বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কল্যাণকর একনায়কতন্ত্র

অধ্যাপক জীবেন রায়

কল্যাণকর একনায়কতন্ত্র

বিশ্বের অনেক দেশেই সংবিধানে নেই একজন নেতা বা নেত্রী কতবার প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুবারের বেশি একই ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশে দুবার নয় অনেকবারই হতে পারেন।

সুতরাং সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশে শেখ হাসিনা পরপর চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কথাটা কিন্তু সত্যি নয়। এই পরপর হওয়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একবার। তার মানে হলো তিনি পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এবার তার দল সাম্প্রতিক ইলেকশনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তাই ফের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তুলনামূলকভাবে এবারের ইলেকশন অনেক ভালো হয়েছে। রাতের আঁধারে সিল মারা হয়নি। তবে অংশগ্রহণমূলক হয়নি। লক্ষণীয়, বাঙালি হেরে যাওয়াকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। তাই কারচুপির কথা বলেই চলে। এমনকি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও বলেছেন। তিনিও ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে চেয়েছেন ইলেকশন সঠিক হয়নি। তাহলে আপনার বড় ভাই জয়লাভ করলেন কী করে। বাঙালির স্বভাব যেতে সময় লাগে। এই যে দেখুন না আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। কেন হেরেছেন? কারচুপি হয়েছে। প্রমাণ ছাড়াই বলে দিলেন। এবারের ইলেকশনে যে সব প্রার্থী হেরেছেন, তাদের উচিত ছিল জয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানো। এ প্রথা চালু হতে দেরি হবে বৈকি।

যা হোক আমি বলতে চেয়েছিলাম, এই যে পরপর শেখ হাসিনা ইলেকশনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, তাতে কি তিনি একনায়ক বা ডিক্টেটর হয়ে উঠছেন?

আমি বলতে চাই, না। তিনি কোনোভাবেই ডিক্টেটর নন। বিভিন্ন বিষয়ে তার ডিসিশন একার কি না, আমি জানি না। জানার কথাও নয়। কিন্তু আমি একটা উদাহরণ তুলে ধরতে চাই আর তা হলো সিঙ্গাপুর। পাঠকগণ, সিঙ্গাপুরের একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্রায় ৩১ বছর। কই তাকে তো কেউ ডিক্টেটর হিসেবে দেখেন না। আজকের সিঙ্গাপুর তার জন্যই হয়েছে।

লি কুয়ান ইউ এক সময়কার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ভদ্রলোক ১৯৫৯ থেকে ১৯৯০ সাল প্রায় ৩১ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কই তাকে কিন্তু কেউ ডিক্টেটর বলে না। দেশটাকে কী বানিয়ে দিয়ে গেছেন, সিঙ্গাপুরে পা রাখলেই বুঝতে পারেন। আমি লি কুয়ানকে কল্যাণকর একনায়কতন্ত্রী বলতে চাই। সে তুলনায় শেখ হাসিনা তো এখনো ততোধিক কাল ক্ষমতা ভোগ করেননি। গত ১৫ বছরের চেয়ে ভালো কেউ কি করতে পারত?

একমাত্র দুর্নীতিকে কন্ট্রোল করতে পারেননি। অবশ্য দুর্নীতি একটা দেশকে ফতুরও করে দিতে পারে। তাছাড়া সবকিছুই সিঙ্গাপুরের মতোই এগিয়ে চলছে। গরিবি হটাতে পারলেই সিঙ্গাপুর। সত্যি কথা বলতে কী গরিব আছে বলেই সুযোগ পেলেই টাকা পাওয়ার ধান্ধায় থাকতে হয় গরিব মানুষকে। তাই ওদের টাকার বিনিময়ে অগ্নিসন্ত্রাস কিংবা খুন করতে কাজে লাগানো যায়। চিন্তা করুন, বিএনপির আমলে কত খুন হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে তুলনায় শেখ হাসিনার শাসনকালে রাজনৈতিক খুন একটিও হয়নি। তবে জেল ভরেছে। খুন হওয়ার চেয়ে জেলে থাকা ভালো নয় কি? বিএনপিও তো ক্ষমতায় ছিল। তখনো তো দুর্নীতির ‘হাওয়া ভবন’ হয়েছিল। সেই টাকা দিয়েই তো এত বছর ধরে চলছে। আয় রোজগার না করে বিদেশের মাটিতে বহাল তবিয়তে দিন যাপন করছে। পলিটিক্স বা রাজনীতি শিশুতোষ বই পড়ার মতো অত সহজ বিষয় নয়। আর আমি তো একজন শিক্ষক, তবে বুঝতে চেষ্টা করি। বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম তো। সবকিছুতেই প্রমাণ খুঁজতে যাই। আমি যেমন বঙ্গবন্ধুর একশত ভাগ ভক্ত, তেমনি জিয়াউর রহমানেরও ভক্ত। কেননা মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের ভাষণই মানুষকে উজ্জীবিত করেছে।

তাছাড়া মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর জন্যই মুক্তিযুদ্ধ এবং জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।

যাই হোক অতীত ঘেঁটে লাভ নেই। মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরে এসব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। নমস্য জাহানারা ইমাম লিখে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি।

বর্তমান বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শেখ হাসিনা মহিলা হিসেবে সবচেয়ে লম্বা সময়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা নিজের আখের গোছানোর জন্য নয়। ডিক্টেটর তখনই হয় যে নিজের ক্ষমতা অপব্যবহার করে অথবা পরিবারের আখের গোছায় এবং ক্ষমতা অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষ বা বিরুদ্ধ লোকদের খুন করে বা হিটলার বা মুসোলিনি, গাদ্দাফি, সাদ্দাম হোসেন অথবা আয়ুব খান হয়ে যান।

কিন্তু লি কুয়ান হতে দোষ নেই তো।

লেখক :  অধ্যাপক, বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিভাগ, মিসিসিপি ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান, কলম্বাস, মিসিসিপি, যুক্তরাষ্ট্র

সর্বশেষ খবর