রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পাকিস্তান : বিচিত্র রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

পাকিস্তান : বিচিত্র রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ

পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাস এক কথায় দুর্নীতি অশান্তি ও আন্দোলনের উপাখ্যান বলে অভিহিত করা যায়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ১৯০ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে। এরপর বিগত ৭৭ বছরের চালচিত্র মূল্যায়ন করলে দেখা যায় পাকিস্তানের রাজনীতি বরাবরই ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। এ ৭৭ বছরে সে দেশের জনগণ অধিকাংশ সময় হয় সেনাশাসক নয়, বিতর্কিত নেতাদের অপশাসন মেনে নিতে বাধ্য হয়। আর বরাবরই সেনাবাহিনী কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্রীয় যাবতীয় ক্ষমতা উপভোগ এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা আদায়ে তৎপর ও সফল ছিল।  আর পাকিস্তানি সেনাদের পরীক্ষিত দোসর হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় একই সময়ে পাকিস্তান ও ভারত একই ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের চতুর্থ বছরে (১৯৫১-১৯৫২) লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত পরিচিতি লাভ করে। পক্ষান্তরে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮-এ ১১ বছরে পাকিস্তানের জাতীয় পর্যায়ে সরাসরি কোনো নির্বাচন হয়নি। এ সময় স্থানীয় বা প্রদেশ পর্যায়ে কিছু নির্বাচন হলেও পাকিস্তানের খোদ নির্বাচন সংস্কার কমিশনই এসব নির্বাচনকে প্রহসন বলে ব্যাখ্যা করেছে। স্বাধীনতার ২২ বছর পর ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৩৩১ আসনের মধ্যে তৎকালীন পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ১৬৭টিতে জয় লাভ করে। সে মোতাবেক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র পাকিস্তানের সংসদীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। তবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চাপ ও বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির কূটচালে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হয়নি। ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তবে বাংলাদেশের এ স্বাধীনতার জন্য দিতে হয়েছে ৩০ লাখ মানুষের জীবন ও ২ লাখ নারীর সম্ভ্রম। পোড়ামাটি নীতির আলোকে অবকাঠামো ধ্বংসসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার এক করুণ সাক্ষী পাকিস্তানিদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ। হয়তো সেই পাপে আজও ভুগছে পাকিস্তান। বিগত ৭৭ বছরে পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পদ্ধতিতে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান হত্যাকান্ডের শিকার হন এবং দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন বরখাস্ত হন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর বদলে ক্ষমতায় আসা চৌধুরী মোহাম্মদ আলি অনাস্থা ভোট হেরে পদ ছাড়েন। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীও পদ ছাড়তে বাধ্য হন একাধারে সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল ও পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জার চাপে। ৫৫ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী চেয়ারে বসেছিলেন ইবরাহিম ইসমাইল চ-ীগড়। এর পরের জন ছিলেন ফিরোজ খান নূন। সপ্তম প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকেও সরানো হয় প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জার ইচ্ছায়। এরপর শুরু হয় জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, যা চলে প্রায় সাড়ে ১০ বছর। এক দশক পর সামরিক বাহিনী তাঁর পেছন থেকে সরে গেলে আইয়ুব খান পদত্যাগে বাধ্য হন। আমাদের স্বাধীনতালাভের সাত দিন আগে অর্থাৎ ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হন নূরুল আমিন, যার ক্ষমতার মেয়াদ ছিল মাত্র ১৩ দিন। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ থেকে মূলত জেনারেল ইয়াহিয়া খানই ছিলেন পাকিস্তানের কর্ণধার। নবম প্রধানমন্ত্রীরূপে জুলফিকার আলি ভুট্টোই কেবল দীর্ঘমেয়াদে প্রায় পাঁচ বছর (১৯৭৩-১৯৭৭) ক্ষমতায় ছিলেন। তবে ১৯৭৭ সালে তাঁকে সরিয়ে দেন সামরিক জান্তা জেনারেল জিয়াউল হক। একইভাবে পরবর্তী বা দশম প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ খান জুনেজোকেও গদিছাড়া করেন জেনারেল জিয়া। পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলি ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টো ১১তম প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৮৮ সালে। কিন্তু তাঁর মেয়াদ দুই বছর সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ক্ষমতা থেকে সরান সেনাবাহিনীর সমর্থিত দেশের প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান। মাঝে কিছুদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন শেষে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লীগের নেওয়াজ শরিফ। তিনি ১২তম প্রধানমন্ত্রীরূপে ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় আড়াই বছর পর সেনাচাপে ক্ষমতা ছাড়েন। ১৯৯৭ সালে চৌদ্দতম প্রধানমন্ত্রী হয়েও আড়াই বছরের মাথায় একইভাবে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। নওয়াজ শরিফ ২০তম প্রধানমন্ত্রীরূপে আবারও ফিরে আসেন ২০১৩ সালে। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির কারণে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণা করায় ২০১৭ সালে তিনি আবারও ক্ষমতাচ্যুত হন। নওয়াজ শরিফের এ তিন মেয়াদের মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো (১৯৯৩-১৯৯৬), মীর জাফর উল্লাহ খান জামালি (২০০২-২০০৪), চৌধুরী সুজাত হোসেন (২০০৪ সালে। মাত্র ৫৪ দিন), শওকত আজিজ (২০০৪-২০০৭), ইউসুফ রাজা গিলানি (২০০৮-২০১২) ও রাজা পারভেজ আশরাফ (২০১২-২০১৩)। এক নতুন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের ২১তম প্রধানমন্ত্রী হন শহিদ হাসান আব্বাসি (২০১৭-২০১৮)। আর প্রথা ভেঙে ক্ষমতায় আসেন ২২তম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে চার বছরের মাথায়। (২০১৮-২০২২) তাঁকেও ক্ষমতাছাড়া করা হয়। বিভিন্ন সময়ে উপস্থাপিত প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে অনেকে দাবি করেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ ক্ষমতাচ্যুতি মূলত রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর (ইমরানের) সখ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-প্রদত্ত শাস্তি। পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ খানের মেয়াদ ছিল এক বছর ১২৫ দিন (২০২২-২০২৩)। বর্তমানে দেশ চালাচ্ছেন পাকিস্তানের ইতিহাসের অষ্টম তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান আনোয়ারুল হক কাকার।

একটি দেশের ৭৭ বছরের এমন পথচলা দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এক করুণ প্রতিচ্ছবির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা। একটি দেশ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা প্রমাণ করতে না পারলে তাকে যে পরাশক্তির লেজুড়বৃত্তি করে বাঁচতে হয়, তারই প্রমাণ আজকের পাকিস্তান। আর সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিদেশিদের হাতে চলে যায়, তারও চড়া মূল্য দিতে হয় দেশকে, যেমনটি দিচ্ছে আজকের পাকিস্তান। ষাট ও সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) মধ্যকার শীতল যুদ্ধ চলাকালে বহু দেশকে বলির পাঁঠা হতে হয়েছে। তখন ভারতের মতো একটি বৃহৎ ও জনবহুল দেশে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক প্রভাব ছিল। তার বিপরীতে ভারতের পাশের পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) মার্কিনিরা তাদের নিজস্ব বলয় সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালায়। পাকিস্তানের উচ্চাকাক্সক্ষী ও লোভী কিছু জেনারেলের হাতের মুঠোয় নেওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পাকিস্তানে ভারত-রাশিয়া বিরোধী চেতনা উজ্জীবিত রাখা এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে বারবার ক্ষমতাচ্যুত করা সহজ হয়। শুধু তাই নয়, হত্যাসহ নানা অঘটনের জন্ম দেয় পাকিস্তানের সেনানিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এমন হত্যাকান্ড থেকে রেহাই পাননি স্বয়ং তাদের জেনারেলরাও। ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট পাকিস্তানের সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউল হক সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। একই বিমানের যাত্রী পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এমন্ড লুইস রাফেল্ড, পাকিস্তানি সেনা জেনারেল আকতার আবদুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিকসহ মোট ২৯ জন। ধারণা করা হয়, আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরোধিতাকারী মুজাহিদদের সহায়তা ও সমর্থনদানের বিপরীতে রাশিয়ার প্রতি-উত্তর ছিল এ পরিকল্পিত বিমান দুর্ঘটনা, যা পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য খর্ব করে রাশিয়ার অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা বলে চিহ্নিত হয়। এ ঘটনার তিন মাস পর বেনজির ভুট্টো প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন ২ ডিসেম্বর, ১৯৮৮। দুই বছর মেয়াদপূর্তির আগে সামরিক অভিযানের আদলে ‘অপারেশন মিডনাইট জ্যাকল’ (মধ্যরাতের শেয়াল) চালিয়ে ও অনাস্থা প্রস্তাব পাসের নাটক সাজিয়ে বেনজির ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ৬ আগস্ট, ১৯৯০। দ্বিতীয় মেয়াদে বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিন বছর (১৮ অক্টোবর, ১৯৯৩-৫ নভেম্বর, ১৯৯৬)। এ ক্ষেত্রেও মেয়াদপূর্তির আগে তিনি ক্ষমতা হারান। তাঁর পিতা ও পাকিস্তানের নবম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো ১৯৭৭ সালের ৩ জুলাই সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান। বিচারের নামে দুই বছরের মাথায় ৪ এপ্রিল, ১৯৭৯ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জুলফিকার আলি ভুট্টোর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে সামরিক জান্তারা। উল্লেখ্য, জুলফিকার আলি ভুট্টোর দুই পুত্রও অপমৃত্যুর শিকার হন, যদিও ধারণা করা হয়, অন্তত এক পুত্রের মৃত্যুর নেপথ্যে তারই ক্ষমতালিপ্সু বোন বেনজির ভুট্টোর হাত ছিল। অন্যদিকে বেনজির ভুট্টো ক্ষমতা হারানোর পর বিদেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির দায়ে জেলে যেতে হয় তাঁর স্বামী আসিফ আলি জারদারিকে। অসংখ্য দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ এবং দেশবিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া আসিফ আলি জারদারি ২০০৫ সালে ডেইলি পাকিস্তান পত্রিকার জরিপে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী নির্বাচিত হন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দুর্নীতির অভিযোগে একদা ‘মিস্টার টেন পারসেন্ট’ খেতাব পাওয়া এবং জেলখাটা ও দেশান্তরিত হওয়া আসিফ আলি জারদারি ২০০৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন! আবারও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অভিভাবক তথা রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন তিনি। আর প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মুসলিম লীগ নওয়াজের শাহবাজ শরিফ। নেপথ্যে থেকে সরকার চালাবেন শাহবাজের বড় ভাই পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িত নওয়াজ শরিফ। জারদারিপুত্র বিলাওয়াল ভুট্টোও থাকবেন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হিসেবে। যে কোনো মূল্যে ইমরান খানকে প্রতিহত করার আর কোনো রাস্তা না থাকায় এ পথই বেছে নিয়েছে পাকিস্তান রাজনীতির কুশীলবরা তথা যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গোষ্ঠী। একটি গল্প বলে শেষ করব। এক গ্রামে এক পেশাদার চোর ছিল। ধরা যাক নাম তোতা মিয়া।  তার উপদ্রবে অস্থির গ্রামবাসী। শেষ বয়সে তোতা মিয়া নিজের ছেলেকে (কাল্পনিক নাম নিলু মিয়া) ডেকে বলল, খবরদার বাবা! তুই আমার মতো হবি না। তুই এমন হবি, সবাই যেন তোর বাবা হিসেবে আমাকে ভালো বলে। মৃত্যুশয্যায় বলা বাবার কথা রেখেছে পুত্র নীলু মিয়া। সে এখন এলাকার টপ টেরর ‘নীলু ডাকাত’। তার অত্যাচারে চরম আতঙ্কে থাকে এলাকাবাসী। তাদের মুখে একটাই কথা-নীলু ডাকাতের চেয়ে ওর বাপই (চোর তোতা মিয়া) ভালো ছিল। তাই সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা- কেমন চলবে বাপ-বেটার পাকিস্তান?

লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

Email : [email protected]

সর্বশেষ খবর