শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রূপচাঁদা মাছের পুষ্টিগুণ

নজরুল ইসলাম

রূপচাঁদা মাছের পুষ্টিগুণ

রূপচাঁদা একটি সামুদ্রিক মাছ। এই মাছের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি। রূপচাঁদা মাছের মধ্যে থাকা এই উপাদানগুলো আমাদের অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে। আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে উন্নত করার জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড অপরিহার্য।  এ ছাড়াও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং হৃদরোগও কমায়।

রূপচাঁদা মাছ একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছ। প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি। এটি আমাদের শরীরের হাড়, পেশি, কার্টিলেজ এবং ত্বকের ব্লক তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়াও এটি আমাদের টিস্যু মেরামতে কার্যকর, এনজাইম তৈরি করে এবং খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে। রূপচাঁদা মাছের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের এনজাইম ফাংশন বজায় রাখে। তাই রূপচাঁদা মাছ পরোক্ষভাবে আমাদের হজম সিস্টেমের কার্যক্রমকেও প্রভাবিত করে। রূপচাঁদা মাছে থাকা আয়রন আমাদের শরীরে হেমাটোপয়েসিসের জন্য একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান।

রূপচাঁদা মাছের উপকারিতা :

১. রূপচাঁদা মাছ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক পদার্থগুলোর মধ্যে একটি হলো রূপচাঁদা মাছের ভিতরের তেল। এই মাছ এবং এই মাছের তেল স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের জন্য রূপচাঁদা মাছ খুবই কার্যকরী।

২. রূপচাঁদা মাছ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রূপচাঁদা মাছের মধ্যে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রূপচাঁদা মাছ আমাদের হৃৎযন্ত্রের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ হলো রক্তনালিতে দাগ। রূপচাঁদা মাছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় দাগগুলো বিকাশ থেকে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।

৩. রূপচাঁদা মাছ আমাদের রক্তশূন্যতা দূর করে। রূপচাঁদা মাছে আয়রন আছে। আয়রনের কাজ হলো পুনরায় হিমোগ্লোবিন তৈরি এবং পুনরুৎপাদন করতে সহায়তা করা। HB হিমোগ্লোবিন এরিথ্রোসাইট (লোহিত রক্তকণিকা) এর স্বাভাবিকতা নির্ধারণের দায়িত্বে নিয়োজিত, যা আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

৪. রূপচাঁদা মাছ আমাদের স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে। রূপচাঁদা মাছে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড স্ট্রোক প্রতিরোধে খুবই উপকারী। রূপচাঁদা মাছ ২১% পর্যন্ত স্ট্রোক ইমালসন এবং ৫০% পর্যন্ত স্ট্রোকের তীব্রতা হ্রাস করতে সক্ষম। এ ছাড়াও স্ট্রোক প্রতিরোধের পাশাপাশি রূপচাঁদা আমাদের স্নায়ুর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

৫. রূপচাঁদা মাছ আমাদের শরীরের ইমিউনসিস্টেমকে শক্তিশালী করে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া রূপচাঁদা মাছ দ্বারা উৎপাদিত ভিটামিন ডিতে থাকা ক্যালসিট্রিওলের উপাদান ইমিউনসিস্টেম মডুলেটরের জন্যও কাজ করতে পারে।

৬. রূপচাঁদা মাছ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। স্তন ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা নিরাময় খুবই কঠিন। সুতরাং এই ক্যান্সার এড়াতে হলে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। এই পদক্ষেপ অনেক উপায়ে নেওয়া যায়। যেমন নিয়মিত রূপচাঁদা মাছ খাওয়া। রূপচাঁদা মাছ ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

৭. রূপচাঁদা মাছ আমাদের অস্টিও ম্যালেশিয়া রোগ দূর করে। অস্টিও ম্যালেশিয়া এমন একটি রোগ, যা মানবদেহের টিস্যুকে আক্রমণ করে। এই রোগটি আমাদের হাড়কে দুর্বল করে এবং  খুব সহজেই ভাঙতে সাহায্য করে। এই রোগের সমাধান হলো নিয়মিত রূপচাঁদা মাছ খাওয়া। কারণ রূপচাঁদা মাছে প্রচুর ভিটামিন ডি রয়েছে।

লেখক : মৎস্য গবেষক

সর্বশেষ খবর