শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আল্লাহমুখী জামাত তাবলিগ

মুহম্মদ আশরাফ আলী

আল্লাহমুখী জামাত তাবলিগ

মানবজাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান করাই ছিল নবী-রসুলগণের প্রধানতম দায়িত্ব। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পবিত্র কোরআনে দাঈ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি’। (সুরা আহজাব-৩৩:৪৬)।

মানুষকে আল্লাহর পথে আসার দাওয়াত জানায় তাবলিগ জামাত। দাওয়াত শব্দটির আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা। ইসলামে বিপথগামী মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানোকে দাওয়াত বলা হয়।

মানুষকে আল্লাহর পথে আসার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তাবলিগ জামাত শুদ্ধ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। এ শিক্ষা বিস্তারে তাবলিগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে আজ ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। আগামী রবিবার তা শেষ হবে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে। আখেরি মোনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে দোয়া করা হবে। বিশ্ব ইজতেমায় সমবেত মুসল্লিরা তাদের দাওয়াতি কাফেলাকে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে মহান আল্লাহর সহায়তা চাইবেন। তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে যারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন তারা হলেন মহান স্রষ্টা কর্তৃক উল্লিখিত সেসব বান্দা, যাদের কথা সুরা আলে ইমরানের ১০৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন এক দল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে, এরাই সফলকাম।’ বিশ্ব ইজতেমা হলো ওই দাওয়াতদাতাদের ইজতেমা।

দাওয়াত ও তাবলিগের মূলনীতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আপনি পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভালো জানেন তাদের, যারা সঠিক পথে আছে। (সুরা নাহল : ১২৫)।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুসারীদের দাওয়াতি মেহনতে নিয়োজিত হওয়ার দিকনির্দেশনা দান করেছেন। বুখারি ও মুসলিম শরিফে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার কর, রূঢ় আচরণ কর না, সুসংবাদ দাও, ভীতসন্ত্রস্ত কর না।’ মূলত কীভাবে দীনের দাওয়াত হবে তার গাইডলাইন বর্ণিত হয়েছে ওই হাদিসে। আল্লাহর প্রকৃত প্রেমিকরা জান ও মাল উৎসর্গ করে তাবলিগের মেহনতে নিজেদের নিয়োগ করেন। আল্লাহ ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পথে সবাইকে আসার জন্য আহ্বান করেন তারা। তারা ফরজ হুকুমগুলো যথাযথভাবে পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন, রসুলের সুন্নাত ভুলে গিয়ে যারা বিপথে চলছে, কিংবা সিদ্ধান্তহীনতায় হাবুডুবু খাচ্ছে, তাদের সঠিক পথের দিশা দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। জগদ্বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের বুুজুর্গ হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পথে আনার জন্য যে মেহনত শুরু করেন তা আজ দীন প্রতিষ্ঠার মহাআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তাবলিগ জামাত পথভোলা মানুষকে আল্লাহ ও রসুলের পথের সন্ধান দেওয়া ও বিপথগামীদের সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। মানুষকে গোনাহ থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করছে তাবলিগ জামাত। সৎ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেও তারা মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করছেন। বিশ্বে শান্তি ও সহমর্মিতার পরিবেশ সৃষ্টিতেও অবদান রাখছে হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর প্রতিষ্ঠিত এই জামাত।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর