বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রজব মাসের মর্যাদা এবং আমল

মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

রজব মাসের মর্যাদা এবং আমল

হায়াতের বাজেট এক দিন এক দিন করে আমাদের শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইমান আমলে জিন্দেগি অতিবাহিত করা সব মুমিন মুসলমান নর-নারীর একান্ত কর্তব্য। আমাদের মধ্যে আগমন করছে পবিত্র মাস রজব। এ মাসকে ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে আমাদের কাজে লাগাতে নিজের উদ্যোগী হতে হবে।

সম্মান, প্রজ্ঞার দাবি অনুযায়ী আল্লাহতায়ালা কিছু মাস ও দিবসকে অন্যান্য মাস ও দিবসের ওপর মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। তেমনই একটি তাৎপর্যমন্ডিত মাস হলো পবিত্র মাহে রজব। যে মাস আমরা অতিবাহিত করছি। ‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায়, অধিক সম্মান করত। এ জন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল ‘রজব’। ইসলামের আগমনের পর বছরের বারো মাসের মধ্য থেকে রজবসহ চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস ঘোষণা করা হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, এর মধ্যে চারটি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান (সুরা তাওবা-৩৬)। নিষিদ্ধ ও সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে রজব একটি। হজরত আবু বকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সে দিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল তা ফিরে এসেছে। ১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিন মাস পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং মুজারের মাস রজব, যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বোখারি ও মুসলিম)। ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে, বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয়। আর এ মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন) তাই আশহুরে হুরুমের অন্তর্গত রজব মাসের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে অধিক যত্নবান হতে হবে।

রজব মাসের ফজিলত সম্পর্কে একটি সুপ্রসিদ্ধ হাদিস শরিফ, সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবাও ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ- ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন’ (নাসায়ি, মুসনাদে আহমাদ)। এ হাদিস শরিফ থেকেই অনুধাবন করা যায়, মুমিন জীবনে মাহে রজবের গুরুত্ব কত অপরিসীম। এ মাসের ২৬ তারিখ রাতে আল্লাহতায়ালা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মেরাজের মাধ্যমে তার দিদার দিয়েছেন।

ইসলামের ইতিহাসে নবুয়তের দশম বছরে ৬২১ খ্রিস্টাব্দে রজব মাসের ২৬ তারিখের রাতে ইসলামের নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। এ বরকতময় সফরে আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রদান করেন।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তার বান্দা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের কিছু অংশে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম কাবা শরিফ থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকতময় করে দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (সুরা বনি ইসরাইল-১)।

তাই এ মাস এত মর্যাদাপূর্ণ। তা ছাড়া পবিত্র হাদিস শরিফেও রজব মাসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিক নফল ইবাদতের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকেও রজব মাসের বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।’

গুনাহের গন্ধে কলুষিত অন্তর আত্মাকে তাওবার মাধ্যমে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে এই রজব মাসেই। হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস। তিনি আরও বলেন, ‘রজব মাস ঠান্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো’ (লাতায়েফুল মা’আরেফ-১৪৩)।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস থেকেই মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। অধিক নফল রোজা ও ইবাদতে কাটাতেন রজব ও শাবান মাসে। তাই আমাদেরও কর্তব্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করে রজব মাসে নেক আমল আদায় করা। বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা আদায় করি। মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম, খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ মিরপুর-২, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর