ইতিহাসের মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি, একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদের হতে হবে। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ এবং ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে মহান ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেন; এরপর স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের পথ বেয়ে সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি আদায় করে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সুদীর্ঘ পথ বেয়ে গণরায় নিয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতারূপে আত্মপ্রকাশ করেন; পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানামুখী টালবাহানা ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক গণহত্যা চাপিয়ে দেওয়ার কারণে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় অর্জিত স্বাধীনতা ঘোষণার রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে একচ্ছত্র নেতৃত্ব প্রদান করে ৩০ লক্ষাধিক প্রাণ আর ২ লক্ষাধিক মা-বোনের সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলার দুঃখীমানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য পাঁচটি মৌলিক অধিকার-অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সাংবিধানিকভাবে বিধিবদ্ধ করেন। যে কারণে আমরা বলি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গঠিত গণরায়ে নির্বাচিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংবিধানে বিধিবদ্ধ পাঁচটি মৌলিক অধিকার দেশের মানুষের কল্যাণে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট সোনার বাংলা’য় রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান।
প্রতি বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি গভীরভাবে স্মরণ করি। দিনটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। ১৯৬৯-এর এই দিনে বাংলার দুঃখী মেহনতি মানুষের বন্ধু, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতাকে জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এ বছর বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রাপ্তির ৫৫তম বার্ষিকী। বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ’৬৯-এর গণ আন্দোলন এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কালপর্বটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘ড্রেস রিহার্সেল’। জাতির মুক্তিসনদ ছয় দফা দেওয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ গণ্য করে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সর্বমোট ৩৫ জনকে ফাঁসি দেওয়ার লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করা হয় এবং নির্বিঘ্নে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহণের এক ঘৃণ্য মনোবাসনা চরিতার্থে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। আগরতলা মামলার বিচার যখন শুরু হয় তখন আমরা জাগ্রত ছাত্রসমাজ উপলব্ধি করি বঙ্গবন্ধুকে যদি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয় তাহলে চিরদিনের জন্য বাঙালির কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে। কেননা এই একটি কণ্ঠে কোটি কণ্ঠ উচ্চারিত হয়। তাই আমরা ’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে চার ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরম ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন এবং ছয় দফাকে হুবহু যুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করি। ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জমায়েত অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় এবং পূর্ব ঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম, ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তাক্ত জামা হাতে নিয়ে যে শপথ নিয়েছিলাম, ২৪ জানুয়ারি শহীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন সর্বব্যাপী গণ অভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে শপথ দিবসে সেøাগান দিয়েছিলাম ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মা-গো তোমায় মুক্ত করব।’ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে সান্ধ্য আইন জারি করা হলে সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি সেনারা বেয়নেট চার্জে নির্মমভাবে হত্যা করে পুনরায় সান্ধ্য আইন জারি করলে যথারীতি আমরা সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখি। ২০ ফেব্রুয়ারি সমগ্র ঢাকা নগরীকে মশাল আর মিছিলের নগরীতে পরিণত করলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে পল্টনের মহাসমুদ্রে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম প্রদান করি। সমগ্র দেশ গণবিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়। জনরোষের ভয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিলে দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রিয় নেতাকে কারামুক্ত করার মধ্য দিয়ে শপথ দিবসের স্লোগানের প্রথম অংশ ‘মুজিব তোমায় মুক্ত করব’ এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে হাতিয়ার তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করে সেøাগানের দ্বিতীয় অংশ ‘মা-গো তোমায় মুক্ত করব’ বাস্তবায়ন করেছিলাম। বস্তুত ’৬৬-এর ৮ মে’র গভীর রাতে ছয় দফা কর্মসূচি প্রদানের অভিযোগে দেশরক্ষা আইনে যে মুজিব গ্রেফতার হয়েছিলেন, ৩৩ মাস পর ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি যে মুজিব মুক্তি লাভ করেন, নাম বিচারে এক হলেও বাস্তবে ওই দুই মুজিবের মধ্যে ছিল গুণগত ফারাক। আগরতলা মামলাটি ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য অগ্নিপরীক্ষার মতো। সেই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে আসেন। ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই, প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা জানাব। সে সিদ্ধান্ত অনুসারেই রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে-ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ। একেকটি আন্দোলনের একেক রকম চারিত্র্যবৈশিষ্ট্য ছিল। ’৬৯-এর গণ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যে, তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিচারের কাজ চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে আগরতলা মামলা দায়ের করে ’৬৮-এর ১৯ জুন বিচারের কাজ শুরু হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য আইয়ুব খান পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। আইয়ুব খানের তথ্য সচিব আলতাফ গওহর ‘আইয়ুব খান’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। সে বইয়ে উল্লেখ আছে কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ’৬৯-এর গণ আন্দোলনের শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ সেই ষাড়যান্ত্রিক প্রচেষ্টা সমাধিস্থ করে এবং আসাদ-মতিউর-মকবুল-রুস্তম-আলমগীর-সার্জেন্ট জহুরুল হক-আনোয়ারা-ড. শামসুজ্জোহার জীবনের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আন্দোলন সফল হয়। জানুয়ারির শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জের এক জনসভায় দম্ভোক্তি করে আইয়ুব খান বলেছিলেন তিনি আবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবেন। অথচ ১৭ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু হলো, ২০ জানুয়ারি আসাদ শহীদ হলেন, ২৪ জানুয়ারি শহীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হলে সর্বব্যাপী গণ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং সেই আইয়ুব খান এক দিন পরই বলেছেন, ‘আমি আর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।’ একটি আন্দোলন সাত দিনের মধ্যে গণ অভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়-ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে, ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে! এর তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ, যাদের রক্তঋণে গোটা জাতি ঋণী, তাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ভোলায় নিজ গ্রামে ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেছি। সেই জাদুঘরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে শহীদ সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের স্মৃতি, মহান ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ আন্দোলন, শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনকের দুর্লভ সব আলোকচিত্র সেখানে স্থান পেয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এই বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্ববরেণ্য মহান নেতা। তাঁর কোনো তুলনা হয় না। তিনি জন্মেছিলেন বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তিনি যদি না জন্মাতেন আমরা আজও পাকিস্তানের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ থাকতাম। সেই মহান নেতা তাঁর জীবদ্দশায় সব সময় এ দিনগুলোর কথা সংবাদপত্রে বাণী, বিবৃতি দিয়ে শহীদদের কথা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করতেন। কেননা, তিনি জানতেন ছয় দফা আন্দোলন না হলে ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান হতো না; ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান না হলে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারতাম না; বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্ত না হলে ’৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানে আমরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারতাম না; আর পাকিস্তানে যদি আমরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারতাম, তাহলে নয় মাস যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্রসমাজের যে ভূমিকা তা গৌরবোজ্জ্বল।
বছর ঘুরে এমন একটি মধুর দিন যখন ফিরে আসে হৃদয়ের মানসপটে কত স্মৃতি ভেসে ওঠে। আমরা সংখ্যাসাম্যের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরুর অবস্থান থেকে ‘এক মাথা এক ভোটে’র দাবি তুলে তা আদায় করেছিলাম। ফলত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাধিক্য আসন আমরা লাভ করেছিলাম। এদিনের প্রতিটি মুহূর্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে মনে পড়ে। সেদিন বক্তৃতায় আরও বলেছিলাম, ‘ছয় দফা ও ১১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আমরা ফিরে পেয়েছি। তাদের সে রক্ত যেন বৃথা না যায়, তার জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ সব মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য এ আন্দোলন শুরু হয়েছে।’ বক্তৃতা শেষ করে ঘোষণা করেছিলাম, ‘এখন বক্তৃতা করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।’ তুমুল করতালির মধ্যে তিনি বক্তৃতা করতে দাঁড়ালেন। চারদিকে তাকিয়ে উত্তাল জনসমুদ্রের উদ্দেশে বললেন, “রাতের অন্ধকারে সান্ধ্য আইনের কঠিন বেড়াজাল ছিন্ন করে যে মানুষ ‘মুজিবকে ফিরিয়ে আনতে হবে’ বলে আওয়াজ তুলে গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তাদের দাবির সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।” সংগ্রামী ছাত্রসমাজকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ছাত্রদের ১১ দফা শুধু সমর্থনই করি না, এর জন্য আন্দোলন করে আমি পুনরায় কারাবরণে রাজি আছি। ছাত্রদের ১১ দফার মধ্যে আমার ছয় দফা দাবিও নিহিত রয়েছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি যদি এ দেশের মুক্তি আনতে ও জনগণের দাবি আদায় করতে না পারি, তবে আন্দোলন করে আবার কারাগারে যাব।’ সেদিন বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘আমি গোলটেবিল বৈঠকে যাব, সেখানে আমার ছয় দফাও পেশ করব, ১১ দফাও পেশ করব।’ তিনি জীবদ্দশায় কোনো দিন ১১ দফার কথা ভোলেননি। তাঁর বক্তৃতায় সব সময় ’৬৯-এর গণ আন্দোলনের কথা থাকত। এমনকি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে আছে, ‘১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন, আমরা মেনে নিলাম।’ পরিশেষে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কৃতজ্ঞস্বরে বলেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, তোমরা যারা রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছ, যদি কোনো দিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাব।’ তিনি একা রক্ত দেননি, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবার রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির রক্তের ঋণ শোধ করে গেছেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিন। যতদিন বেঁচে থাকব হৃদয়ের গভীরে লালিত এ দিনটিকে স্মরণ করব।
লেখক : সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ