রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রকাশিত লেখার প্রতিবাদ

১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনের ‘খোলা কলাম’ পৃষ্ঠায় ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ’ শিরোনামে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের লেখার একাংশের আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।  তিনি নিজেকে বড় এবং অন্যকে ছোট করার হীনমানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে কালিহাতী-৪ সংসদ নির্বাচনের কিছু তথ্য বিকৃতি করেছেন এবং আমার সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন । বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম কলামের শেষের দিকে লিখেছেন, ‘মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল মাজহারুল ইসলাম ঠান্ডুকে। একজন ইউনিয়ন লেভেলের নেতাও তিনি নন। লতিফ ভাইয়ের দয়াদাক্ষিণ্যে সে এত বছর রাজনীতির নামে নানা অপকর্ম করেছে।... যেখানে মাজহারুল ইসলাম ঠান্ডুর ২০-২৫ হাজারের বেশি ভোট পাওয়ার কথা না, সেখানে সে ভোট পেয়েছে ৫৪ হাজার। কেন পাবেন না? তার ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩১ হাজার। সেখানে সে একাই পেয়েছে ২৮ হাজার। ইত্যাদি।’ কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য বিকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার কলামে আমার নাম বিকৃত করা হয়েছে। আমি মাজহারুল ইসলাম ঠান্ডু নই। আমি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার (ঠান্ডু)। আমরা ঐতিহ্যগতভাবে প্রায় ৩০০ বছর ধরে তালুক কেনার মাধ্যমে স্বনামধন্য তালুকদার বংশের উত্তরাধিকারী।

জনাব কাদের সিদ্দিকী লিখেছেন, নারান্দিয়া ইউনিয়নে মোট ভোট ৩১ হাজার, যা সঠিক নয়। সঠিক তথ্য হলো, ভোটার ২৭ হাজার ৯৭৯। তিনি লিখেছেন, সেখানে আমি একাই ২৮ হাজার ভোট পেয়েছি, এটা সম্পূর্ণ বিকৃত তথ্য। ২৮ হাজার নয়, আমি ভোট পেয়েছি ১১ হাজার ৮৩৫। তা ছাড়া কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) নির্বাচনি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের কাছে যে প্রায় ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন, সে কথা তিনি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেননি। অনুপম শাহজাহান জয় পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট আর কাদের সিদ্দিকী ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট। অতীতেও ওই আসনে তিনি জয়ের বাবা শওকত মোমেন শাহজাহানের কাছে একইভাবে পরাজিত হয়েছিলেন।

জনাব কাদের সিদ্দিকীর জ্ঞাতার্থে সবিনয়ে জানাচ্ছি যে, তিনি যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিক, তখন আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে গিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছি এবং পরে টাঙ্গাইলের মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, ১৯৭২ সালে কালিহাতীর নারান্দিয়া ইউনিয়নের রিলিফ চেয়ারম্যান, ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কালিহাতী থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৮৪-১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাতবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ এবং ২০০৩-২০১১ সাল পর্যন্ত আমি নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি এবং ১৯৯৭ সালে টাঙ্গাইল জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যানের স্বীকৃতি অর্জন করেছি। ২০১৪ সালে আমি বিএনপির প্রার্থীকে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে পরাজিত করে কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।

অথচ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম লিখেছেন, আমি ইউনিয়ন লেভেলের নেতাও নই। তার আপনার ভাই লতিফ সিদ্দিকীর দয়াদাক্ষিণ্যে রাজনীতির নামে আমি অপকর্ম করছি বলে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। বলতে পারেন, আয়নায় নিজেদের চেহারাটা একবার দয়া করে দেখুন। সারা দেশে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে কে একটি কাজও সম্পন্ন করেননি? তার বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যখন আর্টিজেন দুর্নীতির মামলায় সামরিক আদালত থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত, সেই মামলা থেকে রাষ্ট্রপতি এরশাদের ক্ষমা পাওয়ার জন্য কাদের সিদ্দিকীর ভাবি যখন কালিহাতী থেকে নির্বাচন করেছিলেন, তখন কে ছিলেন তার প্রধান সহায়তাকারী? তখন আমি সাংগঠনিকভাবে তার পাশে না দাঁড়ালে লায়লা সিদ্দিকী নির্বাচিত হতে পারতেন না। আর এরশাদের ক্ষমা না পেলে লতিফ সিদ্দিকী সাহেবও দুর্নীতি মামলা থেকে ক্ষমা পেতেন না। তা ছাড়া আপনার বাবা আবদুল আলী সিদ্দিকী মোক্তার সাহেব যখন টাঙ্গাইলের আদালত অবমাননা মামলায় জেলে, তখন আমার আপন বড় চাচা হাই কোর্টের বিচারপতি ব্যারিস্টার টি. তালুকদার বিশেষ অনুকম্পা দেখিয়ে তাকে জামিন না দিলে তার পরিবারের কী দশা হতো তা লতিফ সিদ্দিকী সাহেব বহুবার সবার সামনে প্রকাশ্যে বলেছেন। তা ছাড়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আপন ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী তার দুই ভাইকে কী ভাষায় এবং কী কী বিশেষণে প্রকাশ্য বক্তৃতায় বলেছেন তার প্রমাণ তো ইউটিউবসহ নানা সংবাদমাধ্যম খুললেই পাওয়া যায়। এজন্য অন্য কাউকে তাদের সম্পর্কে বলার প্রয়োজন নেই।  নিজের আপন ছোট ভাই-ই যথেষ্ট। তাই বিনীত অনুরোধ, চোখ বুজে বিগত দিনের হিসাবনিকাশ মেলান। কোথায় ছিলেন আর দাম্ভিকতা-অহমিকার জন্য কোথায় নেমে এসেছেন আপনারা, তা একবার মূল্যায়ন করলে কখনো এসব করতে পারতেন না।

ধন্যবাদসহ

মোজহারুল ইসলাম তালুকদার (ঠান্ডু)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর