রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মহান ওলি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী

মো. আবু তালহা তারীফ

মহান ওলি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী

হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী মধ্য এশিয়ার খোরাসানের অন্তর্গত ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলার সঞ্জর নামক গ্রামে ১১৩৮ ইংরেজি ৫৩৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দিন, মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহেনুর। তাঁর বয়স যখন ১৫ তখন পিতা-মাতা মারা যান।

হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী প্রথমে পিতার কাছ থেকে দীনি শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি সাত কিংবা ৯ বছর বয়সে পবিত্র কোরআন তরজমাসহ মুখস্থ করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুল, তাফসির, আরবি, সাহিত্য ব্যাকরণ, মানসিক, হিকমত দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানলাভ করেন। তাছাড়া তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত হুসামুদ্দীন (রহ.)-এর কাছে দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) ১৫ বছর বয়সে এলমে তাসাওফ সম্পর্কিত মূল্যবান একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন, তিনি তাসাওফ তত্ত্বে অগাধ জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তারপর তাঁর ওস্তাদ হজরত হুসামুদ্দীন বুখারির নির্দেশক্রমে তিনি হজরত খাজা ওসমান হারুনি (রহ.)-এর কাছে মুরিদ হতে যান। নিশাপুরের কাছে হারুন নামের একটি ছোট শহরে বাস করতেন  মহাসাধক হজরত ওসমান হারুনি (রহ.)। তিনি ছিলেন শরিফ জিলানীর মুরিদ ও প্রধান খলিফা। তাঁর কাছে হিজরি ৫৬০ সালের ১১ শাওয়াল বুধবার জোহরের নামাজের পর খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) মুরিদ হয়েছিলেন। মুরিদ হওয়ার আড়াই বছর পর হজরত ওসমান হারুনি (রহ.) তাঁকে খেলাফত দান করেন। হজরত ওসমান হারুনি তাঁকে চার কোণবিশিষ্ট একটি টুপি পরিয়ে দেন, টুপিটি তিনি তাঁর পীর শরিফ জিলানীর কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) বহু দেশ সফর করেছেন। সফর করার আগে কঠোর ইবাদত বন্দেগি এবং মুরাকাবা মুশাহাদা করেছিলেন। তিনি হজ পালন করেন। সফররত অবস্থায় হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) বহু পীর-ওলির সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এমনকি স্বয়ং গাউছে পাক হজরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর সান্নিধ্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ৫৭ দিন তাঁর সঙ্গে অবস্থান করেন। গাউছে পাক তাঁকে বলেছিলেন, ইরাকের বেলায়ত সাহাবুদ্দিন সরওয়ার্দীকে দান করা হয়েছে, আর তোমাকে প্রদান করা হয়েছে হিন্দুস্তানের বেলায়ত। এই সংবাদ নিজ পীর খাজা ওসমান হারুনির সঙ্গে মদিনায় অবস্থান ও জিয়ারতকালে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন।

হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) ৫৮৬ সালে মাত্র ৪০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে হিন্দুস্তানে আসেন। এরপর বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেন। তিনি আরব থেকে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোরে পরে দিল্লি হয়ে আজমিরে আগমন করেন। আজমিরে পৌঁছলে সেই সময়ের হিন্দু রাজা পৃথ্বিরাজের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। পৃথ্বিরাজ খাজা মঈনুদ্দীনকে উৎখাত করার জন্য বিখ্যাত জাদুকর রামেদেবকে পাঠান, কিন্তু জাদুকর রামেদেব খাজার অত্যধিক শক্তির কাছে নতিস্বীকার হয়ে মুসলমান হয়ে নাম রাখেন মোহাম্মদ সাতাফি।

হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) ছিলেন দরদি মনের মানুষ এবং চরিত্র ও তাঁর আখলাক ছিল মহাশক্তি এবং অমোঘ অস্ত্র যেই কারণেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই তাঁর সংশ্রবে এসে আকৃষ্ট হয়ে পড়ত এবং তাঁকে আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধা করত। হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) ৬৩৩ হিজরির ৬ রজব পবিত্র আজমির শরিফে ইহধাম ত্যাগ করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। গরিবে নেওয়াজের বড় সাহেবজাদা হজরত খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী তাঁর জানাজার ইমামতি করেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি হজরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার খাকী (রহ.)-কে খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর