বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

জি এম কাদেরের অস্বীকার : সত্যের সমাধি

সুনীল শুভরায়

জি এম কাদেরের অস্বীকার : সত্যের সমাধি

সূর্যের উদয় দিকের নামটাই পরিবর্তন করে বলার মতো কিছু কথা বলেছেন বর্তমানে জাতীয় পার্টির (কা-চু) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সেই কথাগুলো ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে সাক্ষাৎকার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে বহুল প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ‘অস্বীকার জি এম কাদেরের’ শিরোনামে। তার সাক্ষাৎকারের  চুম্বক কথা তুলে ধরা হয়েছে- (১) সরকারের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার কথা মিথ্যা। (২) স্ত্রীর জন্য অন্যরা ছাড় পাননি অযৌক্তিক।  (৩) ষড়যন্ত্রকারীদের ক্লিন করে দলকে সংগঠিত করছি। (৪) আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে জাতীয় পার্টির কোনো সমঝোতা হয়নি। (৫) লালমনিরহাট-৩ বাদ দিয়ে স্ত্রীকে ঢাকা-১৮ আসন দিয়েছেন। (৬) আওয়ামী লীগের কাছে ৫০-৬০টি আসনের কথা বলেছিলাম। এরপর আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দমতো ২৬টি আসন ছাড় দিয়েছে। (৭) ১১ আসনে জয় এটা ভরাডুবি নয়। ২০১৮ সালে বিএনপি সাত আসনে জয়ী হয়েছিল। (৮) নির্বাচনের দিন জাতীয় পার্টির এজেন্ট বের করে দিয়ে জোর করে সিল মেরেছে। তবে রংপুর-৩ আসনে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। জি এম কাদেরের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে জ্বলন্ত সত্যেকে কীভাবে জীবন্ত সমাধি দিয়েছেন তার কিছু চিত্র আমি তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, তিনি বলেছেন, সরকারের কাছ থেকে তিনি কোনো অর্থ সাহায্য পাননি। এ জাতীয় অর্থ লেনদেনে কোনো প্রমাণ থাকে না। যিনি ঘুষ নেন তিনি কি কাউকে মানি রিসিপ্ট দিয়ে উৎকোচ গ্রহণ করেন? তবে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া যে হয়, এই সমাজে তা কে না জানে। কোথা থেকেও যদি কোনো অর্থ প্রাপ্তি না ঘটে থাকে তাহলে মনঃপূত প্রার্থীদের অর্থ দিলেন কোথা থেকে। চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী তার বাসা থেকে কিছু প্রার্থীকে অর্থ প্রদান করেছেন। এটা সত্য- এই অর্থ প্রদান এবং গ্রহণের কোনো প্রামাণ্যচিত্র নেই। সব সত্য প্রমাণসহ দন্ডায়মাণ হতে পারে না। অর্থ প্রাপ্তির প্রমাণ যখন দেওয়া গেল না, তখন বাদ দিলাম ওই প্রসঙ্গ। কিন্তু এ প্রসঙ্গে যে জনশ্রুতি আছে, তা কিন্তু বাদ দিতে পারলাম না। পরের প্রসঙ্গে আসি। কাদের সাহেব বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নাকি জাতীয় পার্টির কোনো আসন সমঝোতা হয়নি। এর  চেয়ে ডাহা মিথ্যা কথা কী আর কিছু থাকতে পারে? সমঝোতা না হলে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগ যে তাদের প্রার্থী তুলে নিয়েছে সেটা কীসের ভিত্তিতে? আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর স্বাক্ষরিত তালিকায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব আসনে জাতীয় পার্টির অনুকূলে নৌকার প্রার্থী তুলে নেওয়া হলো। দেশের সব মিডিয়ায় সে কথা প্রচার কিংবা প্রকাশ হয়েছে। তাহলে ওই সময় আওয়ামী লীগ মিথ্যা বলছে, মিডিয়া মিথ্যা খবর প্রচার করেছে- দেশবাসী মিথ্যা জেনেছে, আর এখন জি এম কাদের সত্য কথা বলেছেন। এসব কথা কি এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করবে? আওয়ামী লীগ প্রথমে যে ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিল সেখানে ঢাকা-১৮ আসনের উল্লেখ ছিল না। তখন ওই ২৬ আসনের মধ্যে সিলেট-৩ আসন অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটা জাতীয় পার্টির জন্য একটি জয়ী হওয়ার মতো আসন ছিল। কারণ অতীতে একাধিকবার জাতীয় পার্টি এককভাবে ওই আসনে জয়ী হয়েছে। জি এম কাদেরের কথা অনুসারে আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দমতো ঢাকা-১৮ আসনটি কাদের পত্নীকে অনুদান দিয়েছে? মিথ্যাচারের নির্লজ্জতার একটা সীমা থাকে। এখানে তাও অতিক্রম করা হয়েছে।

আসল সত্যটা হলো- এই আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিরাম অবিশ্রাম সমঝোতার মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী তুলে দিয়ে জাতীয় পার্টিকে আসন বরাদ্দ করার দেনদরবার, দরকষাকষি করে শেষ পর্যন্ত যখন দেখা গেল সমঝোতার তালিকায় মিসেস চেয়ারম্যানের নামই নেই- তখন জি এম কাদের রাগে-ক্ষোভে জানিয়ে দিলেন, স্ত্রীর আসন নিশ্চিত না করে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনেই নামাবেন না। বেকায়দায় পড়ে আওয়ামী লীগ তাদের উপ-নির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রার্থীকে কোরবানি দিয়ে জি এম কাদেরকে তুষ্ট করে। আবার কতটা দ্বিমুখী কথা ওই সাক্ষাৎকারে জি এম কাদের সাহেব বলেছেন, তা দেখে নেওয়া যাক। আওয়ামী লীগের কাছে ৫০-৬০টা আসনের কথা বলেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের পছন্দমতো ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে। উনি কী বলতে চান। আওয়ামী লীগের কাছে যে ৫০-৬০টি আসন চেয়েছিলেন তার মধ্যে ওই ২৬টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না? যা চেয়েছেন তার বাইরে থেকে পছন্দমতো আসন ছেড়ে দিয়েছে। আর এমন আসনও চাওয়া হয়েছিল- যেখানে নৌকার প্রার্থী তুলে দেওয়ার পরও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ৬৮০ ভোট পেয়েছেন। ওই ২৬ প্রার্থীর মধ্যে একজনের মতো তাদের জামানত হারিয়েছেন। চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব হরহামেশা বলেছেন, আমরা সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসিনি। শুধু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলতে যাই। জাতীয় পার্টির অগণিত নেতা-কর্মীকে ওনারা কতটা বোকা ভাবতেন এবং মিডিয়াকে যে কতটা বিভ্রান্ত করতেন তা শুধু ওনারাই জানেন। যদি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করার এতটাই তাগিদ মনে করতেন, তাহলে প্রতিপক্ষ দলের দুয়ারে গিয়ে ধরনা ধরবেন কেন, নির্বাচন কমিশনই তো উপযুক্ত জায়গা। তারা কতটা মিথ্যাচার করে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী-সমর্থককে ধোঁকা দিয়েছেন- তার জবাব দেওয়ার মতো ভাষা নেই বলে এখনো সত্যটাকে আড়াল করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দ্বাদশ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অনুদানের ২৬ আসনের মধ্যে ১১ আসনে জয়লাভকে ভরাডুবি মনে করেন না জি এম কাদের। তিনি দেখাতে চান ২০১৮ সালে বিএনপি ৭ আসনে জয়লাভ করেছে। কার সঙ্গে কিসের তুলনা। ১৪ এবং ১৮-এর নির্বাচনের তুলনায় ২৪-এর নির্বাচন যে তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে- সেটা তো মানতে হবে। তা ছাড়া ১৮-তে বিএনপি যে মোট ভোট পেয়েছিল তার তুলনায় জাতীয় পার্টি কত ভোট পেয়েছে। তথ্য অনুসারে ৯০% আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। ৮০% আসনে তো জাতীয় পার্টি নির্বাচনও করেনি। এখন কথা হলো- জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর প্রায় সাড়ে চার বছর সময়ের মধ্যে জি এম কাদের পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করে তার দলকে বিপর্যয়ের কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এখন জনসমর্থনের দিক থেকে জাতীয় পার্টির অবস্থান চরমোনাই পীরের পার্টির নিচে। অন্তত বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফল থেকে এটাই প্রমাণ পাওয়া যায়। এই বিপর্যয়ের দায়দায়িত্ব কি চেয়ারম্যানের কাঁধে বর্তায় না? জি এম কাদের মহোদয়ের গত এক বছরের কথাবার্তা, বক্তৃতা-বিবৃতি কিংবা বাণী-বচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন দেদার ট্রল হচ্ছে। কখনো সরকারের সমালোচনায় সরব, আবার কখনো নীরব। কখনো বলেন, আমাদের নির্বাচনে ডেকে নিয়ে কোরবানি দেওয়া হয়েছে। কখনো বলেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। আবার কখনো বলেন, নির্বাচন কিছুটা সুষ্ঠু হয়েছে। তবে রংপুর-৩ আসনে অর্থাৎ তার নিজের বিজয়ী হওয়া আসনে নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করে রেখেছেন। কিন্তু রংপুরের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বলেছেন অন্য কথা। যাই হোক, নির্বাচন-উত্তর সময়ে কাদের সাহেবের অন্যতম উক্তি- ‘সরকার যাকে চেয়েছেন জিতিয়ে আনবেন-তিনি জিতেছেন। আর যাকে চাননি তিনি জিততে পারেননি’। অন্তত এই একটি কথাকে যদি সত্য বলে ধরে নেই, তাহলে আমাদের বুঝতে হবে, সরকার চেয়েছে বলেই জি এম কাদের জিতে এসেছেন। আলোচিত সাক্ষাৎকারে জি এম কাদেরের বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, তিনি বলেছেন, নির্বাচনের দিন জাতীয় পার্টির এজেন্ট বের করে দিয়ে জোর করে সিল মেরেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম দৃশ্য অনেক দেখা গেছে। কিন্তু কত আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে? নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কতজন প্রার্থী ছিল। অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একটি ঝিমিয়েপড়া দলে অন্তত ৩০০ আসনে প্রার্থী পাওয়া কম কথা ছিল না। সেখানে দেখা গেল গোটা দলকে বিক্রি করে মূল্য বাবদ মাত্র ২৬টি আসনে ছাড় নেওয়া হলো এবং স্বয়ং মহাসচিব যখন নিজেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রচার করলেন, তখন অধিকাংশ প্রার্থী মাঠঘাট ছেড়ে উঠে গেলেন। ভোটের দুই দিন আগে পত্রিকায় খবর এলো- জাতীয় পার্টির ২২৫ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। তখন আর প্রার্থী বাকি থাকে কোথায়? প্রার্থীরা অভিযোগ তুললেন, চেয়ারম্যান, মহাসচিব কেউ তাদের খোঁজখবর নেন না। ফোন করলে ফোন ধরেন না। দেখা করতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। এসবের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছেন, জি এম কাদেরের ভাষায় তারা হয়ে গেছেন ষড়যন্ত্রকারী। একদিকে নির্বাচনে ভরাডুবি-জাতীয় পার্টির ইতিহাসে সর্বনিম্ন আসনে জয়লাভ, দলের মধ্যে বিভ্রান্তি, গ্রুপিং সৃষ্টি, তোষামোদকারীদের প্রতি অতি প্রীতি, সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, সাংগঠনিক অদক্ষতা, স্বীয় স্বার্থে দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া ইত্যাদি অগণিত অনিয়মের বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদী কণ্ঠ সোচ্চার হয়ে ওঠে তখন সেটাকেই জি এম কাদের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। নিজের ব্যর্থতা ঢেকে চেয়ারম্যানের মসনদ অটুট রাখার জন্য তিনি এখন পার্টি থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতির মহোৎসবে মেতে উঠেছেন। এখন দেখা যাক, কে কার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে জাতীয় পার্টি মানে পল্লীবন্ধু এরশাদ। এবারের নির্বাচনে পল্লীবন্ধুর নাম-নিশানা একবারে মুছে দেওয়া হয়েছে। আরপিওর অজুহাতে পোস্টার থেকে এরশাদের ছবি উধাও হয়েছে কিন্তু নির্বাচনি ইশতেহারের প্রচ্ছদ থেকে পল্লীবন্ধুর ছবি মুছে গেল কেন? গঠনতান্ত্রিকভাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপাধি পল্লীবন্ধু। সেই উপাধিকে মান্য করার জন্য তিনি ‘জনবন্ধু’ উপাধি ধারণ করেছেন। উনি জনগণের বন্ধু হয়ে কি কাজটা করেছেন? জনগণের এমনই বন্ধু হয়েছেন, নিজের নির্বাচনি এলাকা লালমনিরহাট-৩ আসনে জামানত হারানোর আশঙ্কায় সেখানে ভোট করতেই যাননি, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীক কেড়ে নেওয়ার জন্য রংপুরের যে ব্যক্তি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, জি এম কাদের তাকে পুরস্কৃত করে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর যিনি সেই লাঙল রক্ষার জন্য আদালতে লড়াই করেছেন তাকেই কাদের সাহেব দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। তাহলেই বুঝতে হবে, যড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু কোথায় অবস্থিত। নির্বাচনে ভরাডুবি এবং পার্টির সাংগঠনিক বিপর্যয়ের জন্য চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদত্যাগ চাওয়া হয়েছিল। ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ দাবি করা রাজনৈতিক ভাষা। যখন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচনের অর্থ আত্মসাৎ করেছি এটা প্রমাণ দিতে পারলে পদত্যাগ করব। তাই যারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি করেছেন, তারা অন্যায় করেননি। যে প্রতিবাদ হয়েছে তা পার্টির স্বার্থে হয়েছে। জি এম কাদের সাহেবের নিশ্চয় মনে পড়বে, তাকে যখন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পার্টির কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছিলেন, তখন তৎকালীন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ কয়েকজন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্ষুব্ধ হয়ে বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করে তাকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। জিয়াউদ্দিন বাবলু এবং সিনিয়র কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংবাদিকদের কাছে একটা বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অব্যাহতি দিয়ে বেগম রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে।  একই সঙ্গে জি এম কাদেরকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু এত বড় ঘটনার পরও পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। শুধু জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদে বহাল রেখেছেন। এই হচ্ছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর জি এম কাদেরের ব্যবধান।

পদটীকা : জি এম কাদের বলেছেন, সরকার তাকে নির্বাচনে নিয়ে কোরবানি করেছেন। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের রাজনৈতিক কৌশল সফল হয়েছে। ভয় দেখানোর ফলটা লোভ দেখিয়ে উসুল করে নেওয়া হয়েছে। ছোট্ট একটা গল্প বলে শেষ করি। এক লোক তার সঙ্গীকে নিয়ে নদী পার হওয়ার জন্য খেয়া নৌকায় উঠেছেন কিন্তু মাঝ নদীতে পৌঁছালে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলো। নৌকা তখন ডুবে যায় যায় অবস্থা, লোকটি তখন মা-কালীকে স্মরণ করে বলল, মা, এই বিপদ থেকে আমাদের প্রাণে বাঁচিয়ে দাও।  কূলে উঠে তোমাকে জোড়া পাঠা-বলি দিয়ে পূজা করে যাব। যাই হোক, নৌকা বেঁচে গেল, সবাই নিরাপদে কূলে উঠে গেল। লোকটি কালীমন্দিরের দিকে না গিয়ে অন্যপথে হাঁটতে শুরু করল, তখন তার সঙ্গী তাকে বলল, কি দাদা পূজা দিতে যাবেন না? লোকটি তখন বলল, আরে কিসের পূজা, মা-কালী আমাকে ভয় দেখিয়েছিল, আমি তাকে লোভ দেখিয়ে বেঁচে গেলাম।

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতিক

সর্বশেষ খবর