সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

আহলে বাইতের মর্যাদা

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

হাদিসে অকাট্যভাবে আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের প্রতি মহব্বত প্রদর্শনের গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে এবং তাদের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। বুখারি শরিফের এক রেওয়ায়েতে হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার আত্মীয়তার তুলনায় রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়তার মূল্যায়ন আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।’ মুসলিম শরিফের রেওয়ায়েতে হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, রসুলে পাক ইরশাদ করেন : ‘হে মানুষ! আমি মানুষ, অতি নিকটতম সময়ে আমার নিকট আল্লাহপাকের দূত আসবে, সে এলে তার আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। তাই আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, একটি হচ্ছে আল্লাহপাকের কিতাব; এর মধ্যে হেদায়েত এবং নূর বিদ্যমান রয়েছে। তোমরা আল্লাহর এই কিতাবকে আঁকড়ে ধরবে এবং এই কিতাব মোতাবেক আমল করবে।’

আল্লাহর কিতাবের প্রতি অনুপ্রাণিত করার পর তিনি ইরশাদ করেন : ‘আমি তোমাদেরকে আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহপাককে স্মরণ রাখতে বলছি।’ এ কথা রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার ইরশাদ করেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর হাদিসে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘তোমরা আল্লাহপাককে মহব্বত কর। কারণ, তিনি তোমাদেরকে তাঁর নেয়ামত থেকে রিজিক দান করেছেন; আর আমাকে মহব্বত কর আল্লাহপাকের মহব্বতের জন্য এবং আমার মহব্বতের জন্য আহলে বাইতকে মহব্বত কর!’ তাবরানির রেওয়ায়েতে হজরত জাবিরের সূত্রে বর্ণিত- হজরত ওমর (রা.) উম্মে কুলসুম বিনতে আলীকে বিবাহ করার পর উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ করে বলেন : তোমরা আমাকে  মোবারকবাদ জানাও; কারণ আমি রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাধিক নিকটতম হচ্ছেন আহলে বাইতের সদস্যগণ। তাই তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা এবং তাদের ভালোবাসা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহপাক তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করেছেন এবং তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করেছেন। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়টির প্রতি এভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে : ‘আল্লাহপাক তোমাদের অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে ইচ্ছা করেছেন।’ রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুসরণ এবং তাদের আদর্শকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি ইরশাদ করেন : ‘আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব এবং আমার পরিবার-পরিজন রেখে যাচ্ছি। হাউজে কাউছারে আমার সাক্ষাৎ পর্যন্ত এতদুভয় এক থাকবে। অতএব আমার পক্ষে এই দুয়ের সঙ্গে তোমাদের কী করণীয় তা চিন্তা কর’। আল্লাহপাক তাদের জন্য গণিমত এবং ‘ফাইয়ের’ মালে অংশ নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহপাক জনপদবাসীদের কাছ থেকে যা কিছু তার রসুলকে দিয়েছেন, তা আল্লাহর, তাঁর রসুলের আত্মীয়-স্বজনের, এতিমদের এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের জন্য’।

অন্যত্র আল্লাহপাক এরশাদ করেন : ‘তোমরা জেনে রাখ যুদ্ধে গণিমতের যে মাল তোমরা লাভ কর, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর রসুলের, রসুলের আত্মীয়-স্বজনের, এতিমদের, দরিদ্রদের এবং মুসাফিরদের।

আল্লাহপাক আহলে বাইতকে সদকাহ এবং জাকাতের মাল থেকে পাক-পবিত্র রেখেছেন। এটাকে তাদের বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করেছেন।’ রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘আমার পরিবার-পরিজনের জন্য জাকাতের মাল হালাল নয়’। প্রত্যেক নামাজে তাদের প্রতি সালাত-সালাম প্রদর্শনের নির্দেশ করে আল্লাহপাক তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। তিরমিজি, হাকিম এবং অন্যান্য কিতাবের রেওয়াতের সাহাবি হজরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, যখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলো : ‘আপনি বলুন! এস, আমরা আমাদের এবং তোমাদের পুত্র, আমাদের স্ত্রী এবং তোমাদের স্ত্রীদেরকে এবং আমাদের নিজ এবং তোমাদের নিজেদেরকে ডেকে জমা করি।’ এই আয়াত নাজিল হলে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী, হজরত ফাতেমা এবং হাসান ও হোসেনকে একত্র করে বললেন : ‘হে আল্লাহপাক, এরা আমার পরিবার-পরিজন’। মুসনাদে আহমাদ এবং তিরমিজির রেওয়ায়েতে হজরত উম্মে সালামাহ (রা.) বলেন : ‘আল্লাহপাক তোমাদের-আহলে বাইত থেকে অপবিত্রতা দূরীকরণ এবং সম্পূর্ণরূপে পবিত্রকরণের ইচ্ছা পোষণ করেছেন’।

যখন এই আয়াত নাজিল হয়, তখন রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদর দ্বারা হজরত আলী, ফাতেমা এবং হাসান ও হোসেনকে বেষ্টন করে ইরশাদ করেন : ‘হে আল্লাহ! এরা আমার পরিবার-পরিজন, আপনি তাদের অপবিত্রতা দূর করুন এবং তাদেরকে পবিত্র করুন’।

আহলে বাইতের সম্মান এবং এই বিরাট মর্যাদার কারণ হচ্ছে, দুজাহানের সরদার হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক। তদুপরি তাঁরা সাহাবিও। সব সাহাবি সম্মানিত। সাহাবায়ে কেরামের প্রতিও আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। আমরা সব সাহাবিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি, আমাদের অন্তরে তাদের প্রতি মর্যাদা ও শ্রদ্ধাবোধ গ্রথিত। আহলে বাইতের মূল সূত্র হলো মুহাম্মদ (সা.)। তিনি আমাদের এবং সব বনি আদমের সরদার, আল্লাহর রসুল, আল্লাহর হাবিব, তার মনোনীত ও নির্বাচিত। তিনি পছন্দনীয় সব ভদ্রতা এবং বড়ত্বের উৎস ও কেন্দ্রবিন্দু। তিনি সমগ্র পৃথিবীর বুকে সর্বাধিক সম্মানি। তিনি আল্লাহর নূর এবং সাক্ষাৎ হেদায়েত। তিনি আল্লাহর মাহবুব, সম্মানিত নবী। তিনি স্বীয় মাওলার ইবাদত করে পরিপূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তিনি একজন মানুষ, তবে সাধারণ মানুষ নন বরং আল্লাহপাক তাকে স্বীয় নৈকট্য দানে ধন্য করেছেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর