শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জুলুমকারীদের কঠিন সাজা পেতে হবে

মুহম্মদ জিয়াউদ্দিন

জুলুমকারীদের জন্য আখেরাতে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। তারা তাদের অপকর্মের জন্য ক্ষমা পাবেন না। যারা নিজেদের জুলুমকারী হিসেবে গর্ববোধ করেন তারা প্রকৃত পক্ষে হতভাগ্য।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন : তোমরা বলতে পার সবচেয়ে নিঃস্ব কে? সাহাবিরা বললেন, আমাদের মাঝে সবচেয়ে দরিদ্র সে-ই যার কোনো অর্থ ও উপকারী বস্তু নেই। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-  আমার উম্মতের সবচেয়ে গরিব এমন ব্যক্তি যে সালাত, সিয়াম ও জাকাতের নেকি নিয়ে কেয়ামতের মাঠে উপস্থিত হবে। অন্যদিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, সম্পদ ভক্ষণ করা, অপবাদ দেওয়া ও গালাগালি করার অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হবে। তখন তার নেকি থেকে তাদের পরিশোধ করা হবে। তার নেকি শেষ হয়ে গেলে তাদের পাপ নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম, হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫১২৮)।

অত্র হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে অত্যাচারে হক নষ্ট করা হয়, তা পাপের অন্তর্ভুক্ত। এটার দায় কেয়ামাতের দিন নেকি দিয়ে পরিশোধ করতে হবে।

হজরত আবু মুসা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন : আল্লাহতায়ালা অত্যাচারীকে এক নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে যখন পাকড়াও করেন তখন আর ছাড়েন না। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন তোমার প্রতিপালকের ধরা এরূপ যে যখন তিনি অত্যাচারী জনপদকে পাকড়াও করেন, তাঁর ধরা কঠিন। (মুত্তাফাক আলাইহি, বুখারি হা/৪৩১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৯৭)।

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- জুলুম কেয়ামতের দিন বহু অন্ধকারের কারণ হবে। (মুত্তাফাক আলাইহি, মিশকাত হা/৫১২৩)।

হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ছামুদ সম্প্রদায় ধ্বংস হওয়ার এলাকা পার হচ্ছিলেন তখন বললেন- তোমরা ওইসব লোকের বাসস্থানে প্রবেশ কর না যারা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছে। তবে আল্লাহর কাছে ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ করতে পার। কারণ তোমাদের ওপর ওই বিপদ আসতে পারে যা তাদের ওপর এসেছিল। তারপর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরবারি মাথায় করে ওই এলাকা দ্রুত পার হয়ে গেলেন। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১২৫)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কেউ কারও প্রতি যদি সম্মানের ব্যাপারে বা কোনো কিছুর ব্যাপারে অত্যাচার করে থাকে তাহলে আজকেই সে যেন তা সমাধা করে নেয়, ওইদিন আসার আগে যেদিন তার কাছে কোনো অর্থ-সম্পদ থাকবে না। ওইদিন সৎ আমল থাকলে অন্যায় পরিমাণ নিয়ে নেওয়া হবে। আর সৎ আমল না থাকলে তার পাপগুলো নিয়ে অপরাধীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি, মিশকাত হা/৫১২৬)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কেয়ামতের দিন সবার হক আদায় করা হবে, এমনকি শিংবিহীন ছাগলকে শিং প্রদান করে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১২৮)।

হজরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি অত্যাচার করে অর্ধহাত জমিন দখল করেছে, নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি জমিন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৩৮)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সক্ষম ব্যক্তির জন্য টালবাহানা করা অন্যায়। তোমাদের কারও প্রাপ্য পরিশোধে ঋণী ব্যক্তি অপর সক্ষম ব্যক্তির ওপর দায়িত্ব দিলে তা অনুমোদন করা কর্তব্য। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০৭)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুলুমকারী হওয়ার গুনাহ থেকে দূরে রাখুন। আমিন।

লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর