দেশজুড়েই কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এদের পেছনে রাজনৈতিক টাউটদের ইন্ধন থাকায় তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। কিশোর অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। কিশোর অপরাধীদের অভয়ারণ্য রাজধানী-লাগোয়া গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার ঘণ্টাখানেক পর ‘ইমারজেন্সি সাইরেন’ বাজিয়ে মহড়া দিচ্ছিল প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেলে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে ছিল দুই থেকে তিনজন করে কিশোর। তাদের হাতে ছিল রামদা, হকিস্টিক, লাঠিসহ দেশি-বিদেশি অস্ত্র। হঠাৎ করেই ওই মহড়া থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। একটি গুলি লাগে এক সৌদি প্রবাসীর ফ্ল্যাটে। গুলির আঘাতে ছিদ্র হয় জানালার কাচ। আরেকটি গুলি বিদ্ধ হয় একই এলাকার এক কলেজশিক্ষকের জানালায়। এ ঘটনার এক দিন আগে এমন আরেকটি মহড়া থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মধুবাগ এলাকায় খুন হয় কিশোর আশিক মিয়া (১৪)। ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে আশিক খুন হয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের মা শাহনাজ বেগম। বলেছেন, হত্যাকান্ডে এলাকার অন্তত ১১ জন বখাটে জড়িত। এই কিশোর গ্যাংয়ের কারণে মধুবাগসহ আশপাশের এলাকার অনেকেই অতিষ্ঠ। পুলিশ বলছে, যাদের নাম এসেছে তাদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। সারা দেশে বখাটে বা কিশোর গ্যাংয়ের যে যাচ্ছেতাই কান্ড চলছে শ্রীপুর ও মধুবাগের ঘটনা তারই উদাহরণ। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ভাবার অবকাশ নেই। কিশোর গ্যাংয়ের কাছে জিম্মি সিংহভাগ জনপদ। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামেও তাদের অবাধ রাজত্ব। কিশোর গ্যাং বা বখাটেদের দৌরাত্ম্যে দেশের গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়। বাল্যবিয়ের পেছনেও যা ইন্ধন জোগায়। দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য কিশোর গ্যাংয়ের যমদূতরা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষের শান্তি ও স্বস্তিতে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর হবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।