মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ আমল ও ফজিলত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ আমল ও ফজিলত

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ দোয়া পাঠ করতেন। বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের নামাজ-পরবর্তীতে অনেকগুলো ফজিলতপূর্ণ দোয়া সহিহ হাদিস শরিফে বর্ণিত রয়েছে। এখানে কয়েকটি দোয়া, অর্থ ও ফজিলতসহ উল্লেখ করা হলো।

{১} জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর দোয়াটি সাতবার পাঠ করবেন, ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’ অর্থ হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করুন।

প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর কারও সঙ্গে কথাবার্তা না বলে সাতবার নিচের দোয়াটি পাঠ করবে, যদি সেই ব্যক্তির ওই দিনে বা রাতে মৃত্যু হয়, তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে (আবু দাউদ শরিফ)

‘রদিতু বিল্লাহি রব্বাও ওয়াবিল ইসলামী দীনাও ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিইয়া।’

অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে ও মোহাম্মদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে নিচের দোয়াটি পাঠ করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন। (তিরমিজি)

‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা ওয়া হুয়াস্মামিউল আলিম।’ অর্থ : আল্লাহতায়ালার নামে, যার নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।

হজরত ওসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি নিচের এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে, (আকাশ ও জমিন) কোনো কিছুই তার কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না (আবু দাউদ শরিফ)

‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহ’

অর্থ : আল্লাহতায়ালার প্রশংসা-করত পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দৈনিক একশবার নিচের তসবিহটি পাঠ করবে, তার পাপগুলো মুছে ফেলা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা রাশির সমান হয়ে থাকে। (বুখারি শরিফ)।

‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিযা নাফিসহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়ামিদা-দা কালিমা-তিহ।’ অর্থ : আমি আল্লাহর প্রশংসার সঙ্গে তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তার মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তার সন্তুষ্টির পরিমাণ, তার আরশের ওজন পরিমাণ ও তার কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।

উম্মুল মুমিনিন হজরত জুওয়াই রিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যুষে তার কাছ থেকে বের হলেন, যখন তিনি মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন, তখন আমি নামাজের জায়গায় বসা ছিলাম। এরপর তিনি চাস্তের পরে ফিরে এলেন। তখনো আমি জায়নামাজেই বসা ছিলাম। অতঃপর প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সেই অবস্থায় আছ? আমি বললাম হ্যাঁ। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর চারটি কালিমা তিনবার পাঠ করেছি, আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা আমল করেছো, তার সঙ্গে এ চারটি কালিমা ওজন করলে এর ওজনই বেশি হবে। (মুসলিম শরিফ)।

প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর ‘আউযুবিল্লাহিস সামিইল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ তিনবার পড়ে, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত একবার পড়া অতি উত্তম। যে ব্যক্তি এই আমল করবে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য ৭০ হাজার রহমতের ফেরেশতা নিযুক্ত করে  দেবেন। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠকারীর জন্য রহমতের দোয়া করবে। সেদিন সে মারা গেলে শহীদের মৃত্যু লাভ হবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করবে সেও সকাল পর্যন্ত এই মর্যাদা লাভ করবে। (তিরমিজি শরিফ)।

প্রতিদিন মাগরিব ও ফজরের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ তিলাওয়াত করা। ফজিলত, প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পরে যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করবে, সে ব্যক্তি মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জান্নাতি হবে। কেননা মৃত্যুর আগে জান্নাতে যাওয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।

সুরাতুল এখলাস তিনবার পাঠ করলে পূর্ণ এক খতম কোরআন শরিফ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। আর যে ব্যক্তি ১০ বার সুরা এখলাস পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তাকে সুন্দর সাজানো গোছানো আকর্ষণীয় একটি জান্নাতের মালিক বানিয়ে  দেবেন। সুবহানাল্লাহ।

প্রতিদিন ফজরের পর সুরা ইয়াসিন, মাগরিবের পর সুরা ওয়াকিয়া, এশার পর সুরা মূলক এবং শুক্রবার দিন সুরাতুল কাহাফ তেলাওয়াত করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। সর্বদা আল্লাহপাকের তাসবি-তাহলিল, নবীজির ওপর দরুদ শরিফ এবং নিজের গুনাহ মাফের জন্য ইস্তেগফার করতে থাকা। মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। দীনি কাজ তথা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করতে থাকা। সুখে-দুঃখে সর্বদা আলহামদুলিল্লাহ বলা। সর্বাগ্রে সালাম দেওয়া।

সর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করা। আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা। মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা। জানাজা ও কাফন দাফনে শরিক হওয়া। মিথ্যা, গিবত, সমালোচনা, চুগলখুরি, সুদ, ঘুষ, মদ্যপান ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রাখা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলো করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর