শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র শবেবরাত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র শবেবরাত

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত কে শবেবরাত বলা হয়। আরবিতে লাইলাতুল বারাআত, ও হাদিস শরিফে নিসফুম মিন শাবান বলা হয়েছে। অর্থাৎ মুক্তির রজনী। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হা মিম! শপথ উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী, যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। (সুরা দুখান আয়াত ১-৫) প্রখ্যাত মুফাসসিরগণের মতে, এখানে বরকতময় রাত বলে শবেবরাতকে বোঝানো হয়েছে। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে কুল মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে নাড়া দিলাম, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। তিনি সিজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কী আশঙ্কা হয়েছে? উত্তরে আমি বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রসুল ভালো জানেন। তখন নবীজি বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান) হজরত আয়েশা (রা.) আরও বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতে মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন, তিনি আরও বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের চেয়েও বেশি সংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহতায়ালা বিশেষভাবে ক্ষমা করে দেন (তিরমিজি ৭৩৯) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে, (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব, কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দান করব। আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে করে আহ্বান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)। এ রাত অত্যন্ত বরকতময় এবং এ রাতের অতিরিক্ত সমস্ত এবাদত নফল। তাই অতি বাড়াবাড়ি কারও জন্যই কাম্য নয়। সুতরাং এ রাতের বিশেষ নামাজ, নফল নিয়তে আদায় এবং পরের দিন নফল নিয়তে রোজা রাখবে। যেহেতু সহি হাদিস দ্বারা এই রাত বরকতময়, মুক্তির রজনী হিসেবে প্রমাণিত, সেহেতু এ রাতকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আহলে হাদিস সালাফিরা এ রাত সম্পর্কিত সব সহি হাদিসকে জাল-জয়িফ বলে নবীজির সহি হাদিসকেই তারা অস্বীকার করে যাচ্ছে এবং সব মুসলমানকে এই বরকতময় রাতের সব ফজিলত থেকে বঞ্চিত করছে ও ফিরিয়ে রাখছে। মূলত শিরক-কুফর ও বিদাতের ভয় দেখিয়ে মুসলমানদের এবাদতশূন্য করার পাঁয়তারা করছে।

 

লেখক : ইমাম ও খতিব কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর