শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন

আফতাব চৌধুরী

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন

জন্মেছিলেন ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির ছোট্ট শহর উলমে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ১৯০৩ সালে বিয়ে করেছিলেন স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা ম্যারিককে।  মিলেভা শুধু স্ত্রী নন, ছিলেন প্রকৃত অর্থেই জীবনসঙ্গিনী। কিন্তু স্বামী হিসেবে আইনস্টাইন যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাই বিবাহিত জীবনের ১৬ বছরের মাথার বিচ্ছেদ ঘটে। স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতাবাদের পর ঠিক সময়টায় আইনস্টাইন পা বাড়িয়েছেন জেনারেল রিলেটিভিটির লক্ষ্যে। আর তার নিজস্ব স্বীকৃতি অনুযায়ী হাবুডুবু খাচ্ছেন দুরূহ গণিতে। ১৯০৫ সাল আইনস্টাইনের জীবনের বিস্ময় হিসেবে চিহ্নিত। সংগত কারণেই এ বছরটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় সময়। মাত্র এক বছরের মধ্যে পাঁচ-পাঁচখানি ‘প্রবন্ধ’ লিখে পদার্থবিদ্যায় একেবারে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ এ গবেষণা প্রবন্ধগুলোর প্রতিপাদ্য ছিল রীতিমতো বৈপ্লবিক। বিশ শতকে এলো আপেক্ষিকতাবাদ ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব। ২৬ বছর বয়সী আইনস্টাইন দেশকাল সম্বন্ধে পূর্ববর্তী ধারণাগুলোকে সম্পূর্ণ উল্টা-পাল্টা করে দিলেন। বস্তু ও রশ্মি সম্পর্কেও ঘটল তাই। প্রকৃতির সমস্ত বর্ণনাই অপরিহার্য অনিশ্চয়তার কবলে। আশ্চর্যের বিষয়, একই বস্তুর একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনার কথা আইনস্টাইন তুলে ধরেন। পশ্চিমা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এর আগে সমতুল্য বিপ্লব মাত্র তিনটাই ঘটেছিল। প্রথমটি প্রাচীন গ্রিসে জ্যামিতির গোড়াপত্তন এবং প্রকৃতির রহস্য উদঘাটনে গাণিতিক যুক্তির ভূমিকা। তারপর সপ্তদশ শতাব্দীতে কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন করেন আধুনিক বিজ্ঞানের গোড়াপত্তন। ভরযুক্ত বস্তুদের আনাগোনা, কীভাবে তাদের মধ্যে পরস্পর-কার্যকরী বলের ও সেই বলজনিত ত্বরণের প্রভাব ঘটে তা বোঝা গেল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এলো আরও একটি বিপ্লব। তড়িৎ ও চুম্বক নিয়ে গবেষণার ফলে ফারাডে ও ম্যাক্সওলে জানালেন, কেবল বস্তুকণাই সব নয়, এগুলো ছাড়াও প্রকৃতিতে রয়েছে ক্ষেত্র বা ‘ফিল্ড’। যা দেশজুড়ে ব্যাপ্ত। এই ক্ষেত্রে স্বাধীন অস্তিত্ব বস্তুকণাদের অস্তিত্বের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তড়িৎ ও চুম্বকীয় ক্ষেত্রকে একান্বিত করে এলো তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র। আর আলোর স্বরূপ ধরা পড়ল তারই কল্পনাকারে। বিশ শতকে আইনস্টাইন একাই দুটি বিপ্লবের গোড়াপত্তন করেন। এজন্য ১৯২১ সালে পেয়ে যান তাঁর বহু কাক্সিক্ষত নোবেল পুরস্কার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাঁকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতির পদে মনোনয়ন করা হলেও তিনি এই পদ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন।

১৯০৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হয়। বিজ্ঞানী মহলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কোনো সুরাহা হলো না। নিতান্ত বাধ্য হয়ে টিউশনি শুরু করেন। নামডাক হওয়ার ফলে ১৯০৭ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন। জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। 

                লেখক : প্রাবন্ধিক

সর্বশেষ খবর