এ বছর বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আসুন ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৮ সালে ৯.৬ মিলিয়ন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। তাই ক্যান্সার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বজুড়ে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয় ৪ ফেব্রুয়ারি। দিনটি প্রথম শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। ২০০০ সালে প্যারিসে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) এমন একটি সংস্থা যা প্রাথমিক পর্যায় ক্যান্সার শনাক্ত করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে। সংস্থাটি ২০০৮ সালে প্রথম এই দিবস পালন শুরু করে।
একটা সময় ছিল, যখন ক্যান্সারের কোনো অ্যানসার ছিল না। কিন্তু আজ অধিকাংশ ক্যান্সারকে সারিয়ে তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি আমি, আপনি আমরা সবাই। দরকার সচেতনতা। অতিমাত্রায় তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ক্যান্সারে। আবার অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণও ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ। কৃষিতে রাসায়নিক ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের খাদ্যদ্রব্যকে করে তুলছে অনিরাপদ। এর ওপর রয়েছে ফলমূল ও মাছে ফরমালিনের ব্যবহার।
বায়ুদূষণকেও ক্যান্সার বিস্তারের আরও একটি কারণ বলে মনে করা হয়। বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি ক্যান্সারের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষণা বলছে, ক্যান্সার আক্রান্ত প্রতি ২ লাখ মানুষের জন্য দুটি রেডিওথেরাপি সেন্টার প্রয়োজন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি রেডিও থেরাপি সেন্টার যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে যত মেশিন আছে তার সবগুলো আবার সমভাবে সচল নয়। জানা গেছে, মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৬০ শতাংশই পুরুষ। পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৩ শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস ক্যান্সারে, লিপ অ্যান্ড ওরাল ক্যান্সারে ১২ শতাংশ, খাদ্যনালির ক্যান্সারে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া আছে পাকস্থলী, হস্কিন লিম্ফোমা, মূত্রনালি, লিভার ও লিউকোমিয়া ক্যান্সার। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ৪০ লাখ ঘটে অকালমৃত্যু, ৩০ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে। ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে কিছু কাজ সম্মিলিতভাবে সফল করতে পারি। আবার ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই পারি ক্যান্সারের বোঝা লাঘবে ভূমিকা রাখতে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের ওপর ক্যান্সারের ক্ষতিকর প্রভাব লাঘবে সবারই সুযোগ আছে ব্যবস্থা নেওয়ার।![](/assets/archive/images/Print-Edition/2024/02.February%20-2024/07-02-2024/Bd-Pratidin-07-02-24-F-02.jpg)
বিশ্বের অনেক দেশে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নারীদের মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, নিউজিল্যান্ডসহ ২৮টি দেশে এ ধারা লক্ষ্য করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, সিগারেট ও মদ্যপানে আসক্তি, দূষিত পরিবেশে কাজ করা প্রভৃতি ক্যান্সারের ঝুঁকির উপাদান হিসেবে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
অনেকে ধূমপান না করলেও পান এবং পানের সঙ্গে জর্দা, সাদা পাতা এ ধরনের তামাকজাতীয় দ্রব্যাদি সেবন করে থাকেন। এসবও তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ। একই কারণে মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত বাস্তবসম্মত শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহিত করতে হবে, ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি পরিহারে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলেই ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেকাংশে সাফল্য আসবে এবং ক্যান্সারে আক্রান্তদের সিংহভাগ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়