শিরোনাম
সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাননীয় শেখ হাসিনার উদ্দেশে এই লেখাটা

অধ্যাপক জীবেন রায়

মাননীয় শেখ হাসিনার উদ্দেশে এই লেখাটা

অনেক কাল আগে বাংলা একাডেমির বইমেলায় আমি, মিঠু ও আমাদের তিন বছরের মেয়ে ঋত্বিকা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে একাডেমি চত্বরে ঢুকব ভাবছিলাম। তখন আপনি ক্ষমতায় ছিলেন না। হঠাৎ একটা রিকশা থেকে আমাদেরই সামনে আপনি নামলেন। আমরা কিছুটা তথমত খেয়ে আদাব দিলাম। আপনি ঋত্বিকাকে আদর করে নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যার সঙ্গে এটুকুই আমার স্মৃতি।  আমি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলাম। পাঁচ বছর করার পর একসময় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমালাম। আমার এখনো মনে আছে, ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছিল। সেখানে গণস্বাস্থ্য, স্কয়ার, একমি থেকে চেয়ারম্যানসহ অনেকেই এসেছিলেন। ভাবতে পারিনি আমি এতটা পপুলার ছিলাম। ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছিলাম তো বটেই, ইন্ডাস্ট্রির কাছেও। দেশের বাড়িতে গেলে লোকজন আমাকে ঘিরে ধরত। আমি একজন দারুণ ইমোশনাল মানুষ। আমার কান্না এসে পড়ে।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি জেলে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে লন্ডন হয়ে ঢাকায় ফিরে আসার পথে ট্রাকের ওপরে দাঁড়িয়ে তোফায়েল আহমেদসহ অন্য নেতাদের জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। এত ভিড়েও আমি ট্রাকের পাশে থেকেই হাঁটছিলাম। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। সাধারণ ছাত্র। কোনো পলিটিক্সে ছিলাম না। কিন্তু চলে গেলাম এয়ারপোর্টে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে।

ছাত্র পলিটিক্সে না থাকলেও এনএসএফ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকলাপ দেখেছি। তখন আর এখনকার ছাত্র পলিটিক্সের মধ্যে বিরাট ফারাক। তখন ছাত্রনেতারা প্রেম করত কিন্তু ধর্ষণ করত না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তখনো তেমন একটা ধর্ষণের কথা শোনা যায়নি। আর এখন ছাত্র হলের ছাত্রনেতারা হলেরই ছাত্রীদের ধর্ষণ করার সাহস পায়। সাম্প্রতিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কথাই আমি বলতে চাচ্ছি। পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনে প্রচুর লেখালেখি এবং কথা বলাবলি হচ্ছে। এখনকার ছাত্রলীগ আয়তনে বিশালাকার। এত বড় যে, পরিসংখ্যান মতে দুর্নীতি, গুন্ডামি বা ধর্ষণকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগের ছেলেপেলেরা থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাছাড়া সদ্য একটা নির্বাচন হয়ে গেল। ছাত্রলীগের প্রয়োজনীয়তা আপনার কাছে অবশ্য আছে এবং থাকবে।

আমার কাছে অবাক লাগছে নির্বাচনে এত বড় জয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা! তাও আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় শিক্ষকতা করেছিলাম। মাননীয় শেখ হাসিনা, এদের রশিটা এখনই টেনে ধরতে হবে। আমি ‘কল্যাণকর একনায়কতন্ত্র’ একটি লেখায় আপনাকে সিঙ্গাপুরের এক সময়কার প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ানের সঙ্গে তুলনা করে বলেছি ভদ্রলোক ৩১ বছর টানা শাসন করেছেন। ছোট্ট জমিটাকে একটি উন্নত দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমরা চাই এই টার্মের পর আরও একটা টার্ম আপনি বাংলাদেশ শাসন করুন। সর্বোপরি, বাংলাদেশকে সোনার বাংলা তৈরি করে দিয়ে যান। আমি এই যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও বাংলাদেশকে ভুলি না কখনো। আমি এখানেও লোকাল একটি পত্রিকা, The Commercial Dispatch- এ প্রায়ই লিখে থাকি এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ প্রায়ই থাকে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ইলেকশনের পর প্রকাশিত একটি লেখার একটি প্যারাগ্রাফ তুলে দিলাম।

“My native country, Bangladesh had a general election on Jan. 7 where the main opposition party boycotted the election. They wanted the election to be held under a caretaker government. With this demand they started vigorous street protests that killed innocent people. Ultimately the government managed and succeeded in holding the election without the participation of the main opposition party, so the party in power got a walkover with a super majority in the new parliament. Neighboring India was happy with the outcome, but the U.S. showed their uneasiness. I am not sure why. The election was fair. The new government has alreadz been formed for another five years. Things are okay now in Bangladesh.”

অন্যভাবে বলা চলে আমি বাংলাদেশের একজন ভলান্টারি অ্যাম্বাসাডর হিসেবেই কাজ করছি। আর কয়েক দশক ধরেই মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় লিখছি। আমি বলব বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে র‌্যাব প্রশংসাযোগ্য কাজ করে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জনকে অ্যারেস্ট করেছে। এটা অবশ্যই যৌক্তিক কাজ হয়েছে। র‌্যাব অনেক বছর ধরেই প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে। এ বাহিনীকে ভালো বেতন দিন, যেন দুর্নীতিতে পা না বাড়ায় বরং জনগণের বন্ধু হয়। ডা. সামন্ত লালকে খুঁজে বের করেছেন যখন, এই ছাত্রলীগকে সুপথে আনার লোক পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে আমার ছোট্ট একটু চিন্তাভাবনার কথাটা বলে নিই। ঊনসত্তরের ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে তেমন কেউ বেঁচে নেই, বেঁচে থাকলেও দেশের কল্যাণে জড়িত নেই। আছে একমাত্র তোফায়েল আহমেদ। তাঁকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেই সঙ্গে একজন প্রাণবন্ত যুবক যে কাজটা করবেন, আমার মতে তিনি হলেন ব্যারিস্টার সুমন, যিনি স্বতন্ত্র হিসেবে লক্ষাধিক ভোটে জিতেছেন। ভদ্রলোক আইনকানুন জানেন এবং একসময় যুবলীগে ছিলেন। কথাও বলতে পারেন ভালো। আপনার আওয়ামী লীগের চেয়েও এখন ছাত্রলীগকে সুপথে আনতেই হবে। তা না হলে এরা দুর্নীতি, খুনখারাবি, ধর্ষণ ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়বে।

পরিশেষে আমি আর একটি প্রসঙ্গ এনে এই লেখাটার ইতি টানছি। আপনি অনেক সময় গরিব, দুঃখী অথবা হঠাৎ এতিম হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের সাহায্য বা দায়িত্বভার নিয়ে থাকেন। এ কাজটা আমার জন্য দারুণ ইমোশনাল। কিন্তু আপনার পক্ষে এত এত ব্যবসায়ী বা সচ্ছল লোকজন থাকতে তাদের তো দেখি না মানে খবরে তেমন কিছু করতে দেখি না। আপনার একটি উদাহরণ অন্য হাজারোটা উদাহরণ তৈরি হতে হবে। গরিবি তো হটাতে হবে। গরিবি হটাও এবং দুর্নীতি হটাও-এই দুটো কাজ আপনাকে করতে হবে আপনার এ টার্মে।

আপনার প্রতি আমার প্রণাম রইল।

লেখক : অধ্যাপক, বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিভাগ, মিসিসিপি ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান, কলম্বাস, যুক্তরাষ্ট্র

সর্বশেষ খবর