শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আল্লাহকে সুন্দর নামে ডাকুন

মো. আমিনুল ইসলাম

আল্লাহকে সুন্দর নামে ডাকুন

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সে সব নামেই ডাক। আর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদের বর্জন কর। (সুরা আল আরাফ, আয়াত ১৮০)। এই আয়াতটিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, সব উত্তম নাম আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে। কাজেই তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। উত্তম নাম বলতে আমরা কী বুঝি? যেসব নাম গুণ বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতায় সর্বোচ্চ স্তরকে চিহ্নিত করে তাই উত্তম, যা একমাত্র মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্যই নির্দিষ্ট। তাঁকে ছাড়া কোনো সৃষ্টির পক্ষে এই স্তরে উন্নীত হওয়া সম্ভব নয়। আসমাউল হুসনা বা উত্তম নামসমূহ একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিনের বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য অন্য কারও পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়। সুতরাং আল্লাহকে যখন আমরা স্মরণ করব বা তাঁকে ডাকব তখন এসব উত্তম নামে ডাকাই উচিত ও আমাদের কর্তব্য। দোয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে ডাকা বা আহ্বান করা। কোরআনে এ শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহার করা হয়। একটি হলো আল্লাহর জিকির, প্রশংসা করা যা ইবাদতগত দোয়া নামে খ্যাত, আর অন্যটি হলো অভীষ্ট বিষয় প্রার্থনা এবং বিপদাপদ থেকে মুক্তি আর সব জটিলতার নিরসনকল্পে সাহায্যের আবেদন সম্পর্কিত।

রসুল (সা.) যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন তখন আল্লাহর সুন্দর সুন্দর বিভিন্ন নামে তাকে ডেকে তাঁর কাছে দোয়া করতেন। একইভাবে তিনি তাঁর সাহাবিদের আল্লাহর বিভিন্ন নাম শিক্ষা দিয়েছেন এবং এসব নামে তাঁকে ডেকে দোয়া করার উপদেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, যে আল্লাহর ৯৯টি নাম মুখস্থ করে রাখবে এবং তাঁকে এই নামসমূহের মাধ্যমে স্মরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম শরিফ)। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মাধ্যমে তাঁর পরিচয় ও ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। মানুষ আল্লাহর নানা গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পারে। তা মানুষকে উত্তম চরিত্রবান হতে অনুপ্রাণিত করে। রসুল (সা.) ও সাহাবাগণ আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব জ্ঞাপক নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ রব্বুল আলামিনকে ডাকতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল (সা.)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল। যখন সে রুকু, সিজদা ও তাশাহুদ পড়ে দোয়া করতে শুরু করল তখন সে তার দোয়ায় বলল, হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, এই অসিলায় যে, সব প্রশংসা তোমারই, তুমি ব্যতীত সত্য উপাস্য নেই। তুমি পরম অনুগ্রহদাতা, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। হে মহিমাময় এবং মহানুভব, হে চিরঞ্জীব অবিনশ্বর। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। (তিরমিজি শরিফ ৩৫৪৪)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালার ৯৯টি নাম রয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি এগুলোকে আয়ত্ত করে নেয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারি ৬৪১০)। আল্লাহ বলেন, আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই যখন সে আমাকে ডাকে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)। মানুষের জীবনে বিপদাপদ, সংকট, অসুস্থতা সব সময়ই থাকে। সুতরাং তাকে সব সময় আল্লাহর স্মরণে দোয়া করা আর সাহায্য প্রার্থনা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহকে তাঁর গুণবাচক নামে ডাকা তার প্রধান কর্তব্য। হাদিসে বর্ণিত আছে, দোয়াই হলো ইবাদত। (আবু দাউদ ১৪৭৯)। সে জন্য রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা, পেরেশানি, কিংবা কোনো জটিল বিষয়ের সম্মুখীন হবে, তার জটিলতা সহজ করার জন্য এভাবে আল্লাহর দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করবে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি মহান, সহনশীল। তিনি আরশের মালিক। মহান প্রতিপালক। তিনি আসমান ও জমিনের প্রতিপালক। (বুখারি ৬৩৪৫)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সুরা আল মোমেন, আয়াত ৬০)। সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে আহ্বান করে যে কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার আহ্বানে সাড়া দেবে না। আর এ অবস্থা তো এ রকম যে এসব কিছু তাদের আহ্বান সম্পর্কে অবহিতও নয়। যখন কেয়ামতের দিনে মানুষকে একত্রিত করা হবে, তখন সেগুলো হবে এদের শত্রু এবং এরা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে। (সুরা আল আহকাফ, আয়াত ৫-৬)।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর