মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নেক আমলের পুরস্কার জান্নাত

মো. আমিনুল ইসলাম

নেক আমলের পুরস্কার জান্নাত

প্রত্যেক মুসলমান নিয়মিত আমলের মাধ্যমে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন। নিয়মিত আমল এবং আল্লাহকে ভয় মানুষকে পরকালে নাজাত পেতে সাহায্য করবে এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যে ব্যক্তিই নেক আমল করবে এমতাবস্থায় যে সে হবে একজন মোমেন, তাহলে অবশ্যই তাকে আমি দুনিয়ার বুকে পবিত্র জীবনযাপন করাব এবং আখেরাতের জীবনেও আমি তাদের কার্যক্রমের অবশ্যই উত্তম বিনিময় দান করব। (সুরা আন নাহল, আয়াত ৯৭)।

আল্লাহ নেক আমলকারীদের সম্পর্কে আরও বলেন, আর যারাই আল্লাহতায়ালার ওপর ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের কোনো আশঙ্কা নেই, কেননা আমি কখনো তাদের বিনিময় বিনষ্ট করি না, যারা নেক আমল করে। এদের জন্য রয়েছে এক স্থায়ী জান্নাত, তার পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত হবে, তাদের সেখানে সোনার কাঁকন দ্বারা অলংকৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমের পোশাক। উপরন্তু তারা সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে। কত সুন্দর তাদের এ বিনিময়, কত চমৎকার তাদের আশ্রয়ের স্থানটি। (সুরা আল কাহাফ, আয়াত ৩০-৩১)। সুবহানাল্লাহ।

ভালো কাজের মধ্য দিয়ে যারা নিজেকে সমর্পণ করবে এবং ইসলামের বিধিবিধান অনুযায়ী ইহকালীন জীবন অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাদের সুখ শান্তিময় বেহেশত দান করবেন। আল্লাহ বলেন, আজ প্রত্যেক মানুষকে সে পরিমাণ প্রতিফলই দেওয়া হবে যে পরিমাণ সে দুনিয়ায় অর্জন করে এসেছে, আজ কারও প্রতি কোনো রকম অবিচার করা হবে না, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা দ্রুত হিসাব গ্রহণে তৎপর। (সুরা আল মোমেন, আয়াত ১৭)।

কেয়ামতের ময়দানে কারও প্রতি আল্লাহ জুলুম করবেন না। সেদিন গুনাহ ও সওয়াবের মাধ্যমে সব জুলুমের বদলা নেওয়া হবে। সেদিন প্রত্যেককে তার কাজের হিসাব দিতে হবে। তা গোপন হোক কিংবা প্রকাশ্য। নেক কাজের জন্য পুরস্কার ও অন্যায় বা পাপ কাজের জন্য ভোগ করতে হবে শাস্তি। তবে ক্ষমা বা মুক্তি থাকবে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, যে কোনো ব্যক্তিই নেক বা ভালো কাজ করে সে নিজের উপকার বা কল্যাণের জন্য করে আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে তার ওপরই তা বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা তাঁর বান্দাদের প্রতি কখনোই জুলুম করেন না। (সুরা হা মিম সাজদা, আয়াত ৪৬)।

আল্লাহ আরও বলেন, নিশ্চয়ই যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের মেহমানদারির জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস সাজানো রয়েছে। (সুরা আল কাহাফ, আয়াত ১০৭)। এজন্য রসুল (সা.) মানবজাতিকে সব অপকর্ম ও অন্যায় থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অন্যায়, অবিচার ও প্রতিরোধের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখে, তাহলে সে যেন তার শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করে। যদি সে এতে অক্ষম হয় তবে যেন মুখ দ্বারা তা নিষেধ করে। যদি সে এতেও ব্যর্থ হয় তবে যেন সে অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করে। (মুসলিম শরিফ)। হজরত আয়েশা (রা.) রসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন আল্লাহর কাছে কোন আমল সর্বাধিক প্রিয়? তিনি উত্তর দিলেন, যে আমল সর্বদা করা হয়, চাই তা কম হোক। (বুখারি, ৬৪৬৫)। রসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দা অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য ওই আমলের সওয়াব লেখা হয়, যা সে ঘরে থেকে সুস্থ শরীরে তা করত। (বুখারি শরিফ)

আরেক হাদিসে এসেছে, বান্দা যখন কোনো নেক আমল করতে থাকে এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তার আমলনামা লেখার ফেরেশতাকে বলা হয় এই বান্দা সুস্থ অবস্থায় যে আমল করত (এখন অসুস্থ হওয়ায়) তার আমলনামায় তা লিখতে থাক। যতক্ষণ না তাকে আমি মুক্ত করে দিই অথবা তাকে আমার কাছে ডেকে আনি। (মিশকাত শরিফ, ১৫৫৯)। আল্লাহ বলেন, যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে হে নবী তুমি তাদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে এক জান্নাত যার নিচ দিয়ে ঝরনা প্রবাহিত হতে থাকবে। যখন তাদের জান্নাত থেকে কোন ফল খেতে দেওয়া হবে, তারা বলবে, এ ধরনের ফল তো ইতিপূর্বেও দেওয়া হয়েছিল। তাদের মূলত এ ধরনের জিনিসই সেখানে দেওয়া হবে। তাদের জন্য আরও সেখানে থাকবে পবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিণী এবং তারা সেখানে অনন্তকাল অবস্থান করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে বেশি বেশি নেক আমল করে জান্নাত লাভের তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর