমান্তসীমা। তবে সত্যনিষ্ঠ ইমানের স্বাদ ও প্রাপ্তি প্রাত্যহিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং ইবাদতে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। এজন্য মুমিনকে কঠিন পরীক্ষারও মুখোমুখি হতে হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ইমান এনেছি বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদী’ (সুরা আনকাবুত : ২-৩)। সত্যনিষ্ঠ ইমানের সর্বাধিক উপস্থিতি এবং এর প্রভাব আমরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচার্য ও সান্নিধ্য-ধন্য সাহাবায়ে কেরামের জীবনে দেখতে পাই। নিম্নের বর্ণনাগুলো তারই প্রমাণ বহন করে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা আস-সাহমি (রা.)। হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে রোম অভিমুখী এক যুদ্ধবাহিনীর সঙ্গে তাকেও পাঠানো হয়। রোম সম্রাট তাকে বন্দি করে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানায় এবং তার আহ্বানে সাড়া দিলে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসিত করার আশ্বাস দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রা.) তার এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, ‘এর চেয়ে এক হাজার বার মৃত্যুও আমার জন্য সম্মানের’। রোম সম্রাট তাকে নিজ ক্ষমতায় অংশীদার এবং অর্ধ সাম্রাজ্যের মালিক বানানোর প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, আপনি যদি আমাকে আপনার সাম্রাজ্য এবং আরবের সব সাম্রাজ্য দান করেন, তারপরও আমি চোখের এক পলকের জন্যও ইমান ত্যাগ করব না।’ তাকে হত্যার ভয় দেখানোর জন্য এক মুসলিম বন্দিকে ফুটন্ত তেলের পাত্রে নিক্ষেপ করা হয়। পুনরায় তাকে খ্রিস্টান হওয়ার আহ্বান করে নিরাশ হলে তাকেও ফুটন্ত তেলের পাত্রে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়। এ সময় সম্রাটের এক লোক তাকে ভারাক্রান্ত দেখে মনে করে, তিনি মৃত্যুভয়ে চিন্তিত। আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রা.) বলেন, ‘আমি পেরেশান এ কারণে যে, ফুটন্ত এ পাত্রে আমাকে একবার নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে আমার জীবনের ইতি ঘটতে চলেছে; অথচ আমার মন চায়, আমার শরীরে যত পশম আছে, এতবার যদি আমার জীবন থাকত, সব জীবনকেই ফুটন্ত এ পাত্রে আল্লাহর রাস্তায় বিসর্জন দিতাম...।’ সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা : ১/২৯-৩২। বিশিষ্ট আনসারি সাহাবি হজরত খুবাইব ইবনে আদি (রা.)। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০ জনের এক কাফেলার সঙ্গে কোরআনের শিক্ষক হিসেবে তাকেও পাঠান। দীর্ঘ বর্ণনা; এক পর্যায়ে তিনি কাফেরের হাতে বন্দি হলে ‘হত্যা বদলা’ নেওয়ার জন্য হারিস ইবনে আমেরের পুত্ররা তাকে ক্রয় করে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হত্যার আগে তিনি তাদের কাছে দুই রাকাত নামাজ পড়ার অনুমতি চাইলে, তারা মঞ্জুর করে। নামাজ শেষে তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি ধারণা না করতে, আমি মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি, তাহলে আমি নামাজ আরও দীর্ঘ করতাম...।’ অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত পঙ্ক্তি আবৃত্তি করেন, ‘আমি যখন মুসলিম হিসেবে শহীদ হচ্ছি, তখন আমি পরোয়া করি না, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমাকে কোন পাশে শোয়ানো হচ্ছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আমার মরণ হচ্ছে, তিনি ইচ্ছা করলে আমার খন্ডিত টুকরোসমূহে বরকত দান করতে পারেন’ (বুখারি)।

লেখক : খতিব, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ জামে মসজিদ, ঝিনাইদহ

সর্বশেষ খবর