শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্বাচনোত্তর বোঝাপড়া

মেজর আখতার (অব.)

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্বাচনোত্তর বোঝাপড়া

‘বাংলাদেশে এসে দুই দেশের অভিন্ন অগ্রাধিকার নিয়ে কথা বলাটা আনন্দের। ভবিষ্যতে কীভাবে একে অন্যকে সহায়তা করব, তা নিয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।’ গত রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে আলোচনার পর এলিন লাউবাক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সম্প্রতি সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এলিন লাউবাক। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরও বিশেষ সহকারী। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউসের অধীন এনএসসি মূলত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার পটভূমিকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করে।

নিরাপত্তার কাজে যারা নিয়োজিত থাকে তাদের লক্ষ্যই থাকে নিজেদের নিরাপত্তা বা স্বার্থ নিশ্চিত করা। তারা যখন কারও প্রশংসা করে বা স্তুতি গায় বা কারও পক্ষে কাজ করতে চায় তখন নিশ্চিত ধরে নিতে হবে ওই দেশও তাদের শত্রু বা শত্রুপক্ষের লোক। কিন্তু মূল শত্রুকে পরাস্ত না করা পর্যন্ত ক্ষুদ্র শত্রুকে নিধন করতে গেলে মূল শত্রু সুযোগ নিয়ে নেবে। তাই মূল শত্রুর সঙ্গে বোঝাপড়া শেষ না করা পর্যন্ত পার্শ্ব বা ছোট শত্রুকে ধোঁকায় রাখার জন্য বন্ধুত্বের ভান করে সময় দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

বর্তমান বিশ্ব অর্থ ও রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিরপীড়ার কারণ হলো চীন। তাই তার অন্যতম অগ্রাধিকার হলো চীনকে কোণঠাসা করে রাখা। সেই লক্ষ্যে চীনকে তারা ইন্দো-প্যাসিফিকে থাকতে দিতে চায় না। তাই তারা এটিকে নাম দিয়েছে ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল’ যা তারা চীন ছাড়া অন্য দেশগুলো নিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ বাংলাদেশ ও ভারত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী কোনো দেশ নয়। কিন্তু তারপরও শুধু চীনের আগ্রাসি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম একটি বড় দেশ। বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল বাজার, যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আরও স্ফীত হবে। যদিও সেই বাজার দখল করার কোনো স্বার্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তাদের সবচেয়ে বড় স্বার্থ হলো বাংলাদেশের সস্তা শ্রম ব্যবহার করে তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূর্ণ করা। কিন্তু এখানে বাদ সাজছে চীন। চীন তাদের সস্তা প্রযুক্তি ও শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর করে এ দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে দিচ্ছে; যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সস্তা শ্রমের উৎস সীমিত হয়ে যাচ্ছে, যা মার্কিন অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল চাহিদা হলো- বাংলাদেশের অদক্ষ ও অশিক্ষিত শ্রমশক্তি যেন উচ্চ ও আধুনিক শিক্ষার দিকে ধাবিত না হয়ে ধর্মশিক্ষায় অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে ধর্ম-কর্মে বেশি নিয়োজিত থাকে এবং বহির্বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি ও ভোগবিলাসের দিকে না গিয়ে আরব সভ্যতা ও ধর্মীয় সমাজব্যবস্থার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। এর ফলে তারা যেন আধুনিক সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির দিকে ধাবিত না হয়ে পশ্চাদ্মুখী সংস্কারের প্রতি বেশি প্রলুব্ধ হয়।

এখানে ভারতের সঙ্গে মার্কিন স্বার্থের ঐক্য রয়েছে। ভারতও চায় না, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব থাকুক। আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রতিবেশী উন্নত হয়ে উঠুক এবং আমাদের কারিগরি দক্ষতা ও মেধা বৃদ্ধি হোক তা অনেকেই চায় না। উচ্চ কারিগরি ও মেধাসম্পন্ন শ্রমের ভারতের একটি বড় বাজার হলো বাংলাদেশ। যদিও এই কারিগরি দক্ষ ও মেধা শ্রমের ব্যাপারে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডা লড়াই আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির জুজুর ভয় মূলত ভারতকে তুষ্ট রাখার জন্যই দেখানো হচ্ছে। এর সঙ্গে রাজনীতির তেমন সম্পর্ক নেই।

শুধু দৃষ্টি ঘোরানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ভারতবিরোধী জনগণকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রাখার হীনস্বার্থে এই ভিসা নাটকটি সাজিয়েছিল। সবার মাঝে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি করেছিল যে, সরকার নির্বাচন করতে পারবে না এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে শাসনব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেবে। যেমনভাবে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ১৯৯৫ সালের শেষে অশান্তি সৃষ্টি করে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে সরকারের শাসন-সক্ষমতা ধ্বংস করেছিল। একইভাবে তারা ২০০৬ সালে দেশে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে বিএনপিকে শাসনব্যবস্থা থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালেও শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের প্রত্যক্ষ ও চীনের পরোক্ষ অবস্থানের কারণে তখন তারা সফল হয়নি। কিন্তু নির্বাচন ছিল চরমভাবে বিতর্কিত। ফলে চীনের আগ্রাসি বিনিয়োগ নীতির কারণে তারা বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে নিয়ামক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। চীনের কারণে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে পারেনি। এমনকি তৎকালীন সংসদেও বিরোধী দলের ভূমিকা ছিল খুবই নগণ্য।

২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপিকে নিয়ে এসেও নির্বাচনের মাঠ থেকে লোপাট করে দেয়। দেশ ও বিদেশের সবার চোখের সামনে দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার পরও এ নিয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। এমনকি খোদ বিএনপিও এ নিয়ে তেমন জোরালো প্রতিবাদ করেনি। তার কারণ এখনো সবার অজানা।

আমেরিকানরা আগে থেকেই জানত ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে মাঠে নামানো যাবে না। বিএনপি মাঠে না এলে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তন সম্ভব হবে না। ২০০৭ সালে এরকম একটি রাজনৈতিক খেলা খেলে ভারতের চাপে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। উল্টো ১/১১-এর বিরূপ ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশে ভারত ও চীনের স্বার্থ একবিন্দুতে মিলে যায়। মেগা প্রকল্পগুলো সফলভাবে সমাপ্ত করার সরকারের দৃঢ়তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পথ-পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। তারই আলামত হলো ভিসানীতি নামক একটি বায়ুবীয় ভীতি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা আরও নিষেধাজ্ঞার ভয়ভীতি। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু বলয়ের সুশীল ও আঁতেলদের আগাম বক্তব্য, লাগামহীন ও ভুয়া গুজব ছড়ানো, জামায়াত ছাড়া বিএনপিসহ সব বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠে সরগরম হওয়ার জন্য প্রত্যক্ষভাবে অনুপ্রাণিত করা। সরকারকে নমনীয় হওয়ার ভান সৃষ্টি করার সুযোগ দেওয়া, আইএমএফের ঋণ দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে রাজনীতির বাতাস গরম করে রাখা, যাতে বিএনপি নির্বাচনে না আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি আবহ তৈরি করে, সরকার যে কোনো সময় পরিবর্তন হয়ে যাবে। সরকারকে দুর্বল করতে প্রাথমিকভাবে আমেরিকানরা যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে যখন আইএমএফ ঋণ দিয়ে সরকারকে সরাসরি সহযোগিতা করতে নেমে এলো তখন ভারত ও চীন বিগড়ে গেল। কারণ ভারত ও চীন বুঝে গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় খেলা খেলতে যাচ্ছে, যে খেলায় সরকারের কোনো পরিবর্তন হবে না; কিন্তু সরকারের অবস্থানের পরিবর্তন হবে। আইএমএফের ঋণের সুবাদে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এমন কিছু সংস্কার আনা হবে, যাতে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসবে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এলে তার দায় জনগণ ভারতের দিকে দেবে। ফলে ভারতের সঙ্গে সরকারের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হবে। যার আলামত ২২ ও ২৩ সালে ভারতকে নিয়ে অনেক মুখরোচক ও বেফাঁস কথাবার্তা সরকারের সব মহল থেকে প্রকাশ্যেই বলাবলি করা হয়েছিল। পরবর্তী উচ্চপর্যায়ের দেনদরবার করে দিল্লি, বেইজিং ও ওয়াশিংটন ঐকমত্যে পৌঁছায় যে, বিএনপিকে নির্বাচনে এনে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি না করে নির্বাচনটি একতরফাভাবেই চীনের মতো করে হয়ে যাক। কারণ চীনও দাবি করে তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন করে। তারাও জনগণের মতামত নিয়েই সরকার গঠন করে। কাজেই বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে এসে নতুন ঝামেলা না করে একতরফা নির্বাচন হয়ে যাক। সেই মোতাবেক নির্বাচনে সরকারকে নামিয়ে দেয়। কিন্তু এর ফলে নির্বাচনের রাজনীতিতে স্বতন্ত্র নতুন একটি দ্বার খুলে যায়। চীন আসলে এবং মূলত বিএনপির বন্ধু। কিন্তু তাইওয়ানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। চীনের অনুধাবন হলো ইন্দো-প্যাসিফিকের নামে আমেরিকানরা যে ভূরাজনীতির খেলা খেলছে, তাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে চীনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই চীন সব সময় চায় বিএনপি নির্বাচনের রাজনীতি করে বিরোধী দলে টিকে থাকুক, যাতে প্রয়োজনে বিএনপি চীনের কাজে লাগে। তাই তাদের একটি বিকল্প পরিকল্পনা ছিল যাতে ব্যাপকহারে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে নেমে সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। যদি সরকারবিরোধীরা ব্যাপকহারে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে তাহলে ক্ষমতার কেন্দ্রে কিছুটা ভারসাম্য আসতে পারে এবং তাতে এর থেকে চীন তার কাক্সিক্ষত সুযোগ নিতে পারে- যদি ভবিষ্যতে প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিএনপিসহ বিরোধী দল সেই খেলা বোঝার আগেই প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত চৌকশ ও দারুণ অভিজ্ঞ সরকারপ্রধান হিসেবে স্বতন্ত্রের ছক্কা মেরে নিরঙ্কুশভাবে সব ক্ষমতা তাঁর কব্জায় নিয়ে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের এখন প্রথম পাঁচজনের একজন রাজনীতিবিদ, চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী সরকারপ্রধান এবং প্রথমসারির একজন ঝানু ও বিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড- শেখ হাসিনা, মানে বাংলাদেশ।

২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে তিন পরাশক্তির তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত ঐকমত্য ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো নির্বাচন হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে হবে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিন পরাশক্তির বিজয় হয়েছে। তারা যা চেয়েছিল, যেভাবে চেয়েছিল তা শতভাগ পূর্ণ হয়েছে। এখন তারা যার যার মতো করে নিজেদের স্বার্থের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগের পথ প্রায় খুলে গেছে এবং তারা সেজন্য আনাগোনাও শুরু করে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা বলে মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধে নামিয়ে দিতে চাচ্ছে। যুদ্ধই বিনিয়োগের সবচেয়ে উত্তম উপায়। এর জন্য কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই বা মূল্যায়ন লাগে না। কোনো টেন্ডার-ফেন্ডারের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো দেশকে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারলে পশ্চিমাদের বিনিয়োগ তরতর করে আসতে থাকে। সাধারণত তিন রকমের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করা হয়। একটি হলো দেশরক্ষার ঝুঁকি, দ্বিতীয়টি সীমান্ত রক্ষার ঝুঁকি এবং তৃতীয়টি হলো অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা তথা সরকারের স্থিতিশীলতার ঝুঁকি মানে আইনশৃঙ্খলার ঝুঁকি। যদি কোনোভাবে কোনো একটি দেশের সীমান্তের কোনো ঝুঁকি তৈরি করা যায়, তাহলে বাকি দুটি ঝুঁকি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে যায়। আলোচ্য তিনটি ঝুঁকি তৈরি করতে পারলে দেশের ভিতরে অস্ত্রের প্রচ- চাহিদা সৃষ্টি হয়। শুরু হয় সেই অস্ত্রের চাহিদা পূরণের চিরস্থায়ী ব্যবস্থা। নতুন নতুন অস্ত্র আসবে আর ঝুঁকির নতুন নতুন এবং ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে। সেই চাহিদা পূরণ করতে না পারলে সরকারের স্থিতিশীলতার ঝুঁকি দেখা দেবে। তখন সরকার নিজেই ঝুঁকির মধ্য পড়ে যাবে। যত দেশ এই তিন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তারা কোনো দিনই সেই ঝুঁকি থেকে বের হতে পারেনি। ইতোমধ্যে আমাদের সীমান্তে ঝুঁকি তৈরি হয়ে গেছে। সেই ঝুঁকি মোকাবিলা করতে আমাদের সামর্থ্য বাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা চলে এসেছেন।

অঙ্ক খুব সরল। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে। তার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার এখন প্রচ-ভাবে দুর্বল। তাই আরাকান আর্মিকে সাহায্য করতে হবে মিয়ানমার সরকারকে পতন করাতে। যেমন বিএনপিকে প্রয়োজন সরকার পরিবর্তন করার জন্য; কিন্তু তারা পারছে না!

অন্যদিকে আরাকান আর্মি পারছে। অতএব মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ-মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ মানে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ- চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ মানে চীনের বিদায় এবং তাদের বিনিয়োগ বন্ধ। চীনের বিনিয়োগ বন্ধ মানে পশ্চিমা পুঁজির বিকাশ। চীনের বিদায় মানে চীনের দক্ষ, অভিজ্ঞ কারিগরদের বিদায়। চীনের বিদায় মানে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য- মানে বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ তথা সব কিছুর পরিবর্তন।

শুরু হয়ে গেছে বাংলার সবুজ মাটি আমাদের রক্তে রঞ্জিত করার তিন পরাশক্তির লড়াই। ভিয়েতনাম, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, ইউক্রেনের পর সংযুক্ত হবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার। তৈরি প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের যোজন যোজন দূরে ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল’। কিন্তু সেই দূরে ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল’ আমাদের স্বার্থ কী তারই বোঝাপড়ার সফর শুরু হয়ে গেছে। এখন সাধু সাবধান, না হলে আম ও ছালা- দুটোই যাবে। আশার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সচেতন। তিনি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চান। কোনো দেশের স্বার্থে নিজের দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে চান না।

                লেখক : স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দিশারি

সর্বশেষ খবর