শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

লাইলাতুল বরাতের ফজিলত

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

লাইলাতুল বরাতের  ফজিলত

হিজরি সনের অষ্টম মাস পবিত্র ‘শাবান’ মাস। এ মাসটি পেরোলেই শুরু হয় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পবিত্র রমজানুল মোবারক। রমজানের আগের দুটি মাস রজব ও শাবানজুড়ে রসুল (সা.) বেশি বেশি নফল ইবাদত ও রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতেন। বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের কারণে এ মাসটিকে ‘শাবানুল মুআজ্জম’ বলা হয়। এর অর্থ, মহান শাবান মাস।

পবিত্র লাইলাতুল বরাত এক মহিমান্বিত রাত। ১৫ শাবান অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক হাদিস রয়েছে। এ বরকতময় রাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো উত্তম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে।

বরকতময় ওই পাঁচটি রাত হলো-১. জিলহজের অষ্টম রাত। ২. জিলহজের নবম রাত। ৩. ঈদুল আজহার রাত। ৪. ঈদুল ফিতরের রাত। ৫. শাবানের ১৫ তারিখের রাত। (আত্তারগিব ওয়াত্তারহিব)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৫ শাবানের রাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিছানায় পেলাম না। তাই তাঁকে খোঁজার উদ্দেশে বের হলাম। দেখতে পেলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, ‘তুমি কি এই আশঙ্কা করছ যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসুল তোমার সঙ্গে অবিচার করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি ধারণা করছিলাম, আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে তাশরিফ নিয়েছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শাবানের ১৫ তারিখ রাতে মহান আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আসমানে তাশরিফ আনেন এবং বনু কালব গোত্রের ভেড়া-বকরির পশুগুলোর পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন।’ (তিরমিজি ইবনে মাজাহ, বায়হাকি, মুসনাদে আহমদ)। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস শাবানের ১৫ তারিখের রাতে নফল ইবাদতের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হজরত আলী (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শাবানের রাত যখন উপস্থিত হয় তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে রোজা রাখ। কেননা আল্লাহপাক এ রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী কি নেই? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব, কোনো জীবিকা প্রার্থী কি নেই? আমি তাকে জীবিকা দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত কি নেই? আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেব। এভাবে ভোররাত পর্যন্ত ঘোষণা চলতে থাকে। (ইবনে মাজাহ)। লাইলাতুল বরাতে রাত জেগে নফল ইবাদত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। তিনি এ পবিত্র রাতে বেশি ইবাদত ও দোয়া করতেন, কবর জিয়ারত করতেন। লাইলাতুল বরাতের নামাজের জন্য বিশেষ আলাদা কোনো পদ্ধতি নেই। অন্য সব নামাজের মতোই এ রাতে নামাজ পড়া যায়। দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করা উত্তম।

ঐতিহাসিকদের নির্ভরযোগ্য তথ্যানুসারে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে নামাজ আদায়ের পরিবর্তে পবিত্র কাবা ঘরের দিকে নামাজ পড়ার নির্দেশনা এবং রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত অসাধারণ দুটি বিধান এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। এ মাসে বিশেষ ইবাদতের অন্যতম হলো যথাসাধ্য বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। এ ছাড়া এ মাস হলো আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার মাস। রসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী বিশেষ একটি দোয়া করতেন ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। ‘হে আল্লাহ! রজব মাস এবং শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন, আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

এ পবিত্র রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-ইস্তিগফার ইত্যাদি নেক আমল যতটা সম্ভব হয় আদায় উত্তম।

লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর