শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইখলাসের সঙ্গে আমল করুন

মো. আমিনুল ইসলাম

ইখলাসের সঙ্গে আমল করুন

‘ইখলাস’ একটি আরবি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলো- সততা, আন্তরিকতা, বিশুদ্ধতা, বিশ্বস্ততা। ইসলামী পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজ করাকে ইখলাস বা সহিহ নিয়ত বলে। আমাদের ইবাদত-বন্দেগি সবকিছু আল্লাহর জন্যই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি নিষ্ঠার সঙ্গে সেই সার্বভৌম মালিকের দিকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি,  যিনি এ আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সুরা আল আনয়াম, আয়াত ৭৯)। আমাদের জীবন দুনিয়া নয় পরকালকেন্দ্রিক হতে হবে। কারণ এ দুনিয়ায় আমরা স্বল্প দিনের বাসিন্দা। এ মায়াময় দুনিয়া ছেড়ে আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। তাই আমাদের আমলগুলো হতে হবে পরকালকে কেন্দ্র করে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরকালের কল্যাণের ফসল কামনা করে আমি তার জন্য তা বাড়িয়ে দেই, আর যে ব্যক্তি শুধু দুনিয়ার জীবনের ফসল কামনা করে আমি তাকে অবশ্য দুনিয়ায় তার কিছু অংশ দান করি, কিন্তু পরকালে তার জন্য সে ফসলের কোনো অংশ থাকে না।’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত ২০)। ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করার জন্য আল্লাহ বলেন, ‘এদের এ ছাড়া আর কিছুরই আদেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর জন্যই নিজেদের দীন ও ইবাদত নিবেদিত করে নেবে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দান করবে আর এটিই হচ্ছে সঠিক জীবন বিধান।’ (সুরা বাইয়্যেনাহ, আয়াত ৫)। আমাদের ইবাদতগুলো হতে হবে ইখলাসসহ এবং শিরকমুক্ত। আল্লামা সাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘মানুষের ইবাদত ও আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পাঁচটি কাজ করা অত্যাবশ্যক। ১. আল্লাহর পরিচয় জেনে আমল করা, ২. হক বা সত্য সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে আমল করা ৩. ইখলাস বা একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমল করা ৪. রসুল (সা.) এর সুন্নত মোতাবেক আমল করা, ৫) হালাল খাদ্য গ্রহণ করে আমল করা। (কুরতুবি)। হাদিসে এসেছে,  রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে আমল বা ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইখলাসের সঙ্গে করা হয় না, আল্লাহতায়ালা সে আমল কবুল করবেন না।’ (নাসাঈ)। আল্লাহ বলেন, ‘যে কোনো ব্যক্তি পার্থিব জীবন, চাকচিক্য তার প্রাচুর্য কামনা করে, তাহলে আমি তাদের সবাইকে তাদের কর্মগুলো এখানেই (পৃথিবীতে) আদায় করে দেই এবং সেখানে তাদের পাওনা মোটেই কম করা হবে না।’ (সুরা হুদ, আয়াত ১৫)। এজন্যই আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে অনেক জায়গায় ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ইখলাসবিহীন আমল মূল্যহীন। রসুল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা যখন মানুষকে একত্র করবেন, তখন একজন ঘোষণাকারী এই মর্মে ঘোষণা করবে- যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত কাজে অন্য কাউকে তাঁর সঙ্গে শরিক করেছে সে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে সেই শরিকের কাছ থেকে প্রতিদান বুঝে নেয়। কেননা আল্লাহতায়ালা সব ধরনের অংশীদার ও অংশীদারিত্ব থেকে মুক্ত।’ (ইবনে মাজাহ)। সুতরাং আমল কবুলে ইখলাসের গুরুত্ব অনুধাবন করে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে আমাদের জীবন গড়া উচিত। আল্লাহ বলেন, আমি এ কিতাব তোমার কাছে যথার্থভাবেই নাজিল করেছি, অতএব তার জন্য একান্ত নিষ্ঠাবান হয়ে তুমি আল্লাহতায়ালার ইবাদত কর। জেনে রাখো একনিষ্ঠ ইবাদত আল্লাহতায়ালার জন্যই।’ (সুরা জুমার, আয়াত ২-৩)।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা সব আমলের মধ্যে শুধু সেই আমলটুকুই কবুল করেন, যা খালেসভাবে শুধু তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই করা হয়।’ (নাসাঈ শরিফ-৩১৪২)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো বান্দা যদি ইখলাসের সঙ্গে কালেমা লা ইলাহা ইল্লালাহ পাঠ করে, তবে তার জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি, ৬৮)। ইখলাস ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। সহিহ নিয়ত বা ইখলাসই হলো সব আমলের রুহ। রুহ ছাড়া যেমন শরীরের কোনো মূল্য নেই, তেমনি বিশুদ্ধ নিয়ত বা ইখলাস ছাড়া আমলেরও কোনো মূল্য নেই।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর