বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রতীক

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রতীক

ইসলাম শান্তির ধর্ম। একমাত্র ইসলামেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা ও শান্তি। নিজের জীবনে ইসলাম পালন ও প্রতিষ্ঠার পরে, নিজের পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের সবার কাছে  দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে আল্লাহর দীনকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। কোরআন ও হাদিসে দীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্বকে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ, আল্লাহর পথে দাওয়াত-তাবলিগ, ওয়াজ নসিহত, দীনি ইলম শিক্ষা, হক্কানি পীর মাশায়েখদের আধ্যাত্মিক ধর্মচর্চা ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বা আল্লাহর দীন পালনের পথে সবাই মানুষকে আহ্বান করাই ছিল সব নবী ও রসুলদের মূল দায়িত্ব। এ দায়িত্বই উম্মতে মুহাম্মদীর সর্বোচ্চ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কেননা ইহাকে নবীওয়ালা কাজ বলা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন : তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কর। আল্লাহর ওপর ইমান আন (সুরা আল ইমরান ১১০) নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতোই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাও প্রতিটি মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা অন্যত্র বলেন : তোমাদের মধ্যে এমন এক দল হোক, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম (সুরা আল ইমরান ১০৪) সুতরাং যারা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও ক্ষমতায় রয়েছেন তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব ফরজে আইন করা হয়েছে এবং তারা আল্লাহপাকের কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবে। আল্লাহপাক বলেন : যাদের আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান বা ক্ষমতাবান করলে তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয়, সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করে, আর সব কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে রয়েছে (সুরা হজ আয়াত ৪১)। তদ্রুপভাবে প্রতিটি পরিবার, প্রতিষ্ঠান, অফিস ও কার্যালয়ের দায়িত্বশীলদের ওপর তার অধীনস্তদের আদেশ-নিষেধ ও দাওয়াত ইলাল্লাহ করা ফরজে আইন। অধীনস্তদের পাপ-পুণ্য বিষয়ে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : সাবধান! তোমরা সবাই অভিভাবকত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মানুষের ওপর দায়িত্বপ্রাপ্ত শাসক বা প্রশাসক অভিভাবক এবং তাকে তার অধীনস্ত সব জনগণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। বাড়ির কর্তা ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিভাবক এবং তাকে তাদের বিষয় জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ি ও তার সন্তান-সন্ততির দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তাকে তাদের বিষয় জিজ্ঞেস করা হবে (বুখারি)। প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন : আল্লাহর কসম, তোমার মাধ্যমে যদি একজন মানুষও হেদায়েত লাভ করে, তাহলে তা তোমার জন্য সর্বোচ্চ সম্পদ লাল উটের চেয়েও উত্তম বলে গণ্য হবে (বুখারি) অন্য হাদিসে এসেছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ভালো পথে আহ্বান করে, তবে যত মানুষ তার অনুসরণ করবে, তাদের সবার পুরস্কারের সমপরিমাণ পুরস্কার সেই ব্যক্তিও লাভ করবে। তবে এতে অনুসরণকারীদের পুরস্কারে কোনো ঘাটতে হবে না। আর যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিভ্রান্তিও গুনাহর দিকে আহ্বান করে, তবে যত মানুষ তার অনুসরণ করবে তাদের সবার পাপের সমপরিমাণ পাপ সেই ব্যক্তিও লাভ করবে, তবে এতে অনুসরণকারীদের পাপের কোনো ঘাটতে হবে না (মুসলিম)। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, দাওয়াত ও তাবলিগের পুরস্কার যেমন অফুরন্ত, আর তার অবহেলার শাস্তিও অত্যন্ত ভয়ানক। কোরআন ও হাদিস থেকে জানা যায় যে, এবাদত পালনে অবহেলা করলে চার প্রকারের শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। এক. দুনিয়াবি গজব ও শাস্তি, দুই. পরস্পরের সৌহার্দ ও সম্প্রীতি নষ্ট হওয়া, তিন. দোয়া কবুল না হওয়া, চার. পাপ কাজ না করেও শুধু আপত্তি না করে চুপ থাকার কারণেও সমপরিমাণ পাপের ভাগী হওয়া। ফকিহদের মতে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা সত্ত্বেও কোনো সমাজ যদি পাপে লিপ্ত হয়ে যায় এবং তাদের শোধরানোর কোনো সম্ভাবনা না থাকে, সেক্ষেত্রে ইমানদার আমলদার মুমিন মুসলমানের জন্য উচিত হলো সেই পাপের স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়া। প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন : যখন মানুষেরা অন্যায় দেখেও তা পরিবর্তন বা সংশোধন করবে না, তখন যে কোনো মুহূর্তে আল্লাহর শাস্তি তাদের সবাইকে গ্রাস করবে (তিরমিজি) প্রিয় নবী (সা.) আরও এরশাদ করেন : কোনো সমাজের মধ্যে যদি কোনো ব্যক্তি অবস্থান করে, আর সেখানে সে অন্যায় পাপে লিপ্ত থাকে এবং সেই সমাজের মানুষেরা তার সংশোধন পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা পরিবর্তন না করে চুপ থাকে, তবে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহর আজাব তাদের সবাইকে গ্রাস করবে (আবু দাউদ) মহান আল্লাহতায়ালা বলেন : ওই ব্যক্তি অপেক্ষা কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে উৎকৃষ্ট দ্বারা প্রতিহত কর, তা হলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরই, যারা ধৈর্যশীল। এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরকেই, যারা মহা ভাগ্যবান (সুরা হামিম সাজদাহ আয়াত ৩৩-৩৫)।

লেখক : ইমাম ও খতিব; কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণ খান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর