বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

একুশে ফেব্রুয়ারি

স্বাধীনতার সূতিকাগার

ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনের অনুষঙ্গ। বায়ান্ন সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে রোপণ হয়েছিল স্বাধীনতার বীজ। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি রক্ত দিয়েছিল সালাম, বরকত, রফিকসহ শফিক বাংলা মায়ের সেরা সন্তানরা। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বিকশিত হয় বাঙালির স্বাধিকার চেতনা। সত্তরের নির্বাচনে অবয়ব পায় যার চূড়ান্ত রূপ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সে অবিনশ্বর চেতনা বাঙালির জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। ভাষা শহীদদের এই দিনটি এখন জাতিসংঘের উদ্যোগে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। দুনিয়ার দেশে দেশে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার সমুন্নত রাখার শপথ নেওয়া হয় এই দিনে। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার যে একটি মানবাধিকার তাও স্বীকৃত এখন আন্তর্জাতিকভাবে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বাঙালি মুসলমানরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অচিরেই ভারত থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা উর্দুভাষী রাজনীতিক, আমলা ও সেনাপতিদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে পাকিস্তান। দেশের শতকরা পাঁচ ভাগ মানুষ উর্দুভাষী না হলেও তারা সে ভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার ধৃষ্টতা দেখায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতেও অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তানের ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী শাসকরা। ছাত্রসমাজ এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পাকিস্তানি পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। একুশের শহীদদের রক্তদান অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস জুগিয়েছে। এ সাহসই ছিল ১৯৭১ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। মহান মুক্তিযুদ্ধেও তা পথপ্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এই প্রেরণাকে বুকে লালন করতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা প্রতিষ্ঠার দায় পূরণেও উদ্যোগী হতে হবে। অমর একুশের এই দিনে ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। শহীদ স্মৃতি অমর হোক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর