বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নবীদের মাতৃভাষায় আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে

আবদুর রশিদ

দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বিশ্বের অন্তত ২০ কোটি মুসলমান এ ভাষায় কথা বলে। আরবি ভাষার পর বাংলাভাষী মুসলমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলা যেহেতু আমাদের মাতৃভাষা সেহেতু এ ভাষার প্রতি আমাদের মমত্ববোধ থাকতে হবে। মাতৃভাষাকে ভালোবাসা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অনুসরণীয়। কারণ রসুল (সা.) তাঁর মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ করতেন। বিশুদ্ধভাবে মাতৃভাষা আরবি চর্চায় তিনি ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে। দুনিয়ার কোনো ভাষাকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহ সব ভাষার স্রষ্টা। আল্লাহ সব ভাষাই জানেন এবং যে ভাষায়ই তাঁকে ডাকা হোক না কেন তিনি বোঝেন। দুনিয়ায় যে শত শত ভাষা রয়েছে তা আল্লাহর বিশেষ কুদরত। যুগে যুগে মহান আল্লাহ তাঁর নবী-রসুলের স্বজাতির ভাষায় পারদর্শিতা দিয়ে পাঠিয়েছেন, যাতে তাঁরা তাঁদের উম্মতদের সহজে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতে পারেন। উম্মতরা তাঁদের কথা বুঝতে পারে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি রসুলদের তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে তাদের (দীন) স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে।’ সুরা ইবরাহিম আয়াত ৪।

হজরত আদম (আ.) ছাড়া অন্য সব নবী-রসুলের প্রতি আল্লাহর প্রত্যাদেশ বা আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে তাঁদের মাতৃভাষায়। ভাষাবৈচিত্র্যের এ অপার মহিমার প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ রব্বুল আলামিন সুরা রুমের ২২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ আল কোরআন মাতৃভাষার মর্যাদা মহিমান্বিত করেছে। সুরা ইবরাহিমের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সব নবীকে তাঁদের স্বজাতির ভাষায় পাঠানোর কথা বলেছেন; যাতে তাঁরা আল্লাহর কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। মিশকাতের হাদিসে রসুল (সা.) আরবিভাষী হিসেবে যে গর্ববোধ করতেন তা স্পষ্ট করা হয়েছে। আরবি ভাষা কোরআনের ভাষা। রসুল (সা.)-এর আগে যেসব নবী-রসুলের কাছে আল্লাহর ওহি প্রেরিত হয়েছে তা-ও তাঁদের মাতৃভাষায়। হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর নাজিল হয়েছিল আসমানি কিতাব তাওরাত হিব্রু ভাষায়। হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর নাজিলকৃত জবুর ছিল ইউনানি ভাষায়। হজরত ইসা (আ.)-এর ওপর নাজিলকৃত ইনজিলের ভাষা ছিল সুরিয়ানি। আমরা আখেরি নবী (সা.)-এর উম্মত। তাঁর ওপর নাজিলকৃত কোরআনের ভাষা হিসেবে আরবি দুনিয়ার সব মুসলমানের কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহর ইবাদতের জন্য মুসলমান হিসেবে আমরা আরবি ভাষার মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য। একইভাবে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনে মাতৃভাষা বাংলার বাইরেও যে কোনো ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। দুনিয়ার সব ভাষা যেহেতু আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর মহান নিয়ামত তাই কোনো ভাষাকে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে।

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর