সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পাখি বাঁচান

আফতাব চৌধুরী

পাখি বাঁচান

পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে পাখি। পাখি এক অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। সবুজ অরণ্যে পাখ-পাখালির কূজন এক মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে। তাড়িত মনকেও ক্ষণিকের জন্য করে তোলে আবেগময় উন্মাতাল। তাই প্রকৃতিপ্রেমী কবিদের অস্তিত্বে পাখির উপস্থিতি আরও বেশি ধরা দেয়। পাখি শুধু নন্দনতত্ত্বের খোরাকই জোগায় না, পাখি প্রকৃতিকে ফুলে-ফলে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য বিরাট অবদান রাখে। কেননা ফসলের পরাগায়ণে আরও স্পষ্ট করে বললে প্রজনন বা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিশেষ অবদান রাখে, যা অর্থনৈতিক দিক  থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মনুষ্যকুল তার এ পরমহিতৈষীকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে ফেলছে নিজেদের প্রয়োজনে, যা কি না রীতিমতো আত্মঘাতী কর্মকান্ডের শামিল। তেমনি উদ্বেগজনক একটি বিষয়ের অবতারণা করেছে একটি পরিবেশবাদী সংস্থা। তাদের ভাষায়, অনুকূল পরিবেশ, আবাসস্থলের অভাবে পৃথিবীর সাধারণ পক্ষীকুল ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, যার পরিণতি ভয়াবহ। পরিবেশবাদী সংস্থা বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনালের এক সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপে সাধারণ পাখির ৪৫ ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান রীতিমতো উদ্বেগজনক। কেননা সেখানকার ৮০ ভাগের বেশি পাখি নিঃশেষ হয়ে গেছে। বলা হয়েছে, গত ২৬ বছরে ইউরোপের ২০টি দেশের ১২৪টি প্রজাতির অন্তত ৫৬টি জাতি পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে শস্য খেতে বিচরণকারী পাখির বিলুপ্তির হার ৭৯ ভাগ। আফ্রিকার অবস্থাও নিতান্তই উদ্বেগজনক। শিকারিদের খপ্পরে পড়ে সেখানকার অসংখ্য পাখি প্রতি বছর নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলোতে অতিথি পাখি শিকারের প্রবণতা মারাত্মক। ফলে ৬২ ভাগ পাখি বিলুপ্ত হয়েছে শিকারিদের হাতে। গবেষকদের মতে, শুধু শিকারিদের লোলুপদৃষ্টিই পাখি ধ্বংসের একমাত্র কারণ নয়। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এক্ষেত্রে অন্যতম কারণ। প্রতিদিন পৃথিবীর কোনো না কোনো খানে জীববৈচিত্র্যের ওপর পড়ছে। ফলে পাখি হারাচ্ছে তার বিচরণক্ষেত্র। খাদ্য সংকট এক্ষেত্রে ফেলছে আরও ভয়াবহ প্রভাব। বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী তথ্য পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর মতে, সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যে তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ধরিত্রী সম্মেলনে তা পূরণে ব্যর্থতাই পাখি বিলুপ্তিকে ত্বরান্বিত করছে। তাদের ভাষায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২২৬টি প্রজাতি বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যে ১৯০টি প্রজাতি অচিরেই বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাদা পালকের চিলের ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে শস্য খেতে বিষটোপ এবং গবাদিপশু চিকিৎসায় প্রদাহরোধক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশি সাদা চিলের অস্তিত্ব এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। কারণ ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ সেবনকারী গবাদিপশুর বর্জ্য বিষাক্ত হয়ে যায়, যা ভক্ষণ করে মারা যায় চিল। প্রকৃতি থেকে পাখি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদেশি গাছ রোপণ।  আম-জাম-কাঁঠালের মতো বহু গাছ আছে যেগুলো ফল দেয়, কাঠ ও ছায়া দেয় এবং প্রাণীজগৎকে বাঁচায়। মেহগনি লাগালে একের ভিতর এক অর্থাৎ শুধু কাঠ পাবেন আর আম-কাঁঠাল লাগালে ফল, কাঠ পাবেন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা পাবে।

সর্বশেষ খবর